রবীন্দ্রনাথের ভাষারীতি নিয়ে দুশ্চিন্তার কোনো কারণ দেখি না

মাসুদুজ্জামান
মাসুদুজ্জামান  © টিডিসি সম্পাদিত

রবীন্দ্রনাথ শত্রু কেন? ধর্ম আলাদা বলে? ওই একই ভাষাভঙ্গি তো নজরুলেরও! তাহলে? নজরুলকে মান্য করা নিয়ে সমস্যা নাই, কিন্তু রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে আছে। এইটা কী ধরনের যুক্তি? 

লেখককে কি ধর্ম দিয়ে বিচার করতে হয়, না কি তাঁর লেখা দিয়ে? এখনকার নব্য-বাঙালি মুসলমানদের একাংশের চিন্তার ধারাটা মারাত্মক স্ববিরোধী। বাংলা ভাষা তো শুধু হিন্দুর না, মুসলমানেরও। বাঙালিমাত্রেরই ভাষা বাংলা। এর কথ্য রূপটা মিশ্র। হিন্দু-মুসলমান, লোকায়ত-শহুরে, ব্রাত্য-এলিট, আঞ্চলিক-প্রমিত সব মিলেমিশে মিশ্র হয়ে গেছে। শুধু গণমাধ্যম আর  শিক্ষাক্ষেত্রে এর ব্যবহারটা প্রমিত। এই প্রমিত রূপটা কোনো মুসলমান ভেবেচিন্তে ব্যবহার করা শুরু করেননি। দীর্ঘ দিনের ব্যবহারের মধ্যদিয়ে স্বাভাবিক হয়ে গেছে। এখন কেউ ইচ্ছে করলে এই প্রমিত রূপটা বর্জন করে যে কোনো রীতি গ্রহণ করে ব্যবহার করতে পারেন। তাতেও সমস্যা দেখি না। ভাষা একটা জীবন্ত সত্তা। জনমানুষের মাধ্যমেই এর রূপ-রূপান্তর ঘটতে থাকে।

আরও পড়ুন: প্রাথমিকের ৯ কোটি পাঠ্যবই ছাপানোর পরিকল্পনা, নতুন সংস্করণের বই পাবে আরও দুই শ্রেণির শিক্ষার্থীরা

আসলে, বাংলা ভাষাকে যে যেমন মনে করেন, সেভাবেই ব্যবহার করতে পারেন। একে ‘সাম্প্রদায়িক’ (মুসলমানিকরণ বা হিন্দুত্বকরণ) ভাবার কোনো যুক্তি নেই। রবীন্দ্রনাথের নিজের ভাষা ব্যবহারের কারণে রবীন্দ্রবিদ্বেষ তাই অর্থহীন, অযৌক্তিক। আপনার বাংলা ভাষার যে রূপটা ব্যবহার করতে ইচ্ছে হয় করেন। কিন্তু আমি কোন রীতিটা ব্যবহার করবো, সেটা আপনি ডিকটেট করতে পারেন না।

মনে রাখা দরকার, ভাষা সাম্প্রদায়িক বা সেক্যুলার কোনোটাই নয়। এভাবে ভাষাবিচার করা যায় না। আপনি কীভাবে বাংলা ভাষা ব্যবহার করছেন (গঠন/শব্দ), তার উপরেই নির্ভর করবে ভাষার চরিত্র। একজন বাঙালি হিন্দু তাই তার মতো ভাষা ব্যবহার করবে, আপনি আপনার মতো। এ নিয়ে পারস্পরিক বাহাস করে ভাষা-দাঙ্গা বাধানোর দরকার কি? রবীন্দ্রনাথের ভাষারীতি নিয়ে আপনার এত দুশ্চিন্তার কোনো কারণ দেখি না। রবীন্দ্রনাথের প্রমিত রীতির বাংলা ব্যবহার করা না-করার স্বাধীনতায় কারুর হস্তক্ষেপ করা উচিত নয়। রবীন্দ্রনাথকে পড়বে কী পড়বে না, গ্রহণ করবে কী করবে না, সেই স্বাধীনতাও একজন পাঠকের থাকতে হবে।

মাসুদুজ্জামান: কবি ও প্রাবন্ধিক; অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়


সর্বশেষ সংবাদ