বাস্তব জীবনে রমজানের শিক্ষাকে কাজে লাগানোর মধ্যে সার্থকতা নিহিত

আবু রুফাইদাহ রফিক
আবু রুফাইদাহ রফিক  © টিডিসি ফটো

কারও কষ্ট আমরা তখনই অনুভব করতে পারি, যখন একই কষ্টে আমরা নিজেরা নিপতিত হই। যে কখনও উপোস থাকে না, সে বোঝে না ক্ষুধার যন্ত্রণা। অপরদিকে যার খাবারের অভাব নেই, আবার খাওয়াতেও কোনো বাধা নেই, সে তো ক্ষুধার যন্ত্রণা অনুভব করার জন্য নিজে না খেয়ে থাকবে না। তাই অনাহারী-অর্ধাহারীদের ক্ষুধার যন্ত্রণা অনুভব করে তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়ার জন্য সবার ওপর উপোস থাকার একটা বাধ্যতামূলক নিয়ম থাকা চাই।

রমজান মাসের রোজা সে রকমই একটা বাধ্যতামূলক নিয়ম। এ নিয়ম পালনের মাধ্যমে বছরে ১১টি মাস যারা পেটপুরে খায়, তারা উপলব্ধি করতে পারে না তাদেরই পাশের গরিব মানুষের ক্ষুধার যন্ত্রণা কেমন। সে কষ্ট অনুভব করে তারা গরিবের প্রতি সহানুভূতি এবং সহমর্মিতা প্রকাশের সুযোগ পায়। তারা তাদের প্রতি সাহায্য-সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়।

তাছাড়া সারাদিন উপোস থেকে সিয়াম সাধনার পর রাতের বেলায় দীর্ঘক্ষণ নামাজে দাঁড়িয়ে থাকার মাধ্যমে সেসব শ্রমিকের কষ্ট অনুভব করা যায়, যাদের খাদ্যের তুলনায় পরিশ্রম ঢের বেশি। এ থেকে শিক্ষা নিয়ে একজন মালিক তার অধীন কর্মচারীদের পরিশ্রম কমিয়ে দিতে পারেন। ভোর রাতে সেহরি খাওয়ার বিধান থাকায় রাত জেগে পরিশ্রমকারী মানুষের কষ্ট বোঝা যায়। শীত-গ্রীষ্ম উভয় ঋতুতে রোজা রাখার ভিন্ন ভিন্ন কষ্ট অনুভব করতে হয়। গরমের সময় দিন বড় হয়, তাই রোজা রাখতে যেমন কষ্ট, তেমন কষ্ট তীব্র গরমে রাতে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়তে। আবার শীতের সময় দিনে অপেক্ষাকৃত কষ্ট কম হলেও রাতের নামাজ এবং সেহরি খাওয়ার কষ্ট অনেক।

বলা বাহুল্য রমজানের এসব কষ্ট অনুভবের মাধ্যমে একজন রোজাদার সমাজের অনাহারী-অর্ধাহারী এবং শ্রমিক মজুরদের দুঃখ-কষ্ট সহজেই অনুভব করতে পারে। ফলে সে আর্তজনের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়। আর এই জন্যই হাদিসে রমজান মাসকে বলা হয়েছে 'শাহরুল মুয়াসাত' বা সহানুভূতি ও সহমর্মিতার মাস। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুধু বলে যাননি, বরং নিজে এই মাসে সহানুভূতি ও সহমর্মিতার দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন।

এ মাস এলে তিনি নিজেও প্রচুর পরিমাণে দান করতেন এবং অন্যদেরও তা করতে তাগিদ দিতেন। রাসূল (সা.) রমজান মাসে শ্রমিকদের কষ্ট লাঘবের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন এবং নিজেও তা করে দেখিয়েছেন। এ মাসে তিনি অনেক গোলামকে আজাদ করে দিতেন।

একটি হাদিসে এসেছে, রমজান মাস এলে রাসূল (সা.) সব বন্দিকে মুক্তি দিতেন এবং প্রত্যেক সাহায্যপ্রার্থীকে সাহায্য করতেন। আরেকটি হাদিসে আছে, যে ব্যক্তি রমজান মাসে অধীনদের কাজ কমিয়ে দেবে, আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেবেন (মিশকাত, ১৯৬৬ ও ১৯৬৫ নম্বর হাদিস)।

আল্লাহ নিজেই রমজান মাসে জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে জান্নাত, রহমত ও আকাশের দরজাগুলো খুলে দেন এবং অসংখ্য জাহান্নামিকে মুক্তি দেন। (বুখারি ও মুসলিম) এভাবেই রমজান আমাদের সহানুভূতি ও সহমর্মিতার শিক্ষা দেয়। বাস্তব জীবনে এ শিক্ষাকে কাজে লাগানোর মধ্যেই এর সার্থকতা নিহিত।

লেখক: বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ ও মিডিয়া ব্যাক্তিত্ব এবং আরবি প্রভাষক, জয়নারায়ণপুর ইসলাসিয়া ফাযিল (ডিগ্রি) মাদরাসা, বেগমগঞ্জ, নোয়াখালী


সর্বশেষ সংবাদ