কাগজের আগুন দামে বই প্রকাশকদের মাথায় হাত

কাগজ
কাগজ  © সংগৃহীত

গেল পাঁচ মাসে প্রতি টন কাগজের পাইকারি দামে ৩৫ থেকে ৩৭ হাজার টাকা বেড়েছে। এতে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের শিক্ষার অন্যতম উপকরণ খাতা কিনতে হচ্ছে অস্বাভাবিক দরে। শিক্ষার্থী-অভিভাবক ছাড়াও এই কাগজেই সাধারণত ছাপা হয় বিভিন্ন প্রকাশনীর বই। হোয়াইট প্রিন্ট কাগজের লাগামহীন দামে মাথায় হাত পড়েছে প্রকাশনা সংস্থাগুলোর।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, হোয়াইট প্রিন্ট কাগজের দাম টনপ্রতি ছিল ১ লাখ ৩৫ হাজার। সপ্তাহের ব্যবধানে ২৫ হাজার টাকা বেড়ে তা দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকায়। প্রতি টন হোয়াইট নিউজপ্রিন্ট কাগজের দাম বেড়েছে ১৫ হাজার টাকা। এ কাগজের দাম ২০ হাজার থেকে বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে প্রতি টন ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকায়।

বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের কর্মকর্তা এবং লেখক গাজী মিজানুর রহমান বলেন, ভেবেছিলাম ২০২৩ সালের বইমেলায় আমার লেখা প্রথম মোটিভেশনাল বই "তুমিও পারবে স্বপ্নকে ছুঁতে" বইটি প্রকাশ করা যায় কিনা, তা নিয়ে চিন্তাভাবনা করবো। কিন্তু কাগজের মূল্য যেভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং পাচ্ছে, সামনের বইমেলায় আর সম্ভব হচ্ছে না বলেই দৃশ্যমান হচ্ছে।

শান্ত নীল নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, ৪৫০ টাকার রিম এখন ৬০০ টাকা। আওয়ামী-বিএনপির অসুস্থ রাজনীতি চলতেই থাকবে।  আর আমরা আমাদের মতোই থাকবো। ব্রিটিশরা হয়তো এখন এদেশে নেই। কিন্তু তাদের কাছ থেকে শিখে রাখা ধনিক গোষ্টি এদেশে ঠিকই আছে। আমাদের মতো নিম্মবিত্তরা আজীবন নিম্মবিত্ত থাকবে। যারাই শাসন করবে তারাই শোষন করবে এ যেন অলিখিত নিয়তি।

আরও পড়ুন: কচুরিপানা থেকে কাগজ তৈরি, সম্ভাবনার নতুন দ্বার উন্মোচন

করোনা পরিস্থিতি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে দেশে কাগজ উৎপাদন কম হওয়া, ভার্জিন পাল্পের সংকট ও কাগজের আকাশছোঁয়া দরের কারণে আসছে ২০২৩ শিক্ষাবর্ষের প্রায় ৩৫ কোটি পাঠ্যবই ছাপার কাজও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে।

রাসেল আহমদ নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, দিন দিন পড়া লেখা করাটা কঠিন থেকে কঠিনতর হচ্ছে, খাত-কলম, বই-পত্র ইত্যাদি যাবতীয় জিনিসের মূল্য  হুড়হুড় করে বেডেই চলেছে,আমরা মধ্যবিত্ত,নিম্নবিত্ত শ্রেণির শিক্ষার্থীর জন্য এই মুহূর্তটি যেন অভিশাপ স্বরূপ।

আন্দরকিল্লার কাগজ ব্যবসায়ী মেসার্স আহমেদিয়া ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মো. ইমতিয়াজ বলেন, এক বছর আগে দেশের প্রথম স্তরের পেপার মিলে প্রতি টন মুদ্রণ কাগজের ক্রয়মূল্য ছিল ৭৭ থেকে ৮০ হাজার টাকা। কয়েক দফায় দাম বেড়ে বর্তমানে কাগজের দাম হয়েছে এক লাখ ৩১ হাজার টাকা। আর দুই মাস আগে সাধারণ মানের সাদা এক রিম মুদ্রণ কাগজের দাম ছিল এক হাজার ৪০০ টাকা। এখন তা বেড়ে দুই হাজার ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

মুদ্রণশিল্প সমিতির সাধারণ সম্পাদক জহুরুল ইসলাম বলেন, বই ছাপাতে গিয়ে লোডশেডিংয়ের যন্ত্রণা তো আছেই। এখন 'গোদের ওপর বিষফোড়া' কাগজের দর। দেশে এখন যে পরিমাণ কাগজ আছে তাতে সর্বোচ্চ ৩০-৪০ শতাংশ পাঠ্যবই ছাপানো সম্ভব হবে। পাঠ্যবইয়ের কাগজ উৎপাদন করে তিনটি পেপার মিল। তাদের কাছে সর্বোচ্চ ৪০ হাজার টন কাগজ উৎপাদনের পাল্প আছে। ৩৫ কোটি বই ছাপাতে লাগবে ১ লাখ টনের বেশি কাগজ। এখন কাগজ না থাকলে কী করে বই ছাপা হবে?

জহুরুল ইসলাম বলেন, কয়েক দিন আগে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি মিল মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। কাগজ দেওয়ার অনুরোধ করেছেন। বাজারে এখন পর্যন্ত কাগজের দাম কমেনি। তাই এই সমস্যা সমাধানের একমাত্র উপায় হচ্ছে, জাতীয় স্বার্থে বিদেশ থেকে কাগজ বা ভার্জিন পাল্প শুল্ক্কমুক্ত আমদানির অনুমতি দেওয়া।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence