সাইবার বিশেষজ্ঞ পরিচয়ে প্রশ্ন বিক্রি করতেন ৫ম শ্রেণি পাস আসিফ

নিজেকে পরিচয় দিতেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাইবার সিকিউরিটি ইনচার্জ। সাইবার টিনস ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতার পরিচয় ব্যবহার করে প্রধানমন্ত্রীর ও সাবেক শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে ছবি পোস্ট করে সাধারণ মানুষের বিশ্বাস অর্জন করেন। আর এভাবে ভুয়া প্রশ্নপত্র বিক্রি করে অর্থ আত্মসাৎ করতেন পঞ্চম শ্রেণি পাস আসিফ তালুকদার।

সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আন্ডারগ্রাজুয়েট ভর্তি পরীক্ষায় ‘টাকার বিনিময়ে প্রশ্ন পাওয়া যাবে’ তথ্য ছড়িয়ে পড়লে শাহবাগ থানায় মামলা দায়ের করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের করা সেই মামলায় তদন্ত করতে গিয়ে আসিফ তালুকদার নামের এই ব্যক্তিসহ আন নাফিউল ওরফে নাফিজ ইকবাল নামে অন্য এক প্রতারককে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

মো. আসিফ তালুকদার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাইবার সিকিউরিটি ইনচার্জ পরিচয় দিয়ে শিশু বিশেষজ্ঞ ও সাইবার সাইবার টিনস ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা মো. সাদাত রহমানের (২১) নামে ফেক আইডি ব্যবহার করে প্রতারণা প্রশ্নপত্র বিক্রির করতো।

রোববার (২৫ ফেব্রুয়ারি) নিজ কার্যালয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ এসব তথ্য জানান।

আরও পড়ুন: ঢাবি ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের গুজব, সতর্ক করল প্রশাসন

হারুন-অর-রশীদ বলেন, সাদাত রহমান নামে তরুণ শিশু সাইবার অপরাধ নিয়ে কাজ করেন। তিনি আইসিটি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গেও কাজ করেন। আন্তর্জাতিকভাবে তিনি বিভিন্ন পুরস্কারও পেয়েছেন। তার ফেসবুক আইডির ন্যায় ফেক আইডি খুলে প্রশ্নপত্র ফাঁস থেকে শুরু করে নানা অপরাধ কর্মকাণ্ড চলছিল।

ওই ফেক আইডির ব্যবহারকারী অপরাধী নিজেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাইবার সিকিউরিটি ইনচার্জ হিসেবেও পরিচয় দিয়ে আসছিলেন। আইসিটি মন্ত্রণালয় থেকে করা অভিযোগ ও ভুক্তভোগী সাদাত রহমানের মামলার প্রেক্ষিতে প্রতারণায় জড়িত আসিফ তালুকদারকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

গ্রেফতার আসিফ তালুকদার সম্পর্কে ডিবি প্রধান হারুন বলেন, আসিফ তালুকদার পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করার সুযোগ পেলেও প্রতারণায় পিছিয়ে নেই। ফেক ফেসবুক আইডি ব্যবহার করে প্রতারণা ও প্রশ্ন বিক্রির অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। তিনি ছদ্মবেশ ধারণ করে অন্যের ছবি ও পরিচয় ব্যবহার করে ফেক ফেসবুক আইডি তৈরি করেন। ফেক ফেসবুক আইডিতে সাইবার টিনস ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতার পরিচয় ব্যবহার করে নিয়মিত ছবি পোস্ট করতেন এবং ভুক্তভোগীর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর ও সাবেক শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে ছবি পোস্ট করে সাধারণ মানুষের বিশ্বাস অর্জন করেন। তিনি নিজেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাইবার সিকিউরিটি ইনচার্জ পরিচয় দিতেন। ফেসবুক আইডিতে এসএসসি পরীক্ষার (গত সালের) প্রশ্ন পোস্ট করেন এবং ফেক ফেসবুক আইডিতে দ্রুত যোগাযোগ করতে বলেন। এরপর তার পোস্ট দেখে যারা যোগাযোগ করতেন তারাই প্রতারিত হতেন।

এ ব্যাপারে সাইবার টিনস ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সাদাত বলেন, কাজের সুবাদে প্রধানমন্ত্রী, সাবেক শিক্ষামন্ত্রীসহ বিভিন্ন পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সঙ্গে তোলা ছবি আমার ফেসবুক থেকে সংগ্রহ করে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের দেখিয়ে বলা হয়েছে, আমি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাইবার সিকিউরিটি অফিসার এবং প্রশ্ন ফাঁসের কথা বলে বিভ্রান্ত করে বিকাশ নম্বর ও নগদ নাম্বারে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে। বাধ্য হয়ে এ ব্যাপারে একটি মামলা দায়ের করি।

তিনি আরও বলেন, অবাক হলাম যে, আমি নিজে সাইবার সচেতনতায় পুলিশ প্রশাসন, মন্ত্রণালয়, স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করছি। সেখানে আমি নিজেই ভুক্তভোগী। আমার নামেই প্রতারণা করা হচ্ছে। যারা ইন্টারনেট ব্যবহার করেন, তাদের সচেতন হতে হবে। হুটহাট বিশ্বাস করা যাবে না। লোভে পড়ে কখনো অনলাইনে কাউকে টাকা দেওয়া যাবে না। লেনদেনে সতর্ক থাকতে হবে।

প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় অভিভাবকদের পরামর্শ দিয়ে হারুন-অর-রশীদ বলেন, যেকোনো পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করা খুবই দুঃসাধ্য একটি ব্যাপার। সুতরাং ফাঁসকৃত প্রশ্ন ক্রয়-বিক্রয় থেকে বিরত থাকুন এবং এ সংক্রান্ত আর্থিক লেনদেন থেকে সম্পূর্ণভাবে বিরত থাকুন। অবৈধ পন্থা অবলম্বন করে যেকোনো পরীক্ষায় অংশগ্রহণের মনোভাব থেকে সবাইকে বের হয়ে আসতে হবে। অভিভাবকদের এই বিষয়ে সচেতন হতে হবে। এই ধরনের অবৈধ চক্রের সন্ধান পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশকে অবগত করা হলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ সহজ হবে।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence