চিকিৎসক হতে এসে শিক্ষাজীবন অনিশ্চিত ৫৮ বিদেশি মেডিকেল শিক্ষার্থীর

বাংলাদেশের মেডিকেল কলেজে বিদেশি শিক্ষার্থী
বাংলাদেশের মেডিকেল কলেজে বিদেশি শিক্ষার্থী  © ফাইল ছবি

২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে বাংলাদেশের বিভিন্ন বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়েছিল ৫৮ বিদেশি শিক্ষার্থী। গত বছরের মাঝামাঝিতে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়ে মাস ছয়েক ক্লাসও করছেন তারা। তবে সম্প্রতি নম্বর সমতাকরণ সনদ না থাকার অভিযোগ এনে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে তাদের নিজ দেশে ফেরত যেতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ফলে এসব শিক্ষার্থীদের চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন তো দূরের কথা, এখন শিক্ষাজীবনই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

আরও পড়ুন: মেডিকেল কলেজগুলোও ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বন্ধ: ডিজি

জানা গেছে, ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে দেশের ১১টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ৫২ জন ভারত আর বাকি ৬ জন নেপাল থেকে এসে ভর্তি হয়েছেন। এর আগে তারা নিজ দেশে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েই বাংলাদেশে আবেদন করেন। এরপর বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পান।

তাদের মধ্যে মার্কস মেডিকেল কলেজে তিনজন, ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজে চারজন, মুন্নু মেডিকেল কলেজে ৬ জন, ইস্ট-ওয়েস্ট মেডিকেল কলেজে ৯ জন, ইস্টার্ন মেডিকেল কলেজে ৬ জন, প্রাইম মেডিকেল কলেজে দুইজন, সেন্ট্রাল মেডিকেল কলেজে ৫ জন, মনোয়ারা সিকদার মেডিকেল কলেজে ৬ জন, সিটি মেডিকেল কলেজে তিনজন, বিজিসি ট্রাস্ট মেডিকেল কলেজে চারজন ও সাহাবউদ্দিন মেডিকেল কলেজে ১০ জন পড়াশোনা করছেন।

আরও পড়ুন: মেডিকেল কলেজের বাথরুমে ওড়না পেঁচানো ভারতীয় শিক্ষার্থীর মরদেহ

এদিকে, গত ১০ জানুয়ারি স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব বরাবর এক চিঠি দেয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এতে বলা হয়, ৫৮ জন বিদেশি শিক্ষার্থীর নম্বর সমতাকরণ সনদ ছাড়াই ভর্তি হয়েছেন। এই চিঠি পেয়ে ১৮ জানুয়ারি স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালককে চিঠি দেয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়।

সেখানে উল্লেখ করা হয়, ৫৮ বিদেশি শিক্ষার্থীকে নিয়ম বহির্ভূতভাবে ১১ বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি করা হয়। তাই তাদের নম্বর সমতাকরণ সনদ ইস্যুর সুযোগ নেই। চিঠিতে এসব শিক্ষার্থীকে নিজ নিজ দেশে পাঠাতে নির্দেশ দেওয়া হয়। একই সঙ্গে নিয়ম বহির্ভূতভাবে শিক্ষার্থী ভর্তি করায় এসব কলেজকে কারণ দর্শানোর নোটিসও দেওয়া হয়।

আরও পড়ুন: বছরজুড়ে শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যায় ভারাক্রান্ত শিক্ষাঙ্গন

এদিকে, মন্ত্রণালয়ের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে নোটিসের জবাবও দিয়েছে সংশ্লিষ্ট কলেজগুলো। জবাবে কলেজগুলো এই বিদেশি শিক্ষার্থীদের নম্বর সমতাকরণ সনদ ইস্যুর অনুরোধ করেছে।

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. এ কে এম আহসান হাবিব বলেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে বিদেশি ৫৮ শিক্ষার্থীর নম্বর সমতাকরণ সনদ না থাকার বিষয়টি জানতে পারি। এরপর স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে তাদের নিজ দেশে ফেরত যাওয়ার নির্দেশ দেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

মেডিকেল কলেজ সংশ্লিষ্টরা জানান, করোনার কারণে বাংলাদেশ দূতাবাস প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টগুলো যথাসময়ে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতরে পৌঁছে দিতে পারেনি। ফলে নম্বর সমতাকরণ সনদ যথাসময়ে দিতে ব্যর্থ হয়েছে তারা। এ ব্যর্থতার দায় শিক্ষার্থীরা কেন নেবে? 

ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজের চেয়ারম্যান প্রীতি চক্রবর্তী বলেন, অনেক শিক্ষার্থী লোন নিয়ে বাংলাদেশে পড়তে এসেছেন। করোনার কারণে তাদের সনদ পেতে দেরি হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে তাদের ফিরিয়ে দিলে সেটি হবে অমানবিক।

এই পরিস্থিতিতে সমস্যার সমাধান চেয়ে বাংলাদেশে দেশে পড়াশোনার সুযোগ দাবিতে গত ২৩ জানুয়ারি ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশনে আবেদন করেছেন কয়েকজন ভারতীয় শিক্ষার্থী। আবেদনে তারা বলেন, আবেদনের সঙ্গে যথাসময়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিয়েছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত নম্বর সমতাকরণ সনদ পাইনি। কিন্তু মন্ত্রণালয়ের জারি করা চিঠিতে নিজ দেশে ফেরত যেতে বলা হয়েছে। আমরা বাংলাদেশে পড়াশোনা অব্যাহত রাখতে চাই।


সর্বশেষ সংবাদ