যে ১৫ খাল খনন করলেই রাজধানীর ৮০ ভাগ জলাবদ্ধতা সমাধান সম্ভব

জলাবদ্ধতার দৃশ্য
জলাবদ্ধতার দৃশ্য  © সংগৃহীত

রাজধানী ঢাকার ৯টি জলাবদ্ধতাপ্রবণ এলাকা চিহ্নিত করে সমস্যার প্রায় ৮০% সমাধানের কথা জানিয়েছে এক গবেষণা। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান রিভার অ্যান্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টার (আরডিআরসি) সম্প্রতি চিহ্নিত এলাকাগুলোকে পর্যালোচনা করে চলমান সমস্যার সমাধান দিয়েছে।

প্রতিষ্ঠানটি জানায়, দখল হয়ে যাওয়া খালগুলোর মধ্যে মাত্র ১৫টি খাল খনন করলেই অবিরাম জলাবদ্ধতা সমস্যার প্রায় ৮০ ভাগ সমাধান হতে পারে । আরডিআরসি যেসব খাল খননের জন্য সুপারিশ করেছে সেগুলো হলো- রূপনগর মেইন খাল, বাউনিয়া খাল, বাইশতেকি খাল, সাংবাদিক কলোনি খাল, কল্যাণপুর খাল, ইব্রাহিমপুর খাল, পান্থপথ বক্স কালভার্ট খাল, রায়েরবাজার খাল, জিরানী খাল, রামপুরা খালের দক্ষিণ প্রান্ত, দোলাই খাল, কদমতলী খাল ও মান্দা খাল।

গবেষণায় যে ৯টি জলাবদ্ধতার “হটস্পট” চিহ্নিত করা হয়েছে সেগুলো হলো- পল্লবী শিয়ালবাড়ি, রূপনগর ও ইস্টার্ন হাউজিং; কালশী ও মিরপুর ১১; টোলারবাগ, আহমেদনগর ও পাইকপাড়া; শেওড়াপাড়া, কাজীপাড়া ও কাফরুল; কলাবাগান, ধানমন্ডি ২৭, কাঁঠালবাগান, গ্রিনরোড ও হাতিরপুল; হাজারীবাগ, নবাবগঞ্জ, রায়েরবাজার, পশ্চিম ধানমন্ডি ও ঢাকা নিউমার্কেট; রামপুরা ও বাড্ডা; সূত্রাপুর, ওয়ারী, নবাবপুর, কাজী আলাউদ্দিন রোড, সিদ্দিক বাজার, নারিন্দা ও তাঁতীবাজার এবং জুরাইন, সিদ্ধিরগঞ্জ, জাকের মঞ্জিল, শ্যামপুর, পূর্ব জুরাইন, সাদ্দাম মার্কেট ও রায়েরবাগ।

চলতি বছরের জুলাই মাসে “ঢাকা শহরে জলাবদ্ধতা ও আমাদের দখলকৃত খাল” শীর্ষক গবেষণাটি করা হয়। এ বিষয়ে আরডিআরসির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এজাজ বলেন, ‘এক সময় ঢাকা থেকে বৃষ্টির পানি সরতে পারে এমন ৭৭টি খাল ও লেক ছিল। এখন এগুলোর বেশিরভাগই আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে দখল করা হয়েছে। খালগুলো খনন করতে পারলে নগরীর জলাবদ্ধতা সমস্যার ৮০ ভাগ সমাধান হবে’

খালগুলো পুনরুদ্ধারের জন্য মোহাম্মদ এজাজ একটি মডেল অনুসরণ করার পরামর্শ দেন। সিটি কর্পোরেশন সংশ্লিষ্ট খাল এলাকা এবং তীরগুলোর পুনরুদ্ধার ও স্থাপত্যের পরিকল্পনা করার জন্য স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সঙ্গে আলোচনা করলে তারপর উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে। যেসব এলাকায় বেশি জলাবদ্ধতা দেখা যায়, খননের জন্য চিহ্নিত খালগুলোর ওইসব এলাকার সঙ্গে যুক্ত কি-না সেটি খেয়াল রাখা হয়েছে।

১৫টি খালের মধ্যে পল্লবী শিয়ালবাড়ী, রূপনগর ও ইস্টার্ন হাউজিংয়ের জলাবদ্ধতা নিরসনে রূপনগর মেইন খাল খনন করতে হবে। বাউনিয়া খাল, বাইশতেকি খাল ও সাংবাদিক কলোনি খাল খনন করলে কালশী ও মিরপুর ১১-র জলাবদ্ধতা নিরসন হবে। অন্যদিকে টোলারবাগ, আহমেদ নগর ও পাইকপাড়ার জন্য কল্যাণপুর খাল; শেওড়াপাড়া, কাজীপাড়া ও কাফরুলের জন্য ইব্রাহিমপুর খাল ও কল্যাণপুর খাল, কলাবাগান, ধানমন্ডি ২৭, কাঁঠালবাগান, গ্রিনরোড ও হাতিরপুলের জন্য পান্থপথ বক্স কালভার্ট খাল খনন করতে হবে।

পাশাপাশি রামপুরা ও বাড্ডার জন্য রামপুরা খালের দক্ষিণ প্রান্ত; হাজারীবাগ, নবাবগঞ্জ, রায়েরবাজার, পশ্চিম ধানমন্ডি ও ঢাকা নিউমার্কেটের জন্য রায়েরবাজার খাল ও জিরানী খালের শেষ অংশ; সূত্রাপুর, ওয়ারী, নবাবপুর, কাজী আলাউদ্দিন রোড, সিদ্দিক বাজার, নারিন্দা ও তাঁতীবাজারের জন্য দোলাই খাল এবং জুরাইন, সিদ্ধিরগঞ্জ, জাকের মঞ্জিল, শ্যামপুর, পূর্ব জুরাইন, সাদ্দাম মার্কেট ও রায়েরবাগের জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য কদমতলী খাল ও মান্দা খাল খনন করতে হবে।

এক সময় জল নিষ্কাশনের জন্য ব্যবহৃত গুরুত্বপূর্ণ অনেক খাল সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দখল ও সংকীর্ণ হয়ে যাওয়ায় ঢাকাবাসী প্রতি বর্ষার মৌসুমে তীব্র জলাবদ্ধতার সমস্যায় ভোগেন। খালের অবৈধ দখল, অনুপযুক্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা এবং অপর্যাপ্ত পরিকল্পনা জলাবদ্ধতার জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী।

স্বাধীনতার পর ঢাকায় ৫৭টি খাল থাকলেও বর্তমানে এই সংখ্যা নেমে এসেছে ২৬টিতে, যার অধিকাংশর অবস্থাই বেশ নাজুক। এ কারণে সামান্য বৃষ্টিতেই তলিয়ে যায় রাজধানী। চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় নগরবাসীকে।


সর্বশেষ সংবাদ