বিলম্বে নির্বাচন: আরেকটি আন্দোলনের পথে দেশ
- সাইদুর রহমান
- প্রকাশ: ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:০১ PM , আপডেট: ১৬ জুলাই ২০২৫, ০৩:৫৮ PM
সংস্কারের নামে নিজেদের ক্ষমতা বিলম্বিত করতে নির্বাচন আটকানোর নানা কৌশল অবলম্বন করার কথা শোনা যাচ্ছে। কিন্তু নির্বাচন বিলম্বের পরিণতি নিয়ে কি কেউ ভেবেছেন? জনগণকে বোকা বানানোর জন্য ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে নির্বাচনের আওয়াজ তোলা হচ্ছে। ভোটার তালিকার দোহায় দেয়া হচ্ছে। ২০২৬ সালের ২রা মার্চ চূড়ান্ত ভোটার তালিকা করে যে নির্বাচন আয়োজনের পরিকল্পনা সরকার করেছে তা বুমেরাং হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। সংস্কারই এক সময়ে সংশয়ে রূপ নেবে।
২০২৫ সালের জুনের মধ্যেই নির্বাচন দিলে সমস্যা কোথায়? ২০২৫ সালের ২রা মার্চ চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশের পর নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা করতে সমস্যা নেই নির্বাচন কমিশনের (ইসি)। নির্বাচন কমিশনও নির্বাচন আয়োজনে প্রস্তুত। সরকার সংশ্লিষ্ট আপনারা কেন দ্রুত নির্বাচনের আপত্তি করছেন? কেন দ্রুত নির্বাচনের দাবি করলে রাগান্বিত হচ্ছেন? ২০২৫ সালের মধ্যে আপনারা কেন নির্বাচন চান না? আপনাদের আবার কী নতুন পরিকল্পনা আছে? আপনারা নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার কে? নির্বাচন কমিশনের কাজে কেন আপনারা হস্তক্ষেপ করছেন? কেন নির্বাচন কমিশনের তফশিল ঘোষণার কাজটি আপনারা করতে চাচ্ছেন? আপনারা কি ভুলে গেছেন নির্বাচন কমিশন একটি স্বাধীন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। বিদ্যমান সংবিধানের অধীনেই শপথবদ্ধ। কেন সংস্কারের নামে সময়ক্ষেপণ করবেন? কেন বিদ্যমান স্বচ্ছ ছবিসহ ভোটার তালিকাকে অস্বচ্ছ বানিয়ে জাতির সামনে মিথ্যা তথ্য দিচ্ছেন?
আচ্ছা বুঝছি দল করবেন, করুন। কিংস পার্টি। ক্ষমতা চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করতে চান? এতো সস্তা না রে পাগলা। অনেকেই করেছে, কিন্তু কেউ টিকতে পারেনি। পারবেও না। কারণ এটি বাংলাদেশ। সরকারে আছেন থাকেন। জনগণের শান্তি দেন। চাঁদাবাজি কমান, দ্রব্যমূল্যের দাম নিয়ন্ত্রণে এনে জনগণকে রেহায় দেন। পতিত ফ্যাসিবাদের কবল থেকে দেশকে মুক্ত করুন। ইনিয়ে বিনিয়ে ফ্যাসিবাদ পুর্নবাসন বন্ধ করুন। বিশেষ রাজনৈতিক দলের প্রতি আনুগত্য পোষণ থেকে বেরিয়ে আসুন। ছাত্র-জনতার গণহত্যার জড়িতদের বিচার নিশ্চিত করুন।
সমন্বয়কদের নাম ব্যবহার করে কী পরিমান চাঁদাবাজি, তদবির হচ্ছে তা কি জানেন? একজন পুলিশ সুপার সমন্বয়দের নামে সত্য প্রতিবেদন দাখিল করায় তাকে শাস্তি দিয়েছেন-এটি কি আমরা জানি না। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার স্ট্রল বরাদ্দে কি করছেন-খোঁজ কি রাখি না। কোথায় কার জন্য তদবির করছেন সেটি কি জানি না? তাহলে কীসের পরিবর্তন, কীসের সংস্কার? তবে বুঝছি কিছু হোক আর নাই হোক নিজেদের একটি সংস্কার হবে-এটি নিশ্চিত।
বারবার বলছি,আবারো বলছি, নির্বাচন বিলম্ব করলে পরিস্থিতি সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। আপনারা কি বোঝেন না পরিস্থিতি ক্রমশ ঘোলাটে হচ্ছে। জনগণের কাছে সরকার দিনকে দিন অজনপ্রিয় হচ্ছে। আপনারা যদি পরিস্থিতি বুঝেও না বোঝার ভান করেন তাহলে পরিণতি কঠিন খারাপ হবে। প্রস্তুত হোন। লম্বা সময়ের জন্য জনগণ বাংলাদেশে তার নিয়ন্ত্রণ হারাবে। এই নিয়ন্ত্রণ বুঝে পেতে আবার আরেকটি গণঅভ্যুত্থানে অংশ নিতে হবে ছাত্র-জনতাকে। আমাদের বুঝতে হবে সবার আগে বাংলাদেশ। যারা এটি বুঝবে তারা নিশ্চই স্বল্প সময়ের মধ্যে নির্বাচনের দাবিতে রাজপথে নামবে। জনগণকে তার প্রাপ্য বুঝে দেবে। নির্বাচন বিলম্বিত করবার কূটকৌশল কাজে আসবে না। হয়তো খুব বেশি দেরি হবে না অবিলম্বে বাংলাদেশের জনগণকে ভোটের অধিকারের দাবিতে আরেকটি আন্দোলনে যুক্ত হবে। দ্রুত নির্বাচন নিশ্চিত করে ঘরে ফিরবে।
আবারো বলছি, ১৯ জুলাই সারজিস-হাসনাতরা বিগত পতিত সরকারের তিন মন্ত্রীর সাথে বৈঠক করে কোটা আন্দোলন স্থগিত করেছিলো। সেটি আমরা ভুলে যায়নি। পরবর্তী ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে সরকার পতনের একদফায় রূপ দিতে মুক্তকামী রাজনৈতিক দলগুলো ছিল অগ্রভাগে। বিশেষ করে বিএনপি-জামায়াতের ভূমিকা ছিল অকল্পনীয়। বিগত ১৭ বছরের অপশাসনের চূড়ান্ত রূপ ছিল হাসিনার পতন। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন ছিল শুধু মাত্র একটি প্লাটফর্ম। সেই প্লাটফর্মের নেতৃত্বদ্বানকারী যদি মনে করেন তাদের ছাড়া সরকার পতন হতো না তারা বোকার স্বর্গে আছেন। নিজেরাই ফ্যাসিবাদের মতো জোর করে রাষ্ট্র সংস্কারের নামে দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার মানসিকতা পরিহার করুন। সুস্থ এবং পরিচ্ছন্ন চিন্তা করুন। দেশকে এগিয়ে নিন।
কোন দল বা কোন ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী হবেন-সেটি নিয়ে যদি সরকার মহোদয় বা তাদের কুশীলবদের চিন্তায় ভাজ পড়ে তাহলে উদ্বিগ্ন হওয়া ছাড়া উপায় নাই। একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের চাওয়া বা পরামর্শে যদি সরকারের কোন কোন উপদেষ্টার কথাবার্তা অভিন্ন হয় তাহলে সন্দেহ দানা বাঁধে। ইতিমধ্যে অন্দর মহলে কান পাতলেই শুনতে পাই, বাংলাদেশের জনপ্রিয় রাজনৈতিক দলের প্রধানকে প্রধানমন্ত্রী নিয়ে একটি মহল চিন্তিত,তাহলে বুঝতে বাকি থাকে না ষড়যন্ত্রকারীদের চক্রান্ত থেমে নেই। জনগণের ম্যান্ডেট ছাড়া ক্ষমতায় থাকা অনির্বাচিত সরকার মানেই ক্ষণে ক্ষণে অশান্তি, বিশৃঙ্খলা। এজন্যই সরকার সংশ্লিষ্ট সকলকেই বলবো, পদচ্যুত বাংলাদেশকে সঠিক পথে আনুন। এই সঠিক পথ হলো নির্বাচন। সেটি অতি দ্রুতই। জনগণকে ভোটদানের সুযোগ দিন। জনগণ নিজের ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে দেশে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির শাসন দেখতে চায়। এই মুহূর্তে দরকার নির্বাচিত সরকার।
লেখক: রাজনীতি ও নির্বাচন কমিশন বিষয়ক সম্পাদক, দৈনিক ইত্তেফাক