মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুলের শিক্ষার্থীদের সমস্যার সমাধান কবে হবে?
- শাকিল আহমেদ
- প্রকাশ: ২০ আগস্ট ২০২৪, ০৯:৫৯ PM , আপডেট: ২০ আগস্ট ২০২৪, ১০:০৬ PM
বৈষম্যের অনন্য উদাহরণ মেডিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুলের (ম্যাটস) শিক্ষার্থীরা। উচ্চ শিক্ষার অধিকার, নিয়োগ লাভের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বছরের পর বছর। পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, ডিপ্লোমা কৃষি ইনস্টিটিউটের পাশাপাশি আরেকটি সরকারি প্রতিষ্ঠানে ছেলেমেয়েরা পড়ালেখা করে তার নাম মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুল; তা হাসিনার স্বৈরাচার সরকার এবং তার দুর্নীতিগ্রস্ত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জন্য গ্রামীণ জনগণের সেবাদান থেকে বঞ্চিত হচ্ছে একযুগ ধরে।
পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে পাশ করা শিক্ষার্থীরা ১০ম গ্রেডে প্রতি বছর মেগা সার্কুলার পাচ্ছে কিন্তু মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্টদের ১১তম গ্রেডে রেখে দেওয়া হয়েছে এবং ১ যুগের বেশি সময় দেওয়া হয়নি উল্লেখযোগ্য কোনো নিয়োগ। সাধারণত কমিউনিটি ক্লিনিক, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, জেলা সদর হাসপাতালে সাব অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার পোস্টে নিয়োগ দেওয়ার কথা ম্যাটস পাশকৃত শিক্ষার্থীদের।
সরকারের যদি প্রয়োজন না হয় তাহলে এই প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিচ্ছে না কেন? এই প্রশ্ন ম্যাটসের শিক্ষার্থীদের। প্রতি বছর হাজার হাজার শিক্ষার্থী ভর্তি করিয়ে তাদের জীবন নষ্ট করছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। বছরের পর বছর আন্দোলন করেছে ম্যাটসের শিক্ষার্থীরা কিন্তু তা পুলিশ দিয়ে দমন করেছে সরকার। বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার আর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার যেমন সমান নয় তেমনি মেডিকেল আর ডিপ্লোমা মেডিকেলও সমান নয়।
বর্তমানে কমিউনিটি ক্লিনিকে সেবা দিচ্ছে কমিউনিটি হেলথ্ কেয়ার প্রোভাইডার যারা মাত্র ৩ মাসের ট্রেনিং করে নিয়োগ লাভের পর। এমনকি তারা ৪৫ ধরনের ঔষধ দিয়ে থাকে তারপরেও কমিউনিটি ক্লিনিকে নিয়োগ দেওয়া হয় না সার্টিফাইড সাব অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার। কিন্তু বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে (ICDDRB, UNICEF) সামান্য কিছু পোস্টে নিয়োগ পায় ম্যাটসের শিক্ষার্থীরা। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য সংস্থার সাথে ম্যাটসের শিক্ষার্থীরা কাজ করছে কিন্তু তা সামান্য কয়েকজন।
এবার আসি উচ্চ শিক্ষার বিষয়ে মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণাপত্রের ২৬তম পরিচ্ছেদ অনুযায়ী সমস্ত মানুষের শিক্ষার অধিকার আছে। এই শিক্ষা (ন্যূনতম পক্ষে প্রাথমিক স্তরে) বিনামূল্যে হবে। প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক হবে। কারিগরি ও পেশাগত শিক্ষা সর্বসাধারণের জন্য সুলভ হবে এবং উচ্চশিক্ষা মেধার ভিত্তিতে সবার জন্য সমভাবে লভ্য হবে। কিন্তু ম্যাটসের শিক্ষার্থীরা এসএসসি পাশে ভর্তি পরীক্ষায় পাশ করে ভর্তি হওয়ার পর ৪ বছরের এই ডিপ্লোমা কোর্সের পর আর কোনো উচ্চশিক্ষা লাভের সুযোগ পায়না।
কিন্তু ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার, ডিপ্লোমা নার্সিং, ডিপ্লোমা কৃষি ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা বিএসসি পড়ার সুযোগ পেয়ে থাকে এমনকি পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের উচ্চ শিক্ষার জন্য রয়েছে স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান ঢাকা ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং টেকনোলজি (ডুয়েট)।
ম্যাটস শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক কিছু দাবির মধ্যে অন্যতম হলো সমস্ত খালি পদে সাব অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার নিয়োগ দিতে হবে এবং তা অবশ্যই দশম গ্রেডে হতে হবে। আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী উচ্চশিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে এবং কার্যকরী কোর্স কারিকুলাম তৈরি করতে হবে। ভর্তি পরীক্ষার ন্যূনতম যোগ্যতা এইচএসসি করতে হবে।
উল্লেখ্য থাকে যে, কমিউনিটি হেলথ্ অ্যাসিস্ট্যান্ট যুক্তরাজ্যে খুবই সম্মানিত পোস্ট। নামের সাথে মিল রেখেই, তাদের কাজ Community level এ সার্ভিস দেওয়া, ফিজিওথেরাপি দেওয়া ইত্যাদি। একই উদ্দেশ্য নিয়ে বাংলাদেশেও এই পোস্ট তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু নাম হয়েছিল Sub Assistant Community Medical Officer (SACMO)।
সারা বাংলাদেশে বর্তমানে সরকারি ম্যাটস আছে ১১টি। যেখানে ছাত্রছাত্রী ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে চান্স পায়। ৩ বছরের তত্ত্বীয় পড়া এবং ১ বছরের ইন্টার্নি শেষে Diploma in Medical Faculty (DMF) সার্টিফিকেট বাংলাদেশ রাষ্ট্রীয় চিকিৎসা অনুষদ কর্তৃক প্রদান করা হয় এবং বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (BM & DC) কর্তৃক পেশাদার রেজিস্ট্রেশন দেওয়া হয়।
লেখক: শিক্ষার্থী, লোকপ্রশাসন বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও সাবেক শিক্ষার্থী ঝিনাইদহ ম্যাটস।