এমবিবিএস ভর্তি
ভারতীয় শিক্ষার্থীদের ভর্তি জটিলতা নিরসন চায় দূতাবাস
- খাঁন মুহাম্মদ মামুন
- প্রকাশ: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ০৫:৫৪ PM , আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ০৫:৫৪ PM
দেশের সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে এমবিবিএস ও বিডিএস কোর্সে ভর্তিচ্ছু ভারতীয় শিক্ষার্থীদের ভর্তি বিষয়ক জটিলতা নিরসন চেয়েছে ভারতীয় দূতাবাস। বুধবার (২৬ এপ্রিল) এ নিয়ে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের চিকিৎসা শিক্ষা বিভাগ।
দূতাবাসের ওই চিঠির বিষয়ে প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষ থেকে বাংলাদেশের সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ডেন্টাল কলেজ/ডেন্টাল ইউনিটে ভর্তির ক্ষেত্রে বায়োলজিতে জিপিএ ৪.০০ নির্ধারণ করা হয়েছে। পূর্ববর্তী শিক্ষাবর্ষে বায়োলজিতে জিপিএ ৩.৫০ নির্ধারিত ছিল। পূর্ববর্তী শিক্ষাবর্ষের নিয়ম অনুসরণ করে ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে ভর্তিচ্ছু ভারতীয় প্রায় ২,০০০ শিক্ষার্থী বায়োলজিতে জিপিএ ৩.৫০ এর ভিত্তিতে বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে সিট কনফার্ম করার জন্য ইতোমধ্যে ১৫,০০০-২৫,০০০ মার্কিন ডলার পরিশোধ করেছেন। কিন্তু ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষ থেকে নতুন ভর্তি নীতিমালা কার্যকর হওয়ায় এবং উক্ত ভর্তি নীতিমালায় বায়োলজিতে জিপিএ ৪.০০ নির্ধারণ করায় বর্ণিত ২,০০০ শিক্ষার্থীর মধ্যে প্রায় ২০০ শিক্ষার্থী ভর্তির অযোগ্য হয়ে পড়েছেন।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ভারতীয় দূতাবাস হতে এসকল শিক্ষার্থী ভর্তির প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অথবা তাদেরকে ভর্তি করা সম্ভব না হলে তাদের পরিশোধিত অর্থ ফেরত প্রদানের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে। গতমাসের শেষের দিকে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের এ চিঠি দেয় দূতাবাস। চলতি মাসের ৯ তারিখ এ চিঠি গ্রহণ করে মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্টরা।
প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়েছে, বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে সরকার অনুমোদিত একটি সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা রয়েছে। উক্ত সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী শিক্ষার্থী ভর্তি সম্পন্ন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। উক্ত পরিকল্পনা অনুযায়ী বিদেশি শিক্ষার্থীদের আবেদন দাখিলের পর স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর নম্বর সমতাকরণ করে আগামী মাসের ৩০ তারিখের মধ্যে মধ্যে নম্বর সমতাকরণের তালিকা সকল মেডিকেল কলেজে এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সকল দূতাবাসে প্রেরণ করবে।
এছাড়াও সবকিছু ঠিক থাকলে সরকার আগামী জুনের ২৭ তারিখের মধ্যে বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন করতে চায় জানিয়ে ওই প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়েছে, ভর্তি-কালীন সময়ে টিউশন ফি’সহ অন্যান্য ফি সংশ্লিষ্ট মেডিকেল কলেজে গ্রহণ করবে; বিদেশি শিক্ষার্থীদের নম্বর সমতাকরণের পূর্বেই ফি গ্রহণের বিষয়টি বিধি সম্মত নয়।
