আড়াই বছর পর ঘরে ফিরেছে নুহা-নাভা

মুখর হয়ে উঠেছে বাড়ির আঙিনা
মুখর হয়ে উঠেছে বাড়ির আঙিনা  © সংগৃহীত

প্রায় আড়াই বছর পর হাসপাতাল থেকে বাড়িতে ফিরেছে কুড়িগ্রামের আলোচিত কোমর ও মেরুদণ্ডে জোড়া থাকা শিশু নুহা ও নাভা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ৮ দফা অস্ত্রপচার ও চিকিৎসার পর গত মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) বাড়িতে ফিরে আসে তারা। শিশু দুটোর চঞ্চলতায় মুখর হয়ে উঠেছে বাড়ির আঙিনা। তা দেখে দারুণ আনন্দিত এলাকাবাসীসহ আলমগীর-নাসরিন দম্পতি।

নুহা-নাভা কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার কাঁঠালবাড়ী ইউনিয়নের শিবরাম গ্রামে বাড়ি আলমগীর হোসেন রানা ও নাসরিন বেগম দম্পতির মেয়ে সন্তান। আলমগীর একজন পরিবহনশ্রমিক ছিলেন।

২০২১ সালের ২২ মার্চ কুড়িগ্রামের একটি বেসকারি ক্লিনিকে নাসরিন জোড়া লাগানো দুই মেয়ে সন্তানের জন্ম দেন। মেরুদণ্ড জোড়া লাগানো জমজ দুই মেয়ে পেয়ে আনন্দের বদলে বিষাদ ভরে যায় এই দম্পতির মন। অর্থের অভাবে উন্নত চিকিৎসার মাধ্যমে শিশু দুটিকে আলাদা করার জন্য যেতে পারছিলেন না কোনো হাসপাতাল বা চিকিৎসকের কাছে।

এ অবস্থায় ওই বছরের ৪ এপ্রিল সিভিল সার্জন অফিসের সহায়তায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করা হয় শিশু নুহা-নাভাকে। শিশুদের পৃথক করাসহ চিকিৎসার দায়িত্ব নেয় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর কাযার্লয়।

সেখানকার চিকিৎসক ও নিউরোসার্জন ডা. মোহাম্মদ হোসেনের তত্ত্বাবধানে আট দফা অস্ত্রোপচারের পর গত বছরের জানুয়ারিতে পৃথক করা হয় শিশু দুটিকে। দেশের চিকিৎসাবিজ্ঞানে যা মাইলফলক হয়ে যায়। এরপর থেকে ওই হাসপাতালে চিকিৎসা চলছিল তাদের।

অবশেষে সফল অস্ত্রোপচার ও চিকিৎসা শেষে গত সোমবার রাতে হাসপাতাল ত্যাগ করে জোড়া শিশু নুহা ও নাভাকে নিয়ে গ্রামের বাড়ি চলে আসেন তারা। তাদের এই অকল্পনীয় পৃথক চিকিৎসা নিয়ে স্বস্তি ও আনন্দে প্রতিবেশী, স্বজনসহ আলমগীর নাসরিন দম্পতির মাঝে।

শিশু নুহা ও নাবার বাবা আলমগীর হোসেন রানা বলেন, নুহা-নাভা কুড়িগ্রামে জন্মগ্রহণ করার পর থেকে কোমর ও মেরুদণ্ড জোড়া লাগানো থাকে। পরের দিন আমি রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাই। এখানকার ডাক্তার ঢাকা মেডিকেল না হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে যেতে বলে। পরে কুড়িগ্রামের সিভিল সার্জনের সহযোগিতায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরোসার্জন ডা. মোহাম্মদ হোসেন স্যারের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেন। 

তিনি বলেন, স্যার আমার বাচ্চা দুইটার জন্য অনেক কিছু করেছে। স্যার তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে যোগাযোগ করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দেন। আমরা প্রায় ৩২ মাস হাসপাতালে থাকি। বাড়ির জমি বিক্রি করে ১০ লাখ টাকা খরচ করি। আর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ব্যয় করে ৩৫ লাখ ও এক দানশীল ব্যক্তি ১৫ লাখ টাকা দেন। এখনো তাদের আরও একটি করে অপারেশন বাকি আছে। চার-পাঁচ মাস পর সেই অপারেশন করতে হবে।

এ ছাড়া তাদের পেছনে প্রতি মাসে ১৫ হাজার টাকা খরচ লাগে। মেয়েদের চিকিৎসা করতে গিয়ে তো আমারও মোটর শ্রমিকের চাকরিটা চলে গেছে। এখন অবস্থা খুব খারাপ। কীভাবে বাকি চিকিৎসাটা করাব সেই চিন্তায় বাঁচি না।

আলমগীর হোসেন আরও বলেন, সরকার পতনের পর প্রধান উপদেষ্টা, বাকি চিকিৎসার জন্য বিএনপির মহাসচিব ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমিরের কাছে আবেদন করেছি। এখনো কারও কোনো অনুদান পাইনি। অন্যের সাহায্য-সহযোগিতায় আমার মেয়ে দুইটা সুস্থ হয়েছে। নতুন জীবন পাইছে। তারা যেন বড় হয়ে মানুষের সেবায় কাজ করতে পারেন, এই প্রত্যাশা আমার।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence