ক্যাম্পাস সাংবাদিকতার সীমাবদ্ধতা কোথায়?

এসএম নাদিম মাহমুদ
এসএম নাদিম মাহমুদ

বাংলাদেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যারা সাংবাদিকতা করেন, সেইসব বিশ্ববিদ্যালয়ের সিংহভাগ ক্যাম্পাস প্রতিনিধি গণযোগযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে আসে। পড়াশুনার পাশাপাশি হাতে কলমে প্রশিক্ষণের সবচেয়ে বড় সুযোগ পায় তারা। ফলে স্নাতক/স্নাতকোত্তর শেষে যারা সাংবাদিকতায় আসে তারা সাংবাদিকতায় অনেক ভাল করে।

ক্যাম্পাস সাংবাদিকতায় তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের আনাচে কানাচে ঘটে যাওয়া ঘটনা বেশ সাহসিকতার সাথে পরিবেশন করার সুযোগ পেলেও যেসব ছেলে-মেয়েরা গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে আসে তারা সব সময় নিজ বিভাগের নেতিবাচক ঘটনা সংবাদ মাধ্যমে তুলতে ভয় পায়, কিংবা প্রকাশ করার ইচ্ছে থাকলেও এক ধরনের পরোক্ষ বাধা পায়। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, ছাত্রত্বকালিন এই সাংবাদিকতায় কেউ যদি নিজ বিভাগের বিরুদ্ধে সংবাদ করে, তারা আবার নানা সময় একাডেমিক হেনেস্তার শিকার হোন।

ক্লাস, পরীক্ষা, আসানমেন্টে এইসবের কারণে মুক্ত সাংবাদিকতায় তারা এক ধরনের বাধা পায়। ছাত্র যখন ক্যাম্পাসে সাংবাদিকতা করে কখনো কখনো আবার শিক্ষকদেরই এক ধরনের প্রভাব সেখানে বিস্তার করে। ফলে বাতির নীচে অন্ধকার বছরের পর বছর ধরে চলে আসছে। 

সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের এক শিক্ষকের নামে যেসব অভিযোগ উঠেছে তা মূলত দেয়ালে গা ঠেকে যাওয়ার পর গণমাধ্যমে আসছে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন করা যেতেই পারে। অথচ এই বিভাগের অনেক শিক্ষার্থীই সাংবাদিক, অনেকই বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকদের বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগ গণমাধ্যমে সংবাদ পরিবেশ করে আসছে, কিন্তু নিজ বিভাগেই যে বছর পর বছর এমন শিক্ষক শিক্ষার্থীদের হেনেস্তা করছে, তা জানার পরও মুখ বুঝে সহ্য করে আসছে। কারণ একটায় তাহলো, একাডেমিক ফলাফলের উপর শিক্ষকদের প্রভাব।

এরপরও তারা সব ভয় উপেক্ষা করে রাস্তায় নেমেছে, তার জন্য অবশ্যই সাধুবাদ জানাই। তারা যদি নিজেদের সংবাদ পরিবেশন করতে না পারে, তাহলে জাতির সংবাদ পরিবেশনের দায়িত্ব কীভাবে নেবে? 

নিজের ছাত্ররা গণমাধ্যমে কাজ করে, এই দাপটে কেউ যদি বছর পর বছর অন্যায় করে আসে, আর সেটি জানার পরও গণমাধ্যমে না তুলতে পারা ক্যাম্পাস সাংবাদিকতার বড় সীমাবদ্ধতা। অথচ আমাদের শিক্ষকরা ক্লাসে সংবাদ পরিবেশনে নির্ভীকতার, বস্তুনিষ্ঠতার শিক্ষা দিয়ে আসছেন। কিন্তু তাদের ঘরেই যে, সংবাদের উপাদান থাকতে পারে সেটি জানতে কিংবা জানাতে এক ধরনের পিছুটান থাকছে, যা মুক্ত সাংবাদিকতার বড় বাধা।

ক্যাম্পাসের সাংবাদিকতা আর ছাত্রত্বকে গুলিয়ে ফেলা উচিত নয়। সাংবাদিক মানে হলো পেশাদারিত্ব যা দেশের আর দশটি সাংবাদিকের মতই তার সম্মান প্রাপ্য। ক্লাসে যেমন সে ছাত্র হতে পারে, ক্লাসের বাহিরে সে পেশাদার সাংবাদিক তা আমাদের শিক্ষকদের ভাবতে হবে। ক্যাম্পাস সাংবাদিকদের এই ভয়ের স্থানটি শিক্ষকরা দূর করবেন। যে অপরাধী, অভিযুক্ত তার সংবাদমূল্যে যেমন থাকবে তেমনি শ্রেণি শিক্ষক হলেও তার সংবাদ মূল্যের কেন রকমফের হওয়া উচিত নয়।

আশাকরি, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সম্মানিত শিক্ষকরা তাদের ছাত্রদের আরও পেশাদারিত্বের সুযোগ তৈরি করে দিবেন। নিজের বিভাগের ইতিবাচক ও নেতিবাচক সংবাদ পরিবেশনের মধ্যে দিয়ে শ্রেণি শিক্ষার বাস্তবরুপ দিতে সহায়তা করবেন।

লেখক: পিএইচডি গবেষক, ওসাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাপান


সর্বশেষ সংবাদ