পদ্মা সেতু স্বপ্ন নাকি দুঃস্বপ্ন?

পদ্মা সেতু
পদ্মা সেতু  © ফাইল ছবি

শীতের দিন। বাড়ি (খুলনা) থেকে ঢাকায় ফিরছি। রাত ১০টা। গাড়ি মাওয়া ঘাট থেকে ১৩ কিলোমিটার দূরে আটকে গেছে। এই ১৩ কিলোমিটারের পুরোটা দীর্ঘ জটে আটকে আছে গাড়ির সারি। ঘাট বন্ধ। গাড়ি পার হওয়া সম্ভব নয়। কেনো বন্ধ? কুয়াশার কারণে ফেরি চলাচল সম্ভব নয়। দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাই পরের দিন রোদ না উঠা পর্যন্ত গাড়ির চাকা ঘুরবে না।

পরের দিন সকাল হলো। কিন্তু কুয়াশার ঘনত্ব আরো বাড়লো। সকাল পেরিয়ে দুপুর গড়িয়ে যায়। তবুও সূর্যের দেখা মেলে না। অবশেষে দুপুর ১২টার দিকে তীব্র কুয়াশা ভেদ করে সূর্য মাঝে মাঝে আকাশে উকি দেয়, আবার হারিয়ে যায় মেঘের মাঝে। সূর্য-মেঘের এ লুকোচুরির মধ্যেই ফেরি ছেড়েছে।

গাড়ি এক চাকা দু’চাকা করে সামনে অগ্রসর হচ্ছে। সামনের দীর্ঘ গাড়ির বহর; ফেরি করে পার হতে দীর্ঘ সময় লাগবে। অবশেষে রাত ৮টার সময় আমাদের গাড়ি ফেরি পেলো। 

গাড়ি ঘাটে আটকে যাওয়ায় ১০/১৫ কিলোমিটার বড় ব্যাগ ঘাড়ে করে হেটে অসংখ্য বার ঘাটে পৌঁছেছি। ব্যাগের ভারে কাধ-পিঠে রক্ত জমে কালশিরা পড়ে গেছে। বাড়িতে গেলে মা দিনের পর দিন তেল মালিশ করে দিয়েছেন। সেই রক্তের দাগ শুকাতে মাসও পার হয়ে গেছে।

আরও পড়ুন: পদ্মা সেতুর খরচ উঠবে কত বছরে
 
একবার লঞ্চে উঠার পর মাঝ নদীতে ঝড় উঠলো। ঝড়ের তীব্রতা এতই বেশি ছিলো যে সবার জোরে জোরে তওবা পড়া এবং আল্লাহ ধ্বনীতে চারদিকের আর্তনাদে মনে হলো আর এ পৃথিবীর মুখ দেখা হবে না। বড় বড় ঢেউ লঞ্চের দেয়ালে আছড়ে পড়তে লাগলো। লঞ্চ একবার এদিকে ৬০ ডিগ্রি হেলে যায়তো অন্য পাশে ৮৫ ডিগ্রি। আর ৫ ডিগ্রি গেলেই ইন্নালিল্লাহ...।

লঞ্চের পাটাতনে পানি উঠে গেলো। আমরা সবাই মিলে যার কাছে যা ছিলো তাই দিয়ে সে পানি বাইরে বের করার চেষ্টা শুরু করলাম। আবেগী মানুষ দৌড়ে লঞ্চের উপর তলায় উঠে প্রাণ বাঁচাতে চায়। কিন্তু উপর তলা ভারি হয়ে গেলে লঞ্চ আরো বেশি হেলে যাবে। তাই লঞ্চ কর্মীরা যাত্রীদেরকে নিচে রাখতে এক পর্যায়ে খারাপ ব্যবহার করতে বাধ্য হয়।

একবার ৫ তলার বিশাল এক ফেরিতে উন্মত্ত পদ্মা পার হচ্ছি। মাঝ নদীতে এমন ঝড় উঠলো যে দানব তুল্য ফেরিকেও আছড়ে ফেলতে চায়! এক পর্যায়ে ফেরিকে এক বড় চরে নিয়ে আছড়ে ফেললো উন্মাদ পদ্মা।

২০০৯ সাল থেকে পদ্মার এমন উন্মাদনা, নৃসংশতা, বর্বরতা দেখে আসছি। আমাদের পূর্ব পুরুষদের কতজন যে এখানে সলিল সমাধি বরণ করেছেন তার হিসেব নেই।

এমন গল্প এক দিনের নয়। আমরা যারা পদ্মার ওপার থেকে ঢাকায় থাকি এগুলো আমাদের প্রতিবার বাড়ি ফেরার বা বাড়ি থেকে ঢাকায় ফেরার নিয়মিত চিত্র। ছোট্ট শিশুদের নিয়ে এ পথে মায়েদের যাত্রাকে ঠিক কিসের সঙ্গে তুলনা করা যায় তা আমার জানা নেই। বিশেষ করে দুই ঈদে বাড়ি ফেরা আমাদের জন্য নিদারুন যন্ত্রণার।

অনেকেই পদ্মা সেতুকে শ্বেত হস্তির গঙ্গে তুলনা করছেন। ১০ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পে ৪০ হাজার কোটি টাকা খরচের সমালোচনা করছেন। দুর্নীতির কথা বলছেন। এ অভিযোগগুলো আপনাদের মতো আমারও। তবে সব অভিযোগ এবং আবদারের পরেও একটি পদ্মা সেতু উত্তাল পদ্মার সাথে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করে ক্লান্ত, পরিশ্রান্ত, হাফিয়ে যাওয়া এই আমাদের কাছে সত্যিই অমৃত। শুভ কামনা স্বপ্নের পদ্মা সেতু। শুভ কামনা।

লেখক: সাবেক শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence