শুধু জেনেটিকালি মুসলিম হওয়া যায় না
- মো. আবু রায়হান
- প্রকাশ: ২১ আগস্ট ২০১৯, ০৪:৫৮ PM , আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০১:২৩ PM
ইসলাম অর্থ শান্তি তথা আত্মসমর্পণ করা। সুতরাং মানুষের মধ্যে যারা ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে আশ্রয় নেয়, ইসলাম কবুল করে বা আল্লাহর কাছে নিজেকে সম্পূর্ণরূপে সমর্পণ করে তাদের বলা হয় মুসলিম। শুধু মুসলমানের ঘরে জন্ম নিলেই কেউ মুসলমান হয় না, যতক্ষণ না সে ঈমান আনে ও ইসলামের সঠিক বিধি-বিধান মেনে চলে। কেননা আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহর মনোনীত জীবন ব্যবস্থা হলো ইসলাম।’ (সূরা আল ইমরান, আয়াত: ১৯)
আবার কেউ কাফের মুশরিকদের ঘরে জন্ম গ্রহণ করেও যদি ঈমান আনে এবং ইসলামের বিধি-বিধান সঠিকভাবে মেনে চলে তাহলে সেও মুসলিম হিসেবে গণ্য হবে। জেনেটিকালি শাকসবজি উৎপাদন ও অন্যান্য বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার সম্ভব। কিন্তু বাপ দাদা মা মুসলিম সেই হিসেবে জেনেটিকালি আমিও মুসলিম হবো তা কিন্তু সব সময় সম্ভব নয়। আপনি বংশ পরম্পরায় বাবা মার জিনগত বৈশিষ্ট্য পেতে পারেন। স্বভাব চরিত্রে তাদের মত হতে পারেন। কিন্তু তাদের বিশ্বাস ও ধর্ম আপনাকে নাও প্রভাবিত করতে পারে।
আবার আপনি আপনার পিতা মাতার চেয়ে বেশি ধার্মিক ও সংস্কৃতিমনাও হতে পারেন শুধু বিশ্বাস ও আমল আখলাক দিয়ে। জেনেটিকালি ধর্ম কারো ওপর প্রভাব ফেলে না।ধর্ম পালন এটি একান্ত নিজের অর্জন এবং তা নিজ থেকেই করতে হয়। একজনের খাদ্য অন্য কেউ খেলে যেমন ক্ষুৎপিপাসা নিবারণ হয় না, তেমনি এক জনের ধর্ম পালনের কারণে অন্যজন উপকৃত হয় না। তবে সুন্দর পরিবেশ তৈরি হতে পারে। মুসলিমের ঘরে জন্ম নিলেই মুসলমান হওয়া যায় না। মুসলিম নামধারী হওয়া যায়। মুসলমান হতে হলে সুনির্দিষ্ট কিছু কার্যাবলী সম্পাদন করতে হয়। যেমন বলা হয়, ‘তরুলতা সহজেই তরুলতা, পশুপক্ষী সহজেই পশুপক্ষী, কিন্তু মানুষ প্রাণপণ চেষ্টায় তবে মানুষ’।
তেমনি বাবা মুসলিম হলেই আপনি মুসলিম ঘটনা এমনটি না। এটি সম্পূর্ণ আপনার জ্ঞান ও মেধার ওপর নির্ভর করে। কোনটি সত্য ও শাশ্বত তা গ্রহণের ওপর। তবে মুসলিম ঘরে জন্ম গ্রহণ আপনার জন্য অবশ্যই প্লাস পয়েন্ট। একধাপ এগিয়ে গেলেন। কিন্তু কোনো অমুসলিম ইসলাম কবুল করলে তারও সুযোগ আছে। হাদিস শরিফে এসেছে, ‘ইসলাম গ্রহণ আগের সব পাপ মোচন করে দেয়। হিজরত আগের সব পাপ মোচন করে দেয়। হজ আগের সব পাপ মোচন করে দেয়।’ (মুসলিম শরিফ : হা. ১২১)
হাজিব ইবনু ওয়ালীদ (রহ.) আবু হুরাইরা (রাযি.) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, প্রতিটি নবজাতক স্বভাবজাত ইসলাম নিয়ে জন্মলাভ করে। অতঃপর তার বাবা-মা তাকে ইয়াহুদী বানিয়ে দেয়, খ্ৰীষ্টান বানিয়ে দেয় এবং আগুনপূজারী বানিয়ে দেয়, যেমন চতুষ্পদ প্রাণী পূর্ণাঙ্গ চতুষ্পদ বাচ্চা জন্ম দেয় তোমরা কি তাতে কোন অঙ্গ কর্তিত বাচ্চা উপলব্ধি করছ?
