১৯ রমজানকে বাংলা ভাষার আজাদী দিবস ঘোষণার দাবি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে উদযাপিত হয়েছে ‘বাংলা ভাষার আজাদী দিবস’। ১৯ রমজানকে রাষ্ট্রীয়ভাবে ‘বাংলা ভাষার আজাদী দিবস’ ঘোষণার দাবী নিয়ে আলোচনা সভা ও ইফতার মাহফিলের আয়োজন করেছে ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি নিয়ে অনুসন্ধিৎসু একদল তরুণের সংগঠন ‘শেকড় সন্ধানী’, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা।

শনিবার (৩০ মার্চ) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দোয়েল চত্বর সংলগ্ন ঐতিহাসিক শাহবাজ মসজিদ প্রাঙ্গণে এ আলোচনা সভা ও ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।

সংগঠনটির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার উদ্বেগে আলোচনা সভা ও ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষার্থী মুহম্মদ শফিউর রহমান চৌধুরী এবং অতিথি সঞ্চালক হিসেবে ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষার্থী মুহম্মদ নিজামুদ্দিন।

সংগঠনটির আহ্বায়ক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষার্থী মুহম্মদ আসাদুজ্জামান দিবসটির ঐতিহাসিক পটভূমি নিয়ে আলোচনায় বলেন, মধ্যযুগে বাংলা ছিল এ অঞ্চলে সাধারণ মানুষের মুখের ভাষা। কিন্তু ব্রাহ্মণ্যবাদী সেন শাসকরা ক্ষমতা দখলের পর সাধারণ মানুষের মুখের ভাষা কেড়ে নেয়, নিষিদ্ধ করে বাংলা ভাষাকে। সেন শাসকরা প্রচার করে, “যে বাংলা ভাষায় কথা বলবে সে নরকে যাবে। সাধারণ মানুষকে দেবতার ভাষা সংস্কৃতিতে কথা বলতে হবে।” এর মাধ্যমে সেন রাজারা বাংলা ভাষাকে পরাধীনতার শিকলে আবদ্ধ করে। কিন্তু ৬০১ হিজরি সনের ১৯ রমজান তারিখে ইখতিয়ার উদ্দিন মুহম্মদ বখতিয়ার খলজি (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) সেন শাসক লক্ষণ সেনকে পরাজিত করে বাংলাকে মুক্ত করেন।

আলোচনায় আরও বলেন, এর ফলে শুধু ‘বঙ্গ বিজয়’ হয় না, বরং সেন শাসকরা বাংলা ভাষায় কথা বলতে যে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিলো, তাও উঠে যায়। অর্থাৎ বাংলা ভাষা আযাদ বা মুক্তি লাভ করে, সাধারণ মানুষ আবারো বাংলা ভাষা ব্যবহার করার স্বাধীনতা পায়। তাই এ দিনটি বাংলা ভাষার আজাদী’ দিবস, যা সকল বাংলাভাষী মানুষের জন্য স্মরণীয় একটি দিন।

মুহম্মদ আসাদুজ্জামান আরো বলেন, ব্রিটিশ মিউজিয়ামে সংরক্ষিত একটি মধ্যযুগীয় স্বর্ণমুদ্রা থেকে ইখতিয়ার উদ্দিন মুহম্মদ বখতিয়ার খলজি (রহমতুল্লাহি আলাইহি) কর্তৃক বাংলা বিজয়ের দিন ৬০১ হিজরির ১৯ রমজান বলে জানা যায়। ঐ সময় এ অঞ্চলে মাস গণনায় হিজরি সন প্রচলিত ছিল, বাংলা বা গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার ছিল না। তাই হিজরি সন অনুসারে দিবসটি পালন অধিক যৌক্তিক।

আলোচনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী, বিশিষ্ট বাংলা ভাষা গবেষক ও গ্রন্থ প্রণেতা মুহম্মদ জিয়াউল হক বলেন, ‘বাংলা ভাষার আজাদী দিবস’ যদি না আসতো, তবে হয়ত আমরা এখন বাংলা ভাষায় কথা বলতে পারতাম না, নিজেদের বাঙালি বলে পরিচয় দিতে পারতাম না। অনেক প্রাকৃত ভাষার মত বাংলা ভাষাও হয়ত হারিয়ে যেতো।  তাই এ দিনটির গুরুত্ব অপরিসীম। দিনটির গুরুত্ব অনুধাবন করে তাই আমরা এ দিনটি পালন করছি। আমরা চাই, আমাদের মত রাষ্ট্রীয়ভাবেও এ দিনটি পালন করা হোক।  ১৯ রমজান তারিখকে জাতীয়ভাবে ‘বাংলা ভাষার আজাদী দিবস’ ঘোষণা করা হোক। 

সংগঠনটির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদস্য ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মুহম্মদ মুহিউদ্দিন রাহাত বলেন, বর্তমান নতুন প্রজন্মের মধ্যে ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও সভ্যতা নিয়ে গবেষণা ও আলোচনা নেই বললেই চলে। আমরা আমাদের সংগঠন শেকড় সন্ধানীর মাধ্যমে নতুন প্রজন্মকে বাঙালি জাতির শেকড়ে নিয়ে যেতে চাই। খুঁজে বের করতে চাই, আমাদের প্রকৃত ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও সভ্যতাকে।

মুহম্মদ মুহিউদ্দিন রাহাত বলেন, ঐতিহাসিক ১৯ রমজান দিনটি উদযাপন করব তাই আমরা কোন হল বা অডিটোরিয়ামে না করে বেছে নিয়ে নিয়েছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে অবস্থিত মুঘল স্থাপত্য ও সংস্কৃতির ঐতিহাসিক নিদর্শন হযরত হাজী খাজা শাহবাজ রাহ: জামে মসজিদ প্রাঙ্গণকে।

তিনি আরও বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে দোয়েল চত্বর সংলগ্ন এলাকায় প্রায় ৪শ বছরের পুরাতন এমন একটি ঐতিহাসিক স্থাপনা আছে তা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থীই জানেন না। আমরা চাই নতুন প্রজন্ম এসব ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলো সম্পর্কে জেনে তাদের শেকড়ের সন্ধান লাভ করুক।

আলোচনা সভা শেষে প্রায় ৪শ অতিথিকে নিয়ে ইফতার ও দোয়া অনুষ্ঠিত হয়। দোয়ায় দেশ, জাতি ও শিক্ষার্থীদের কল্যাণ ও সমৃদ্ধি কামনা করা হয়।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence