উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশ যাওয়া হলো না সিটি কলেজের শিক্ষার্থী নুসরাতের

মা-বাবা ও ছোট ভাইয়ের সঙ্গে নিহতহ শিক্ষার্থী নুসরাত
মা-বাবা ও ছোট ভাইয়ের সঙ্গে নিহতহ শিক্ষার্থী নুসরাত  © সংগৃহীত

রাত তখন ১০টা। একমাত্র মেয়ে নুসরাত জাহানের ফোন পান বাবা আবদুল কুদ্দুস। ফোন ধরার পর ভয়ার্ত কণ্ঠে মেয়েটা চিৎকার করে বলে ওঠে, ‘আব্বু, আগুন! আমাদের বাঁচান…।’ রাজধানীর বেইলি রোডে বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) বহুতল ভবনে লাগা আগুন থেকে বাঁচতে বাবার কাছে এমন আকুতি জানিয়ে সাহায্য চেয়েছিল ঢাকা সিটি কলেজের উচ্চমাধ্যমিকের শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান। পরে মেয়েটার মুঠোফোনে শতবার ফোন দেন বাবা আবদুল কুদ্দুস। তবে ফোন আর কেউ ধরেনি।

নুসরাতের ফোন পেয়ে দ্রুতসময়েই বাবা আবদুল কুদ্দুস চলে যান বেইলি রোডের ‘কাচ্চি ভাই’ রেস্টুরেন্টে। ঘটনাস্থলে গিয়ে ‘নুসরাত, নুসরাত’ বলে চিৎকার দিতে থাকেন বাবা। তাঁর চিৎকার বেইলি রোডের বাতাসেই শুধু ভেসে বেড়ায়। দিবাগত রাত ১২টার পর বাবা জানতে পারেন, নুসরাতের মরদেহ আছে ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে।

এ খবরে বেইলি রোড থেকে বাবা ছুটে যান ঢাকা মেডিকেলে। মর্গের ভেতর মেয়ের নিথর মরদেহ দেখে চিৎকার করে বলে ওঠেন, ‘মাগো। তুমি কোথায় চলে গেলে। বাঁচার জন্য তুমি আমার কাছে সাহায্য চেয়েছিলে। আমি তোমাকে বাঁচাতে পারিনি…মাগো…।’

আরও পড়ুন: বেইলি রোডে অগ্নিকাণ্ড: নিহতদের মধ্যে ২৭ জনের পরিচয় শনাক্ত

কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্টে শুধু একা নুসরাতই নয়, তার দুই খালাতো বোন আলেশা (১৪) ও রিয়া খাতুনও (২১) মারা গেছেন। তাদের মধ্যে আলেশা রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ত। আর রিয়া পড়তেন মালয়েশিয়ার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে। সম্প্রতি তিনি দেশে এসেছিলেন। খুব শিগগির তাঁর মালয়েশিয়া যাওয়ার কথা ছিল।

নুসরাতের বাবা আবদুল কুদ্দুসের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, নুসরাত দুই খালাতো বোন আলেশা ও রিয়ার সঙ্গে বেইলি রোডে এসেছিল একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে। এরপর নুসরাত দুই খালাতো বোনসহ বান্ধবীদের নিয়ে যায় কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্টে। হঠাৎ ভবনের নিচতলায় আগুন লাগার বিষয় টের পেয়ে নুসরাত বাবার ফোনে কল করে।

আবদুল কুদ্দুস বলেন, ‘আমার মেয়ের বাঁচাও, বাঁচাও চিৎকার শুনে প্রথমে ভেবেছিলাম, মেয়ে বোধ হয় ছিনতাইকারীর খপ্পরে পড়েছে। কিন্তু পরমুহূর্তে মেয়ে আমার বলেছিল, আব্বু আগুন…! আর কোনো শব্দ আমি মেয়ের কাছ থেকে পাইনি।’

আরও পড়ুন: চাকরির তিন বছর পূর্তিতে ট্রিট, বোনসহ পুড়ে মারা গেলেন স্টামফোর্ডের সাবেক ছাত্রী দোলা

গতকাল দিবাগত রাত দেড়টা থেকে আজ শুক্রবার সকাল ছয়টা পর্যন্ত ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গের পাশের মেঝেতে আবদুল কুদ্দুস চুপচাপ বসে ছিলেন। কিছুক্ষণ পরপর ‘বাঁচাও…বাঁচাও…’ চিৎকার করে কেঁদে উঠছিলেন। আর মেয়ের মুঠোফোনে কল দিতে থাকেন। বলছিলেন, ‘মাগোরে, মোবাইল ফোনটা একবার ধরো…।’

আবদুল কুদ্দুস জানালেন, উচ্চমাধ্যমিকের লেখাপড়া শেষ করে উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে যাওয়ার স্বপ্ন ছিল মেয়ে নুসরাতের। মেয়ের এমন অপমৃত্যুতে ক্ষুব্ধ এই বাবা বললেন, আর কত মা–বাবার বুক খালি হলে টনক নড়বে কর্তৃপক্ষের। পুরো ঢাকা শহরে শত শত আবাসিক ভবনে রেস্টুরেন্ট। নেই আগুন নেভানোর কোনো সরঞ্জাম।

আবদুল কুদ্দুস আরও বলেন, ‘আমার মেয়ে চলে গেছে। কর্তৃপক্ষের অবহেলায় যেন একজন বাবা-মায়ের বুকও খালি না হয়। এই ঢাকা শহরে আমরা দেখলাম নিমতলী ট্রাজেডিতে মানুষের নৃশংস মৃত্যু। এরপর চুড়িহাট্টার ভয়াবহ আগুন। প্রায়ই আগুনে পুড়ে নগরীর মানুষ মারা যাচ্ছে। কর্তৃপক্ষের চরম অবহেলায় শহরটা যেন অগ্নিকুণ্ড হয়ে উঠছে।’

আরও পড়ুন: বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির টাকা জোগাড় করতে এসেছিলেন, লাশ হয়ে ফিরলেন নাঈম

এদিকে সকাল ৬টার দিকে মর্গ থেকে একে একে নিহত ব্যক্তিদের মরদেহ বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছিল স্বজনদের। ট্রলিতে করে যখন মরদেহ মর্গ থেকে বের করে আনা হচ্ছিল, তখন আবদুল কুদ্দুস বলে উঠছিলেন, ‘এমন ভয়ংকর রাত যেন কারও জীবনে না আসে। মুহূর্তের মধ্যে আমাদের জীবনটা নরক হয়ে গেল…।’

বেইলি রোডে বহুতল ভবনের ওই অগ্নিকাণ্ডে নিহত ব্যক্তির সংখ্যা বেড়ে ৪৬–এ পৌঁছেছে। এছাড়াও এ ঘটনায় আহত ২২–জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। ফলে নিহতের এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence