করোনা পরবর্তী দৈনন্দিন জীবনে যা মেনে চলব

জুনাইদুল ইসলাম
জুনাইদুল ইসলাম  © ফাইল ফটো

করোনার ভয়াল থাবায় বিশ্বের প্রতিটি আনাচ কানাচ মৃত্যুর শ্লোগানে শঙ্কিত, তটস্থ, কিংকর্তব্যবিমূঢ়। পুরো পৃথিবীর মানুষ শোকাভিভূত, আতঙ্কিত আর দিশেহারা সেখানে আমরাও ব্যতিক্রম নয়। আজ উন্নত, অনুন্নত, সভ্য, অসভ্য বৃহত্তর শক্তিধর রাষ্ট্রগুলোও প্রকৃতির পরিস্থিতির কাছে অসহায়।

প্রতিটি দেশ আজ পরিস্থিতি মোকাবেলায় সর্বোচ্চ প্রতিরোধ ব্যবস্হা গ্রহণের মাধ্যমে এই সমস্যা থেকে উত্তরণের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে তেমনি আমাদের দেশেও এই প্রচেষ্টা অব্যাহত। কিন্তু আমার দৃষ্টিপাত হচ্ছে সেসব দেশের প্রতি যেসব দেশ যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় সর্বোচ্চ প্রতিরোধ সক্ষমতা রয়েছে তারা আজ কতটা নিরুপায় হয়ে পড়েছে।

যারা পৃথিবীতে দাপটিয়ে বেড়াত, যারা শাসন আর শোষণের ব্যাপারে সবচেয়ে অগ্রগামী তারাও আজ এই করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় অগ্রগতির আশা নিয়ে প্রকৃতির কাছে হেরে যাচ্ছে কতটা অসহায়! এতটা অসহায় তারা, তারা কি করোনা মোকাবেলায় কোনো পদক্ষেপ গ্রহন করেনি?

উত্তরটি অকপটে বলা যায় হ্যাঁ, গ্রহন করেছে কিন্তু সেটা এখন আর কার্যকর নয় কারণ করোনা এমন একটি রোগ যার কার্যকরী কোনো ভ্যাকসিন তৈরি হয়নি আর এটা সেসময় লাগামছাড়া হয়ে যায় যতক্ষণ পর্যন্ত এটাকে সঠিক সময়ের মধ্যে প্রতিরোধ ব্যবস্হা গ্রহণ করা না যায়।

হ্যাঁ, সেসব দেশ যেমন- আমেরিকা, ইতালি, চীন, ফ্রান্স, স্পেন, জার্মানির মত দেশ আজ অসহায় তারা এই রোগকে নিয়ন্ত্রণ করতে হিমশিম খাচ্ছে। সেসব দেশে আজ মৃত্যপুরী, এই সঙ্কট আজ তাদের নিয়ন্ত্রণের বাহিরে। এভাবে প্রতিটি দেশ আজ বিশ্ব করোনা মহামারীতে আক্রান্ত, উদ্বিগ্ন ও দিশেহারা। জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের ভাষ্যমতে, করোনা মহামারী দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পৃথিবীর জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বলে হুশিয়ারি দিয়েছেন। যা পৃথিবীতে অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড ভাঙ্গাসহ চরম দারিদ্র্যের শিকার হবে বিশ্বের প্রায় চার কোটি লোক।

যাহোক এসব আলোকপাত করে মূল যে বিষয়টি মনোযোগ দিতে চাচ্ছিলাম সেটি হচ্ছে, এই মহামারী নিয়ে আমরা কতটা উদ্বিগ্ন আর পুরো পৃথিবী কতটা অসহায়। আশা করি সে ভীতিটা আমাদের মধ্যে কাজ করছে এবং তা হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করতে পারছি। আশার বিষয় হচ্ছে খুব শীঘ্রই করোনা ভ্যাকসিন লঞ্চ করবে। সেটি হয়ে উঠুক বিশ্বের জন্য স্বস্তির আলোকবর্তিকা।

এখন প্রশ্ন হলো স্বভাবিক জীবনযাপনে দীর্ঘ করেনার ছুটির পর কেমন হওয়া উচিৎ আমাদের দৈনন্দিন জীবন। আমরা সবাই জানি এটা একটি ভাইরাসজনিত ছোঁয়াচে রোগ তাই আমদের স্বাভাবিক জীবনযাপনে কিছু বিষয় ভুলে গেলে চলবে না অবশ্যই আমদের বাড়তি সচেতনতা ও বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়ে চলতে হবে।

আমরা ইতোমধ্যে অনেকটা অবগত কিভাবে আমরা এই মহামারী থেকে পরিত্রাণ পাব কিভাবে নিজেকে আর দেশের মানুষকে নিরাপদ রাখব।আমাদের মনে রাখতে হবে এটি এমন রোগ যেটা আমাকে, আপনাকে সচেতন থেকে ,সঠিক নিয়ম মেনে চলতে পারলে এর থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব নতুবা আমাদেরে তীব্র অস্তিত্বের সঙ্কটে পরতে হবে।

