কারিগরির অধীনে সাড়ে তিন লাখ প্রশিক্ষণার্থী বিপাকে

কারিগরি শিক্ষা বোর্ড
কারিগরি শিক্ষা বোর্ড  © সংগৃহীত

‘ন্যাশনাল টেকনিক্যাল ভোকেশনাল কোয়ালিফিকেশন ফ্রেমওয়ার্ক’ (এনটিভিকিউএফ) বন্ধ করায় প্রায় সাড়ে তিন লাখ প্রশিক্ষণার্থী বিপাকে পড়েছেন। প্রশিক্ষণার্থীদের উচ্চতর দক্ষতা নিশ্চিত না করেই আবার একই স্তরের সনদ নিতে জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (এনএসডিএ) অধীনে অ্যাসেসমেন্টে বসতে বাধ্য করা হচ্ছে।

এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ পেতে সম্প্রতি শিক্ষা উপদেষ্টার কাছে লিখিত আবেদন জানিয়েছে ‘বাংলাদেশ টিভিইটি গ্রুপ সমন্বয় পরিষদ’ নামে একটি সংগঠন।

সংগঠনের সমন্বয়ক মোস্তাফিজ রহমান জানান, কারিগরি শিক্ষা বোর্ড স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। এটি ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ট্রেড পর্যায়ের পাঠ্যক্রম পরিচালনা করে। পাশাপাশি কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণের শর্ট কোর্স ও পূর্ব অভিজ্ঞতার স্বীকৃতি কার্যক্রম পরিচালনা করে। ২০১২ সাল থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত কারিগরি বোর্ডের অধীনে প্রায় সাড়ে তিন লাখ প্রশিক্ষণার্থীকে ‘এনটিভিকিউএফ-সিবিটিএ’ সনদ দেওয়া হয়েছে। অথচ গত ১২ ফেব্রুয়ারি সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এনএসডিএর কার্যনির্বাহী সভায় সিদ্ধান্তে জানানো হয়, ১ জুলাই থেকে কারিগরি বোর্ডের অধীনে চলমান ‘সিবিটিএ’ কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হবে। দেশের সব টিভিইটি গ্রুপ সমন্বয় পরিষদ এ সিদ্ধান্তকে ‘অবৈধ ও অযৌক্তিক’ বলে দাবি করেছে।

আরও পড়ুন: ঢাবিতে ভর্তি: দুই ইউনিটের শূন্য আসন পূরণ হবে যেভাবে

তিনি আরও জানান, কারিগরি বোর্ড আইন, ২০১৮’ বিদ্যমান থাকতে বোর্ড পরিচালিত কার্যক্রমকে একটি সভার সিদ্ধান্ত দিয়ে বাতিল করা যায় না।

সংগঠনের সমন্বয়ক আব্দুর রশিদ বলেন, নতুন এ সিদ্ধান্তের কারণে কারিগরির অধীনে সনদধারী প্রায় সাড়ে তিন লাখ প্রশিক্ষণার্থীর উচ্চতর দক্ষতা নিশ্চিত না করেই তাদের আবার একই স্তরের সনদ পেতে এনএসডিএর অধীনে অ্যাসেসমেন্টে বসতে বাধ্য করা হচ্ছে। এতে অর্থের অপচয় ও অনিশ্চয়তা সৃষ্টি ছাড়া কোনো ইতিবাচক ফল আসবে না।

সমন্বয়ক মো. মতিউর রহমান জানান, এনএসডিএ এখনও প্রয়োজনীয় যথাযথ জনবল ও সক্ষমতা অর্জন করতে পারেনি। ফলে কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে দীর্ঘ সেশনজট সৃষ্টি হচ্ছে। নতুন ব্যাচের ট্রেনিং শুরু করা যাচ্ছে না। এতে দেশের যুবসমাজকে দক্ষ কর্মী হিসেবে গড়ে তোলার কাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে এবং বেকারত্ব বাড়ছে। দ্রুত আগের নিয়ম বহাল করার দাবি জানাচ্ছি আমরা।’

শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ প্রশিক্ষণার্থীদের স্মারকলিপি গ্রহণ করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন। উপদেষ্টা প্রশিক্ষণার্থীদের বলেছেন, ‘বিষয়টি কারিগরি ও মাদ্রাসা সচিবসহ সংশ্লিষ্ট বোর্ডের চেয়ারম্যানকে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য বলেছি।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের মাধ্যমে ‘ন্যাশনাল টেকনিক্যাল ভোকেশনাল কোয়ালিফিকেশন ফ্রেমওয়ার্ক’ (এনটিভিকিউএফ)-এর আওতায় আগের নিয়মে অ্যাসেসমেন্ট ও সনদ দেওয়ার দাবিতে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে।

আরও পড়ুন: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে ট্রান্সজেন্ডার বাদ দিয়ে হিজড়া কোটা বহালের দাবি

প্রফেশনাল কুকিং অ্যাকাডেমি (পিসিএ) নামে একটি প্রতিষ্ঠানের প্রিন্সিপাল অ্যান্ড সিইও জাহাঙ্গীর আলমের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শরীফ মো. শাহ আলম এ নোটিশ পাঠান।

নোটিশে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব, আইন ও বিচার বিভাগের সচিব, কারিগরি শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক ও কারিগরি বোর্ডের চেয়ারম্যানকে পরবর্তী ১৫ দিনের মধ্যে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করা হয়েছে। এ ছাড়া নিয়মবহির্ভূতভাবে এনটিভিকিউএফ বন্ধ রাখায় চার কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ চাওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে প্রশিক্ষণার্থীরা বলেন, বিষয়টি নিয়ে গত দুই মাস বিভিন্ন জায়গায় দাবি-দাওয়া জানিয়ে আসছি ‘বাংলাদেশ টিভিইটি গ্রুপ সমন্বয় পরিষদ’ নামে সংগঠনের মাধ্যমে।


সর্বশেষ সংবাদ