বিশ্ববিদ্যালয়ে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা এখন সময়ের দাবি

  © টিডিসি ফটো

আগামী ১ এপ্রিল থেকে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হবে। এরপরই শুরু হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য কোচিং সেন্টারে ভর্তি। কোচিং সেন্টারগুলো ভর্তি যুদ্ধে সফলতা ধরিয়ে দেওয়ার নামে নানান চটকদার বিজ্ঞাপন সাজিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার জন্য তাদের ছক কষে বসে আছে।

প্রতি বছর উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পর মেডিক্যাল, প্রকৌশল, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, কৃষি এবং সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। অতীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ছিল অল্প কয়েকটি, তাই এ নিয়ে কেউ কোনো প্রশ্ন উত্থাপন করেননি, কিন্তু বর্তমানে দেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ৪৫টি এবং ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ১৫ লক্ষাধিক। বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের ভৌগোলিক অবস্থান সারা দেশব্যাপী, তাই কোনো শিক্ষার্থীর পক্ষে সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা একেবারেই অসম্ভব।

উচ্চ মাধ্যমিক পাশের পর বর্তমান প্রচলিত ভর্তি পদ্ধতিতে একজন ছাত্রছাত্রী এবং অভিভাবকের কী পরিমাণ সময় অপচয়, অর্থ ব্যয় এবং মানসিক হয়রানির শিকার হতে হয় ভুক্তভোগী মাত্রই সহজেই অনুমেয়। ১৯৯৯ সালে যখন দেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ছিল ১২টি, তখন আমি আমার ছোটো ভাইকে নিয়ে বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ঘুরে আমার যে রুঢ় অভিজ্ঞতা হয়েছে, সে আলোকে ২০০০ সাল থেকে সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বিত বা অভিন্ন ভর্তি পরীক্ষার গুরুত্ব অনুধাবন করে আসছি।

ইতোমধ্যে দেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। সমন্বিত অথবা গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষার দাবি দিন দিন আরো জোরাল হচ্ছে। দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান হচ্ছেন মহামান্য রাষ্ট্রপতি। মহামান্য রাষ্ট্রপতি এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ভর্তিচ্ছু ছাত্রছাত্রীদের দুঃখ-কষ্ট লাঘবের লক্ষ্যে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় অনুশাসন প্রদানের পরও স্বায়ত্তশাসনের দোহাই দিয়ে বুয়েট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সমন্বিত ভর্তি কার্যক্রম থেকে সরে এসে পৃথকভাবে ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে ছাত্রছাত্রী ভর্তির ঘোষণা দিয়েছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক এবং মাননীয় চ্যান্সেলরের অনুশাসন অমান্যের সামিল।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যানের পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয়কে বাদ দিয়ে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার ঘোষণাটি তাদের কাছে আত্মসমর্পণেরই নামান্তর। ইউজিসির ঘোষণা অনুযায়ী যেহেতু এইচএসসি সিলেবাস অনুযায়ী ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণ করা হবে, তাই এইচএসসি পরীক্ষা, ২০ এর ব্যবহারিক পরীক্ষা সম্পন্নের এক সপ্তাহের মধ্যে সমন্বিত/গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষা শুরু করা যেতে পারে। তাহলে ছাত্রছাত্রীদের আর কোচিং সেন্টারে গিয়ে কোচিং করার প্রয়োজন পড়বে না। এইচএসসি পরীক্ষা এবং ভর্তি পরীক্ষা দুটো শেষ করে ছাত্রছাত্রীরা দুই মাস সময় নিজেদের মতো করে অতিবাহিত করতে পারবে।

এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পরপরই ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা যেতে পারে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ইউজিসি এবং সকল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আশা করছি এ প্রক্রিয়ায় ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণ করা যায় কিনা ভেবে দেখবেন।

লেখক : কলামিস্ট, কর্মকর্তা-পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর


সর্বশেষ সংবাদ