১০০ বছরেও ঢাবি শিক্ষক নিয়োগে ন্যূনতম যোগ্যতা পিএইচডি হয়নি

কামরুল হাসান মামুন
কামরুল হাসান মামুন  © ফাইল ছবি

১০০ বছর পরেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক পদে নিয়োগের ন্যূনতম যোগ্যতা পিএইচডি হলো না। ১০০ বছর পরেও ১০০ বছর আগের মত সহকারী অধ্যাপক নিয়োগে এসএসসি এবং এইচএসসির রেজাল্ট দেখা হয়। অথচ এইসব দেখেই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করা হয়। যাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির যোগ্যতা আছে তারা কিভাবে এসএসসি এবং এইচএসসির রেজাল্টের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার অযোগ্য হয়?

১০০ বছর পরেও ১০০ বছর আগের মত ৮ কপি দরখাস্ত চাওয়া হয়, ব্যাংক ড্রাফট চাওয়া হয়। অথচ যা চাওয়ার কথা যেমন সিভি, ৩ জন প্রতিথযশা শিক্ষক/গবেষকের কাছ থেকে রেকমেন্ডেশন চাওয়া, টিচিং ও গবেষণা ফিলোসফির উপর স্টেটমেন্ট ইত্যাদি চাওয়া হয় না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তথা বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সহকারী অধ্যাপক নিয়োগের বিজ্ঞাপন কমেন্ট থ্রেডে। একটু দেখে নিয়েন।

এইবার পাশাপাশি ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সাইন্সের (ভারতের ১ নম্বর বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়) সহকারী অধ্যাপক নিয়োগের বিজ্ঞাপন দেখুন। সেখানে ন্যূনতম যোগ্যতা হলো পিএইচডি এবং ২ থেকে ৩ বছরের পোস্ট-ডক্টরাল অভিজ্ঞতা। চাওয়া হয়েছে স্টেটমেন্ট অফ রিসার্চ এবং টিচিং ফিলোসফির উপর স্টেটমেন্ট। চাওয়া হয়েছে প্রার্থীর রেকমেন্ডেশন লেটার দিতে পারে এমন ৩ জনের নাম ও ঠিকানা।  ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সাইন্স তথা বিশ্ববিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সহকারী অধ্যাপক নিয়োগের বিজ্ঞাপন কমেন্ট থ্রেডে। একটু চোখ বুলিয়ে নিয়েন।

ওয়ার্ল্ড রেঙ্কিং-এ ১ থেকে ৫০০ তে থাকা সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সাইন্সের বিজ্ঞপনের মতোই। এটাই এখন ইউনিভার্সাল নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি। তাহলে ১০০ বছরের আগের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির মত বিজ্ঞাপন দিয়ে আপনি কিভাবে ওয়ার্ল্ড র‌্যাংঙ্কিং-এ  ১ থেকে ৫০০-তে নেওয়ার মত বিশ্ববিদ্যালয় বানাবেন?

আরও পড়ুন: ঢাবিতে দুই বছর মেয়াদী প্রফেশনাল এমএ করার সুযোগ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ বা প্রমোশন নীতিমালার কোন পর্যায়ে পোস্ট-ডক্টরাল অভিজ্ঞতা জানতে চায় না। কারো থাকলে সেটা পুছে না। তাহলে কিভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে এই জাতি বিশ্বমানের ছাত্র শিক্ষক তৈরী করবে বলে আশা করব?

টিকে থাকতে হলে ক্রমাগত ভালো করতে হবে। ক্রমাগত ভালো করতে হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ ও প্রমোশনের নীতিমালা প্রতিনিয়ত উন্নত করতে হবে। অর্থাৎ উন্নত হওয়ার জন্য বিবর্তনের বিকল্প নেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রেও পরিবর্তন কিছুটা হয়েছে তবে সেগুলো খারাপের দিকে।

৭৩-এর অধ্যাদেশের সুবিধা নিয়ে শিক্ষক প্রোমোশনের নীতিমালাগুলোকে কেবল সহজ থেকে সহজতর করা হয়েছে। প্রমোশনকে এখন কেবল বেতন বৃদ্ধি হিসাবে দেখা হয়। অথচ এইটা হওয়া উচিত ছিল রিওয়ার্ড হিসাবে। দুনিয়াতে টিকে থাকার জন্য সবাইতো আর ‘‘একটু চালাক না হলে দুনিয়াতে টেকা মুশকিল’’ নিয়মে চলে না। দুনিয়াতে টিকে থাকার নিয়ম একটাই ‘সারভাইভাল অফ দা ফিটেস্ট’’! এটাই প্রথম এবং এটাই শেষ কথা।

লেখক: অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়


সর্বশেষ সংবাদ