রহমতের বার্তা নিয়ে মাহে রমজান
- শহীদুল ইসলাম
- প্রকাশ: ১০ মে ২০১৯, ০৯:৫৪ AM , আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০১:১৬ AM
পবিত্র মাহে রমজান শুধু মুসলমানদের জন্যই নয়, বরং সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে অতি বড় এক নেয়ামত। মানুষের ইহকালীন ও পরকালীন কল্যাণের জন্যই মহান আল্লাহ রোযা রাখার বিধান করেছেন। রোযা হচ্ছে ইসলাম নামক পাঁচ স্তম্ভ বিশিষ্ট ঘরের তৃতীয় স্তম্ভ।
পবিত্র এ মাস কল্যাণ ও সৌভাগ্যে পরিপূর্ণ। প্রতি বছর এ মাস আমাদের নিকট রহমতের, মাগফিরাতের, নাজাতের ও সীমাহীন বরকতের বার্তা নিয়ে আগমন করে। পবিত্র এ মাসেই মহান আল্লাহ জগৎবাসীর প্রতি তার রহমতের দৃষ্টান্ত স্বরূপ মানবতার সমগ্রীক কল্যাণের উদ্দেশ্যে মহাবিশ্বের সবচেয়ে বড় বিস্ময় পবিত্র কুরআন অবতীর্ন করেন।
সুতরাং এ মাসে আমাদের উচিৎ বেশি বেশি কুরআন তিলাওয়াত করা, কুরআনের মর্ম বুঝার চেষ্টা করা এবং কুরআনের আলো সমাজে ছড়িয়ে দেয়ার মাধ্যমে উক্ত নেয়ামতের যথাযথ শুকরিয়া আদায় করা। পবিত্র এ মাসেই মহান আল্লাহ জান্নাতের দরজা সমূহ খুলে দেন এবং জান্নাত সমূহকে মনরোম সাজে সজ্জিত করেন।
পক্ষান্তরে এ মাসের সম্মান ও বরকতে মহান আল্লাহ জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেন এবং শয়তানদের বন্দী করে রাখেন, যেন কেউ তার রহমত থেকে শয়তানের প্রবঞ্চনায় পড়ে বঞ্চিত না হয়। হাদীসের ভাষায় এ মাসে একটি নফল আদায় করা অন্যান্য মাসে একটি ফরয বিধান পালন করার সমতুল্য।
তাই আসুন, এই পবিত্র মাসে নফল ইবাদাত বেশি করে আদায় করে তার রহমতে ধন্য হওয়ার চেষ্টা করি। সবকিছুর একটি নির্দিষ্ট মওসুম আছে, নেক কাজের মওসুম হচ্ছে পবিত্র মাহে রমজান। ইমাম বুখারী (র.) এর বর্ণনামতে পবিত্র এ মাসে রাসূলুল্লাহ (স.) নেক আমলের পরিমান বহুগুণে বৃদ্ধি করে দিতেন, এমনকি তার দান-সাদাকার পরিমন প্রবল বেগে বয়ে যাওয়া বাতাসের চেয়ে বেশি হত।
অতএব পবিত্র এ মাসে মহান আল্লাহর রহমত, মাগফিরাত, নাজাত ও বারাকাত লাভ করতে চাইলে আমাদের রোযা শুধু পানাহার থেকে বিরত থাকার মধ্যে সীমিত রাখলে চলবে না, বরং পবিত্র রোযার যে কাঙ্খিত লক্ষ-উদ্দেশ্য তথা তাকওয়া অর্জন করতে হবে। মহান আল্লাহ এ সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে বলেন, তোমাদের উপর রোযা ফরয করা হয়েছে যেমনিভাবে তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর তা ফরয করা হয়েছিল, যেন তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পার। (বাকারা-১৮৩)।
সুতরাং বাহ্যিকভাবে পানাহার ত্যাগের মাধ্যমে তাকওয়া অর্জন করা সম্ভব নয়, বরং আমাদেরকে পানাহার থেকে বিরত থাকার সাথে সাথে অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সিয়ামও পালন করতে হবে। যেমন, অন্তরের রোযা হচ্ছে- কুচিন্তা ও খারাপ কাজের পরিকল্পনা থেকে অন্তরকে মুক্ত রেখে আল্লাহর যিকির ও তার নির্দেশিত বিষয়ে গভীর চিন্তা ও ধ্যানে অন্তরকে মগ্ন রাখা।
মুখের রোযা হচ্ছে- অশ্লীল কথাবার্তা, গীবত-পরনিন্দা, ঝগড়া ও গালি-গালাজ থেকে জবানকে বিরত রেখে কুরআন তিলাওয়াত, যিকির-আযকার ও দুয়ায় ব্যস্ত থাকা। চোখের রোযা হচ্ছে- হারাম দৃশ্য ও হারাম বস্তুর দর্শন থেকে নিজের দৃষ্টি সংযত রাখা। কানের রোযা হচ্ছে- নিষিদ্ধ গান-বাজনা ও হারাম বিষয়গুলো থেকে নিজের কানকে বিরত রাখা।
এভাবে সকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের রোযা পালনের মধ্য দিয়ে তাকওয়া অর্জনের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। তাহলেই আমরা পবিত্র রমজান মাসের রহমত-মাগফিরার-নাজাত-বারাকাত যথার্তভাবে লাভে সক্ষম হব। মহান আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন। আমীন।
লেখক: শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
১০ম ব্যাচ, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