নীতিনিষ্ঠ মানবাধিকার চর্চার অভাবেই সংকটে বাংলাদেশ
- আসিফ সালেহ
- প্রকাশ: ০১ অক্টোবর ২০২৫, ১০:৪৮ PM
বাংলাদেশে মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা বিশেষভাবে কঠিন। এর একটি বড় কারণ হলো অধিকাংশ তথাকথিত মানবাধিকারকর্মী দলীয় অবস্থান বা রাজনৈতিক পক্ষপাত থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে পারে না। অথচ প্রকৃত মানবাধিকার চর্চা মানে হলো নীতিগতভাবে নিরপেক্ষ থেকে নিপীড়িতের পাশে দাঁড়ানো।
মানবাধিকার রক্ষার সংগ্রামে প্রায়শই রাষ্ট্রই হয়ে ওঠে নিপীড়নের উৎস। তাই যে দলই ক্ষমতায় থাকুক না কেন, যদি তারা অন্যায় করে, দমন-পীড়ন চালায় বা মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন করে, তার বিরুদ্ধে মানবাধিকারকর্মীদের কথা বলা জরুরি। একইভাবে, বিরোধী দলে যারা আছে, তাদের মানবাধিকার যদি লঙ্ঘিত হয়, তবে তাদের পক্ষেও দাঁড়াতে হবে, যতই তাদের রাজনৈতিক অবস্থান অপছন্দনীয় হোক না কেন।
অতএব, মানবাধিকার আন্দোলন কোনো রাজনৈতিক সুবিধা বা দলীয় ভালোবাসা-ঘৃণার জায়গা নয়। এটি একটি নীতিনিষ্ঠ অবস্থান, যেখানে মূল প্রশ্ন হচ্ছে ক্ষমতা নেই বলে কারো অধিকার যেন খর্ব না হয়, কিংবা ক্ষমতায় আছে বলে কারো অন্যায় যেন আড়াল না হয়। শেষ পর্যন্ত মানবাধিকার রক্ষার দায়িত্ব মানে হচ্ছে ন্যায় ও মর্যাদার পক্ষে নিরন্তর দাঁড়িয়ে থাকা। সেটা অনেক কঠিন এবং অনেক সাহসের কাজ।
অনেক বাঘাবাঘা মানুষ নিজেকে মানবাধিকারের পক্ষে বলেন, অথচ নানা ভাবে অপছন্দের মানুষের মানবাধিকার হরণকে জাস্টিফাই করেন। তারা বলতে চান, যারা আগে অন্যদের এই অধিকার হরণ করেছেন, তারা এখন আর এই অধিকারের যোগ্য নন। অনেকের পৃথিবীর তাবৎ অত্যাচারিতের জন্য মন পোড়ে। কিন্তু ঘরের পাশের অত্যাচারিতের ওপর অত্যাচার নানাভাবে হজম করে ফেলেন প্রশ্ন ছাড়া।
বিদেশে গিয়ে যারা বলেন দেশে এখন মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা হয়েছে, তারা কিভাবে এটা বলেন আমি জানি না। প্রতিদিনের খবর দেখলেই বোঝা যায়, গাড়ির চালক পরিবর্তন হয়েছে, গাড়ি একই আছে। শোষণের সমস্ত যন্ত্র আগের মতোই ব্যবহার হয়। যারা আগে সরব ছিলেন, তারা এখন চুপ; যারা এখন সরব, তারা অনেকেই আগে চুপ ছিলেন।
সমাজে এমন সাহসী এবং কনসিস্টেন্ট মানুষ খুব কম আছেন যারা তখনও বলেছেন, এখনো বলছেন, ভবিষ্যতেও বলবেন। যারা আছেন, তাদের প্রতি আমার অনেক শ্রদ্ধা। কারণ প্রাতিষ্ঠানিক কারণে নিজে এটা পারি না। আর সবার হয়তো সেই রোলটাও না। আমার রোলটা মানুষের অর্থনৈতিক অধিকার, মানুষ হিসেবে তার সম্ভাবনা বাস্তবায়নের উপায় তৈরির জায়গা করা হিসেবে দেখি। এটাও এক ধরনের অধিকার, কিন্তু অনেক কম স্পর্শকাতর।
সত্যিকারের অধিকারকর্মী ও অ্যাক্টিভিস্টদের একটি সমাজে অনেক প্রয়োজন। তারা না থাকলে যেটুকু রাজনৈতিক অধিকার বা মানবাধিকারের ব্যাপারে চক্ষুলজ্জা আছে, তাও থাকত কি না সন্দেহ। কারণ ব্যক্তিগতভাবে বেশির ভাগ মানুষ সত্যিকারের মানবাধিকারের পক্ষে নন। সত্যিকারের মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা মানে সব সময় সাহসের সাথে স্রোতের উল্টো দিকে কাজ করা। এমন মানুষের সংখ্যা অনেক কম, কিন্তু তাদের প্রয়োজন অনেক বেশি।
আসিফ সালেহ: নির্বাহী পরিচালক, ব্র্যাক