আবু সাঈদ হত্যা মামলায় গ্রেফতার ১৬ বছরের শিক্ষার্থী মাহিমের জামিন

আবু সাঈদ হত্যা মামলায় গ্রেফতার ১৬ বছরের শিক্ষার্থী মাহিমের জামিন
আবু সাঈদ হত্যা মামলায় গ্রেফতার ১৬ বছরের শিক্ষার্থী মাহিমের জামিন  © সংগৃহীত

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদ হত্যা মামলায় রংপুর পুলিশ লাইন্স স্কুল এন্ড কলেজের ১৬ বছরের শিক্ষার্থী আলফি শাহরিয়ার মাহিমকে গ্রেপ্তারের তথ্য নিয়ে রংপুর নগরজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়ে য়ায়। তবে ১৩ দিন কারাবরণ থেকে স্থায়ী জামিন পেল মাহিম। জামিন শুনানির ধার্য ৪ আগস্ট হলেও শিশু হওয়ায় আগাম জামিন পেয়েছেন ১৬ বছরের শিক্ষার্থী আলফি শাহরিয়ার মাহিম। মাহিম রংপুর পুলিশ লাইন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী। 

বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) দুপুরে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল আদালত-১ এর বিচারক মোস্তফা কামাল এই আদেশ দেন।

আদালতের পিপি রফিক হাসনাইন জানান, নধিপত্র অনুযায়ী শিক্ষার্থী মাহিমের বয়স ১৬ বছর ১০ মাস হওয়ায় এবং অপরাধের সাথে জড়িত না থাকার তথ্য প্রমাণ পাওয়ায় তাকে জামিন দিয়েছে আদালত। সব প্রসিডিউর শেষে আজই তাকে মুক্তি দেয়া হবে।

জানা যায়, গত ১৮ জুলাই বিকেলে আলফি শাহরিয়ার মাহিমকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আটক করে। ভুক্তভোগীর বোন সানজানা আখতার ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিলে বিষয়টি নিয়ে নড়েচড়ে বসে প্রশাসন।

আলফি শাহরিয়ার মাহিমের বোন মাহিগঞ্জ মহা বিদ্যালয়ের ইংরেজি তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী সানজানা আকতার স্নেহা বুধবার (৩১ জুলাই) তার নিজ ফেসবুক আইডিতে পোস্টে জানান, আমার ছোট ভাই মো: আলফি শাহরিয়ার মাহিমকে আবু সাঈদ হত্যা মামলায় গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ তার বয়স ১৬ বছর ১০ মাস। সে রংপুর পুলিশ লাইন্স স্কুল এন্ড কলেজের একাদশ (এইচএসসি ২৫)এর ছাত্র। তার কলেজ আইডি নম্বর ১৭৬৬০। সিদ্দিক মেমোরিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের প্রাক্তন ছাত্র ছিল সে।

সানজানা জানান, আমার ভাই অত্যন্ত মেধাবী, শান্ত ভদ্র একটা ছেলে, ১৮ জুলাই সে কলেজের উদ্দেশ্যে বের হলে জানতে পারে পরীক্ষা স্থগিত। তখন বন্ধুদের সাথে মিছিলের মাঝে জরিয়ে যায় এবং পুলিশের টিয়ারসেলে বন্ধুদের থেকে আলাদা হয়ে যায়। পরবর্তীতে আমরা ওইদিন আনুমানিক ৪টায় ওর বন্ধুদের থেকে জানতে পারি তার পায়ে রাবার বুলেট লেগেছে, সেখানকার লোকাল মানুষজন কোনো হসপিটালে এডমিট করিয়েছে। রাত ১০টা পর্যন্ত সব হসপিটাল ক্লিনিক খুঁজেও যখন তাকে আমরা পাচ্ছিলাম না। তখন আমার বাবার কাছে পুলিশের একটা কল আসে। তারা আমার বাবাকে জানায়, আপনার ছেলে আমাদের হেফাজতে আছে জানাজানি করিয়েন না তাতে ছেলের ক্ষতি হবে। তাকে আগামীকাল সকালে ছেড়ে দেয়া হবে চিন্তার কিছু নেই।

সানজানা আরও জানান, কিন্তু পরের দিন ১৯ জুলাই সকালে আমরা খোঁজ নিলে পুলিশ অস্বীকার করে বলে তাদের কাছে এই নামে কেউ নেই। এরপর ওইদিন আনুমানিক বিকেল সাড়ে চার টায় টায় কোর্ট থেকে কল আসে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আমরা কোর্ট থেকে নথিপত্র নিয়ে জানলাম তাকে আবু সাইদ ভাই এর হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। সেদিন থেকে বার বার কারাগারের দরজা থেকে ফিরে এসেছি। একটা বার দেখা তো দূরের কথা তার কন্ঠও শুনতে দেয়নি কেউ।

সানজানা আরও জানান, এরপর বিষয়টি আমরা কোর্টের মাধ্যমে মোকাবেলা করার চেস্টা করি। কিন্তু মেট্রো পলিটন কোর্ট তার মামলা কিছুতেই শিশু কোর্টে দিতে চায়নি। অনেক চেষ্টা করে গত ৩০ জুলাই শিশু কোর্টে মামলাটি নেয়া হলে। পরবর্তী তারিখ ধার্য্য করেছে আগামী ৪ই আগস্ট।

সানজানা জানান, ওই দিন কোর্ট কি রায় দিবে আমার জানা নেই, তবে আমি আমার ভাইকে ফিরে চাই, বেকসুর খালাস দেওয়া হোক এটা চাই। সানজানা আরও বলেন, যে ছেলেটা লিগাল ডকুমেন্টস অনুযায়ী শিশু, তাকে তারা কোন হিসেবে এভাবে হ্যারাস করাচ্ছে? সব থেকে বড় কথা তার গায়ে কলেজ ড্রেস ছিল, আইডি ছিল, সে পুলিশদের ইনস্টিটিউটটের ছাত্র। এক্ষেত্রে কি তার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষক, সহপাঠী, আইনজীবী কারো কিছুই করার নাই? আমার ভাইকে কোন লজিকে তারা কারাগারে নিলো। দেখাও করতে পারছি না আমরা। এর বিচার চাই।


সর্বশেষ সংবাদ