এর থেকে বাঁচার জন্য বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়ে,বিচক্ষনতার সাথে যে বিষয়গুলো অবশ্যই ফলো করতে হবে-

১.আমাদের দেশের সরকার এই মহামারী প্রতিরোধে যে নিয়ম, যে পরিকল্পনা গ্রহণ করবে সেগুলো অক্ষরে অক্ষরে আমাদেরকে পালন করতে হবে।

২. যতটুকু সম্ভব জনসমাগম হতে এড়িয়ে চলতে হবে আর নিজের প্রোটেক্টিব অর্থাৎ মাস্ক, হ্যান্ডগ্লাবস আর সাবান বা স্যানিটাইজার দিয়ে অবশ্যই নিজেকে জীবানুমুক্ত রাখতে হবে।

৩.হোম কোয়ারান্টাইন, আইসোলেসন সবচেয়ে কার্যকরী পদ্ধতি যেটা আমি বা আপনি ঝুঁকি বা আক্রান্ত হলে স্বেচ্ছায় মেনে নিয়ে পালন করতে হবে আর নিজেদের আত্মীয় স্বজনদের এসব ব্যাপারে বুঝাতে হবে, সচেতন করতে হবে।

৪.যার যার পরিবার সে সে বুঝিয়ে এটাকে সর্বোচ্চ প্রতিরোধের ব্যবস্হা করতে হবে।

যেহেতু আমরা নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ এখানে আমাদেরকে উপার্জন করে খেতে হয় সেহেতু আমাদের এগুলো পালন করা একটু দুঃসাধ্য, দুরূহ হয়ে পরে তবুও আমাদেরকে একটু বুদ্ধিভিত্তিক হয়ে এটা পালন করতে হবে।

যেমন - আমাদের যাদের অবস্থান ভালো তারা অবশ্যই কম আয়ের মানুষের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে। এটা আমাদের নৈতিক ও অত্যাবশ্যক দায়িত্ব কারণ আপনার পাশের কেউ আক্রান্ত হলে আমি,আপনি কেউ নিরাপদ নয় তাই নিম্ন আয়ের বিশেষ করে যারা অসচেতন তাদেরকে সচেতন করে সবাইকে নিয়েই ভালো থাকতে হবে।

আশার বিষয় হচ্ছে, আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে তা অনেক কার্যকরী আর অনুসরণীয় পদক্ষেপ। যা অন্যান্য দেশের তুলনায় সত্যিকার্থে প্রশংসনীয়। আশা করি আমরা সরকারকে করোনা মোকাবেলায় সহযোগিতা করে আর আমরা সচেতন হতে পারলে অবশ্যই এ মহামারী প্রতিরোধ করতে সক্ষম হব।

আমাদেরকে অবশ্যই সভ্য জাতির পরিচয় দিয়ে সচেতনতার মাধ্যমে এর বিপক্ষে রুখে এটাকে প্রতিরোধ করতে হবে। নিজেকে বাঁচাতে হবে,বাঁচাতে হবে এ দেশের ১৭ কোটি মানুষকে। মনে রাখতে হবে আমাদের উপর সৃষ্টিকর্তা সহায় ছিলেন তাই আমরা এখনও বেঁচে আছি কারণ ইউরোপের মত আমাদের দেশে করোনার সংক্রমণ হলে আমি, আপনি কেউ নিরাপদ নয়। সবাইকে আক্রান্ত হতে হবে কারণ আমাদের এর থেকে আরোগ্য পাওয়ার সামর্থ্য নেই। সচেতনতার বিকল্প কিছুই ভাবা যায়না অবশ্যই আমাদের সচেতন হতে হবে।

পরিশেষে বলব,‘পূর্ণ পরম বিশ্বাসী হও, যাহা চাও পাবে তাই; তাহারে ছুঁয়ো না, সেই মরিয়াছে, বিশ্বাস যার নাই’!

কাজী নজরুলের এ লাইন দ্বারা অবিশ্বাসিকে মৃতের সাথে তুলনা করা হয়েছে। তাই করোনা মোকাবেলায় বিশ্বাস রেখে আমাদের আগামীর সুন্দর পৃথিবীর প্রত্যাশায় ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে স্বাভাবিক জীবনযাপন চালিয়ে যেতে হবে। মনে রাখতে মহামারী প্রতিরোধ করার যুদ্ধটা একার নয় সবাইকে নিয়ে করার।সবাই সচেতন হলে বাঁচবে জীবন, সচল হবে এ দেশের জীবনযাপন ও অর্থনৈতিক অগ্রগতি। করোনা ভীতি নয়, পরবর্তী সচেতন ও সাহসী পদক্ষেপই হউক স্বাভাবিক জীবনযাত্রার হাতিয়ার।

লেখক: শিক্ষার্থী, সমাজকর্ম বিভাগ, জবি।


সর্বশেষ সংবাদ