দেশের চিকিৎসা শিক্ষায় ভর্তিচ্ছু ভারতীয় শিক্ষার্থীদের ভর্তি বিষয়ক জটিলতা নিরসনের লক্ষ্যে ভারতীয় দূতাবাস কর্তৃক বর্ণিত বিষয়াবলির বিষয়ে মতামত প্রেরণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হল—সংযুক্তি জানানো হয়েছে ওই প্রজ্ঞাপনে।
প্রসঙ্গত, দেশের চিকিৎসা শিক্ষার অন্যতম তদারক সংস্থা বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) এবারের ভর্তি নীতিমালায় জানানো হয়েছিল, ভর্তিচ্ছু প্রার্থীকে এসএসসি বা ও’লেভেল বা সমমান পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগে উত্তীর্ণ হইতে হইবে এবং এইচএসসি বা এ লেভেল বা সমমান পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগসহ অবশ্যই পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন এবং জীববিজ্ঞান থাকতে হবে। একইসাথে জীববিজ্ঞানে (Biology) ন্যূনতম জিপিএ ৪.০০ পয়েন্ট থাকতে হবে বলেও জানানো হয়েছে নীতিমালায়। যা অনুসরণ করা হবে দেশি এবং বিদেশি ভর্তিচ্ছুদের মেডিকেল ভর্তিতে।
তবে, বিদেশি শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে অনুসরণ করা হবে নম্বর সমতা-বিধান। অর্থাৎ, শিক্ষার্থীর প্রাপ্ত নম্বরের সমতা-বিধান করে তা চলমান জিপিএ ৪.০০ এর সমান হলে তা গ্রহণ করা হবে। উল্লেখ্য, এবছরই জিপিএ ৪.০০ এর শর্ত বেঁধে দেওয়া হয়েছে, যা বিগত বছরগুলোতে ছিল ৩.৫। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে চিকিৎসা শিক্ষায় উচ্চতর পড়াশোনার জন্য ৬০ শতাংশ এবং নেপালে ৭০ শতাংশ বা জিপিএ ৩ দশমিক ৫ এর সমান থাকতে হয়।
বিএমডিসির এ সিদ্ধান্তে শুরু থেকে আপত্তি জানিয়েছে বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিএমসিএ)। তারা বলছে, জীববিজ্ঞানে (Biology) ন্যূনতম জিপিএ ৪.০০ পয়েন্ট থাকার শর্তে বিদেশি শিক্ষার্থীরা নিরুৎসাহিত হবে। ভারত এবং নেপালের উদাহরণ দিয়ে সংগঠনটির দাবি, সেখানে জিপিএ ৩.০০ পয়েন্ট থাকলেই শিক্ষার্থীরা ভর্তি কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে পারে। তাহলে, নতুন করে বেশি শর্ত বা যোগ্যতা নিয়ে কেন তারা বাংলাদেশে পড়তে আসবে; এছাড়াও, তার বেশি যোগ্যতা থাকলে তো সে সেখানকার মেডিকেলগুলোতেই পড়বে—বলেও অভিমত তাদের। বিপিএমসিএ’র দাবি এসব শর্তের বেড়াজাল থেকে বেরিয়ে সহজ করতে হবে মেডিকেল ভর্তি প্রক্রিয়া একই সাথে যেকোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণে শুনতে হবে অংশীজনদের মতামতও।
এ নিয়ে বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) জানিয়েছিল, তারা চিকিৎসা শিক্ষার উন্নয়নে কাজ করছে; এখন বিএমডিসি মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে নতুন করে বিভিন্ন শর্ত যুক্ত এবং বেসরকারি মেডিকেলে ভালো শিক্ষার্থীদের ভর্তি নিশ্চিত করতেই জিপিএ’র শর্ত এবং মেরিট লিস্টের শুরু দিকের শিক্ষার্থীদের নেওয়ার শর্ত দিয়েছে। সংস্থাটি বলছে, দেশের চিকিৎসা শিক্ষার মান উন্নয়নে পরিবর্তন প্রয়োজন ছিল এবং তা করা হচ্ছে।
এছাড়াও চলতি বছর দেশে মেডিকেল ভর্তিতে সরকারের পক্ষ থেকে নতুন নির্দেশনায় নানা পরিবর্তনের কথা জানানো হয়েছিল। শুরু থেকে এ বিষয়ে বিস্তারিত না জানানো ও নতুন নীতিমালায় কঠিন শর্ত যুক্ত করার ফলে চিকিৎসা শিক্ষায় আগ্রহী শিক্ষার্থীরা তাদের ভর্তি নিয়ে নানা জটিলতায় পড়ে।