তারপর আবু হুরাইরা (রাযি.) বললেন, ইচ্ছা করলে তোমরা এ আয়াতটি পাঠ করতে পার, “আল্লাহর ফিতরাতে যার উপর তিনি মানুষ সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহর সৃষ্টির কোন পরিবর্তন নেই। (সূরা আর রূম, আয়াত ৩০)।
হযরত নুহ (আ.) ও হযরত লুত (আ.) এর স্ত্রীদের কাহিনীও কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে। এ দু’জন নবির স্ত্রীগণ আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাস করতেন না এবং শিরককে লিপ্ত ছিলেন। সুতরাং নবিদ্বয় তাঁদের স্ত্রীদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করেন।
এ ব্যাপারে আল্লাহ পাক বলেন ‘আল্লাহ তা’আলা কাফেরদের জন্যে নুহ-পত্নী ও লুত-পত্নীর দৃষ্টান্ত বর্ণনা করেছেন। তারা ছিল আমার দুই ধর্মপরায়ণ বান্দার গৃহে। অতঃপর তারা তাদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করল। ফলে নুহ ও লুত তাদেরকে আল্লাহ তা’আলার কবল থেকে রক্ষা করতে পারল না এবং তাদেরকে বলা হলো জাহান্নামীদের সাথে জাহান্নামে চল যাও।’ (আত তাহরীম, আয়াত: ১০)
ইসলামের সবচেয়ে বড় শত্রু আবু জেহেল সে মুসলিম হবার সৌভাগ্য অর্জন করেনি। কিন্তু তার ছেলে হযরত ইকরামা (রা.) ছিলেন ইসলামের একনিষ্ঠ খাদেম ও প্রাণ উৎসর্গকারী। তেমনি হযরত নুহ (আ.) ছিলেন একজন নবি তার ছেলে কেনান ছিলেন অবিশ্বাসী কাফির একজন নাফরমান ছিল। নবির ছেলে হবার পরও সে মুসলিম হতে পারেনি শুধু আল্লাহর প্রতি অবিশ্বাস ও বিরোধিতার কারণে তার শাস্তি আল্লাহ দিয়েছেন, যেমন কুরআনে এসেছে ‘আর নুহ (আ.) তাঁর পালনকর্তাকে ডেকে বললেন- হে পরওয়ারদেগার, আমার পুত্র তো আমার পরিজনদের অন্তর্ভুক্ত; আর আপনার ওয়াদাও নিঃসন্দেহে সত্য আর আপনিই সর্বাপেক্ষা বিজ্ঞ ফয়সালাকারী। আল্লাহ বলেন, হে নুহ! নিশ্চয় সে আপনার পরিবারভুক্ত নয়। নিশ্চয়ই সে দুরাচার! সুতরাং আমার কাছে এমন দরখাস্ত করবেন না, যার খবর আপনি জানেন না। আমি আপনাকে উপদেশ দিচ্ছি যে, আপনি অজ্ঞদের দলভুক্ত হবেন না।’ (সূরা হূদ, আয়াত: ৪৫-৪৬)
সুতরাং বলা যায় মুসলমানের ঘরে জন্ম নিলেই মুসলিম হওয়া যায় না আবার অমুসলিমের ঘরে জন্ম নিয়েও খাঁটি মুসলিম হতে পারা যায়। শুধু জেনেটিকালি মুসলিম হওয়া যায় না। আল্লাহ আমাদের খাঁটি মুসলিম হিসেবে কবুল করুন। আমিন। ‘হে বিশ্বাসীগণ তোমরা আল্লাহকে যথাযথভাবে ভয় কর এবং তোমরা মুসলমান না হয়ে মৃত্যুবরণ করোনা।’ (সুরা আল ইমরান, আয়াত: ১০২)