ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় ঢাকা কলেজের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ
১৮২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী সোমবার
- মোঃ শাহাদাত হোসাইন
- প্রকাশ: ১৯ নভেম্বর ২০২৩, ০৪:০১ PM , আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০২৩, ০৪:১৯ PM
ভারতীয় উপমহাদেশের উচ্চ শিক্ষার অন্যতম প্রাচীন বিদ্যাপীঠ ঢাকা কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৪১ সালের ২০ নভেম্বর। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই এই অঞ্চলের শিক্ষা উন্নয়নে ঢাকা কলেজ ভূমিকা রেখে চলছে। তারই সোনালী ফসল হিসেবে ১৯২১ সালে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সৃষ্টি। তৎকালীন কার্জন হল, শহীদুল্লাহ হল (ঢাকা হল), জমি এবং নিজস্ব শিক্ষক-ছাত্র ইত্যাদি প্রদানের মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় ঢাকা কলেজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ভাষা আন্দোলন, মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ সহ বিভিন্ন সময়ে জাতির ক্রান্তিকালে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা তাদের জীবন বিলিয়ে দিয়েছে। ২১ ফেব্রুয়ারি ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ যখন ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিল করার পরিকল্পনা গ্রহণ করে তখন ১৪৪ ধারা ভঙ্গকারী প্রথম দলের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী ছিলেন ঢাকা কলেজের মেধাবী শিক্ষার্থী ইকবাল আনসারী খান। পরবর্তীতে ১৯৭১ সালে তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধেও অংশগ্রহণ করেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে শাহাদাত বরণ করা ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে অন্যতম হলেন নজিম উদ্দিন খান খুররম। পরবর্তীতে এই সূর্য-সন্তানের নামে ঢাকা কলেজ অডিটোরিয়ামের নামকরণ করা হয়েছে ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ আবু নঈম মুহাম্মদ নজিম উদ্দিন খান খুররম অডিটোরিয়াম’।
বিভিন্ন অঙ্গনে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের অবদান অনস্বীকার্য। বুদ্ধদেব বসু, হুমায়ুন আজাদ, আবদুর রাজ্জাক (অধ্যাপক), আবদুল গাফফার চৌধুরী, হুমায়ূন আহমেদ, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ, সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ, কাজী মোতাহার হোসেন, শেখ কামাল, শেখ জামাল, আব্দুর রউফ (কমান্ডার), আব্দুর রাজ্জাক (রাজনীতিবিদ), আব্দুল করিম (মৃত্তিকা বিজ্ঞানী), আব্দুল মতিন চৌধুরী (পদার্থবিদ), মোহাম্মদ ইব্রাহিম (বিচারপতি), জাফরুল্লাহ চৌধুরী, দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, নওয়াব আলী, মহাদেব সাহা, আসলাম তালুকদার মান্না (অভিনেতা) সহ অসংখ্য বরেণ্য ব্যক্তিদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঢাকা কলেজ যাদের সকলের নাম লিখতে গেলে লেখার কলেবর অনেক বেশি হয়ে যাবে।
বর্তমানে ঢাকা কলেজে প্রায় ২০ হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত রয়েছেন। বিশেষ করে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে বাংলাদেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠত্বের দাবিদার ঢাকা কলেজ। দেশের বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের কলেজ গুলোর মধ্যেও অন্যতম এই প্রতিষ্ঠান। প্রতিনিয়ত ঢাকা কলেজের গ্রন্থাগার এবং বিভিন্ন পাঠ কক্ষে জ্ঞানপিপাসু শিক্ষার্থীদের ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।
শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বের গুণাবলী, দক্ষতা, সৃজনশীলতা ইত্যাদি বৃদ্ধির লক্ষ্যে ঢাকা কলেজে কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে বিভিন্ন স্বনামধন্য সংগঠন। ঢাকা কলেজ ডিবেটিং সোসাইটি, ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ ক্লাব, ঢাকা কলেজ আবৃত্তি সংসদ, ঢাকা কলেজ সাংবাদিক সমিতি, বিএনসিসি, যুব রেড ক্রিসেন্ট, রোভার স্কাউট, বাঁধন (স্বেচ্ছায় রক্তদাতাদের সংগঠন), ঢাকা কলেজ সায়েন্স ক্লাব, মিউজিক স্কুল, কালচারাল ক্লাব, গ্রীন ভয়েস (পরিবেশবাদী সংগঠন) সহ বিভিন্ন সংগঠন সাফল্যের সাথে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এছাড়াও বিভিন্ন ছাত্র রাজনৈতিক সংগঠনের ব্যাপক সক্রিয়তা রয়েছে ঢাকা কলেজ চত্বরে।
১৮৪১ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে ১৮২ বছর যাবৎ এই অঞ্চলের শিক্ষাক্ষেত্রে তার অগ্রযাত্রা অব্যাহত রেখেছে ঢাকা কলেজ। তবে এখনো বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা বিশেষভাবে লক্ষণীয় এবং উদ্বেগজনক। পরীক্ষা চলাকালীন পর্যাপ্ত একাডেমিক ভবনের সংকট থাকায় কলেজের নিজস্ব একাডেমিক কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হয়। গবেষণা কার্যক্রমের জন্য প্রয়োজনীয় গবেষণাগার এবং বিভিন্ন উপকরণের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। গ্রন্থাগার এবং পাঠকক্ষ সমূহে শিক্ষার্থীদের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ আসনের ব্যবস্থা নেই। এছাড়া ছাত্রাবাস গুলোতেও বিভিন্ন সংকট বিদ্যমান। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত শিক্ষার্থীদের ছাত্রাবাসগুলোতে পর্যাপ্ত সিট না থাকার কারণে ক্যাম্পাসের বাইরে অধিক অর্থ ব্যয় করে অবস্থান করতে হয়।
বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের স্থায়ী অফিস কক্ষের ব্যবস্থা হয়নি এখনো। কিছু কিছু সংগঠনের অফিস কক্ষ থাকলেও সেখানে ব্যাপক সীমাবদ্ধতা পরিলক্ষিত হয়। বাংলাদেশের গৌরব ও ঐতিহ্যের প্রতীক ঢাকা কলেজের এ সকল সমস্যা সমাধানে যথাযথ কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
একই সাথে, ঢাকা কলেজের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ২০ নভেম্বরকে বাংলাদেশের জন্য জাতীয়ভাবে ‘উচ্চ শিক্ষা দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করার দাবি জানাচ্ছি। এতে করে ঢাকা কলেজের ইতিহাস, ঐতিহ্য, অবদান ইত্যাদি বিষয়ে সকলে জানতে পারবে এবং উচ্চ শিক্ষার গুরুত্ব জাতির সামনে সুন্দরভাবে উপস্থাপনের আরো একটি দুয়ার উন্মোচিত হবে।
লেখক: শিক্ষার্থী, ঢাকা কলেজ