সমাধান করতে না পারলে গুচ্ছ পরীক্ষা বাতিল করতে হবে

২০টি বিশ্ববিদ্যালয় (সাধারণ ও বিজ্ঞান প্রযুক্তি) মিলে গুচ্ছ পদ্ধতিতে প্রথমবারের মত ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন করা হয়েছে
২০টি বিশ্ববিদ্যালয় (সাধারণ ও বিজ্ঞান প্রযুক্তি) মিলে গুচ্ছ পদ্ধতিতে প্রথমবারের মত ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন করা হয়েছে  © ফাইল ছবি

এবারে ২০টি বিশ্ববিদ্যালয় (সাধারণ ও বিজ্ঞান প্রযুক্তি) মিলে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন করা হয়েছে। গুচ্ছ পদ্ধতির মূল উদ্দেশ্য ছিলো- শিক্ষার্থীদের আর্থিক কষ্ট লাঘব করা, সময় সাশ্রয় করা ও হয়রানি দূর করা। যার কোনোটি বাস্তবে দেখাতে পারেনি। উল্টো একের পর এক শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে তারা।

গুচ্ছের অনিয়মগুলো তুলে ধরলাম-

এতে বিভাগ পরিবর্তন করার জন্য কোন ইউনিট রাখা হয়নি। যেখানে ১৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ে গতবার বিভাগ পরিবর্তন করার জন্য আলাদা পরীক্ষা শুধুমাত্র বাংলা, ইংরেজি ও সাধারণ জ্ঞানের ভিত্তিতে পরীক্ষা হতো। যেটা তারা এ বছর রাখেনি। যার ফলে ১ লাখ শিক্ষার্থী গুচ্ছতে আবেদনের সুযোগ পায়নি। এমনকি সার্কুলারের কোথাও বিভাগ পরিবর্তন করার কথা উল্লেখ নেই। যদিও তারা বলে আসছে বিভাগ পরিবর্তনের সুযোগ আছে। কিন্তু যেটা ডাহা মিথ্যা কথা।

এসএসসি ১৬ এবং এইচএসসি ১৯-২০ শিক্ষার্থীদের প্রথমে বলেছে গুচ্ছতে সুযোগ দেবে। কিন্তু ১ মাস পর সার্কুলার পরিবর্তন করে তাদেরকে মাইনাস করে দিয়েছে। যদি গুচ্ছ না হত তাহলে তারা ৭টি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিতে পারতো। সিলেকশনের মাধ্যমে লাখ লাখ মেধাবী শিক্ষার্থীকে ভর্তি পরীক্ষা দিতে সুযোগ দেয়নি।

অনেক শিক্ষার্থীর ভর্তি পরীক্ষার কেন্দ্র নিজ এলাকার কাছাকাছি না রেখে দূরবর্তী শহরে দেওয়া হয়েছে। ফলে শিক্ষার্থীদের অর্থ ও সময় দিগুণ খরচ হয়েছে। যেমন নোয়াখালীর শিক্ষার্থীকে নোয়াখালী বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রে না দিয়ে রংপুরের বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্র দেওয়া হয়েছে।

মোহাম্মদ রাকিব

ভর্তি আবেদন ফি প্রথমে ছিলো ৬০০ টাকা। পরে সেটা বৃদ্ধি করে ১ হাজার ২শ টাকা করা হয়েছে। গুচ্ছ কর্তৃপক্ষ বলেছিলো একবারই টাকা দিতে হবে। পরবর্তীতে স্ব-স্ব বিশ্ববিদ্যালয় সার্কুলার দিয়ে শিক্ষার্থীদের ভর্তি করাবে। এদিকে আগামী বছর থেকে সেকেন্ড টাইম ভর্তি পরীক্ষা দিতে দেবে না গুচ্ছ কমিটি। এর ফলে এ বছর বাদ যাওয়া লাখ লাখ মেধাবী শিক্ষার্থীর বিশ্ববিদ্যালয় পড়ার স্বপ্ন অধরাই থেকে যাচ্ছে।

১ হাজার ২শ টাকা দিয়ে প্রাথমিক পরীক্ষা দেওয়ার পরও এখন প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় ২০টি আলাদা করে সার্কুলার দিচ্ছে এবং আবারও ৬৫০ টাকা নিচ্ছে। তাও প্রতিটি সাবজেক্টের আবেদনের জন্য ৬৫০ করে। তাহলে একটি শিক্ষার্থী যদি ২০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০টি সাবজেক্টের জন্য আবেদন করে মোট কত টাকা হলো মোট ১৩ হাজার। এভাবে কোটি কোটি টাকা আদায় করার পায়তারা করছে ইউজিসি ও গুচ্ছ কমিটি।

এছাড়াও ‘বি’ ইউনিটের রেজাল্টের গড়মিলের অভিযোগ রয়েছে। কিছু শিক্ষার্থী যে সাবজেক্টে উত্তর করেনি তাকে সেটাতে মার্কস দেওয়া হয়েছে আর যেটা ভালো পরীক্ষা দিয়েছে সেটাতে খালি দেখাচ্ছে। আরও অনেক অভিযোগ রয়েছে গুচ্ছ কমিটির বিরুদ্ধে।

এখন প্রশ্ন হলো গুচ্ছ কমিটি কতটা শিক্ষার্থীবান্ধব হলো তা আমাদের বোধগম্য নয়। আমার মতে এখন দুইটা পথ খোলা রয়েছে। একটা হচ্ছে যে অভিযোগ এবং সমস্যাগুলো রয়েছে তা সমাধান করতে হবে এবং পুনরায় গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন করতে হবে। এটা যদি সম্ভব না হয় তাহলে দ্বিতীয়টি হলো গুচ্ছ পদ্ধতি বাতিল করতে হবে।

আমরা শিক্ষার্থীরা গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর থেকে গুচ্ছতে বিভাগ পরিবর্তন ইউনিট রাখাসহ নানা অনিয়ম নিয়ে আন্দোলন করে আসছি এবং একাধিকবার ইউজিসি ও গুচ্ছ কমিটির সাথে বসেও সমস্যা সমাধান করতে পারিনি। কিন্তু তারা বারবার আমাদের দাবি মেনে নেওয়ার মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে আসছিল।

আন্দোলন সংগ্রামের পাশাপাশি গুচ্ছে বিভাগ পরিবর্তন ইউনিট রাখার জন্য হাইকোর্টে রিট করলে মহামান্য হাইকোর্ট ‘কেন গুচ্ছে বিভাগ পরিবর্তন ইউনিট রাখা হবে না’ এই মর্মে রুল জারি করে। সর্বশেষ চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসার জন্য হাইকোর্টে ফাইনাল হেয়ারিং বাকি রয়েছে। আর্থিক সমস্যার কারণে শুনানি বিলম্ব হচ্ছে। খুব দ্রুত শুনানি হবে এবং আশাবাদী বিভাগ পরিবর্তন ইউনিট হাইকোর্ট দিবে।

লেখক: শিক্ষার্থী, রসায়ন বিভাগ, ঢাকা কলেজ


সর্বশেষ সংবাদ