মেডিকেলে প্রশ্নফাঁস: ‘থ্রি ডক্টরস’ ও ১২ শিক্ষার্থী নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য

প্রশ্নফাঁস
প্রশ্নফাঁস  © ফাইল ছবি

মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় খুলনার থ্রি ডক্টরস কোচিং সেন্টার এবং ১২ জন মেডিকেল শিক্ষার্থীর নাম এসেছে। কোচিং সেন্টার ও শিক্ষার্থীদের নাম আসায় তদন্তে নতুন মোড় নিয়েছে। বেরিয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য। মেডিকেলের প্রফেশনাল পরীক্ষায় পাস করতে হিমশিম খাওয়া এসব শিক্ষার্থীর বিষয়ে নানা তথ্য পেয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

জানা গেছে, খুলনার থ্রি ডক্টরস কোচিং সেন্টারের মালিক সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ডা. ইউনুসুজ্জামান খান তারিম। তিনি প্রশ্নপত্র ফাঁসের মাধ্যমে নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের মেডিকেলে ভর্তি করেছেন। বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে তার ব্যাংক হিসাব ইতোমধ্যে জব্দ করা হয়েছে। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, খুলনা মেডিকেল কলেজের অর্থপেডিক্স বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার ডা. ইউনুসুজ্জামান খান তারিম ও তার পরিচালিত খুলনা থ্রি ডক্টরস কোচিং সেন্টারের মাধ্যমে প্রশ্ন পেয়ে অসংখ্য শিক্ষার্থী বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়েছেন। আলোচিত এ তারিমকে আগেই জিজ্ঞাসাবাদ করেছে সিআইডির তদন্ত দল। তার ৩৫টি ব্যাংক হিসাবে প্রায় ২৫ কোটি টাকার লেনদেনের তথ্য মেলার পর সেগুলো ফ্রিজও (স্থগিত) করা হয়। সম্প্রতি খুলনার থ্রি ডক্টরস কোচিং সেন্টার সংশ্লিষ্ট ছয়জন চিকিৎসককে ঢাকায় সিআইডি কার্যালয়ে তলব করা হয়। এদের মধ্যে তিনজন জিজ্ঞাসাবাদে প্রশ্নপত্র ফাঁসের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। 

সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিটের কাছে লিখিত জবানবন্দি দেওয়া তিন চিকিৎসক থ্রি ডক্টরস কোচিং সেন্টারের সাবেক শিক্ষক। তার জবানবন্দীতে তিনি জানিয়েছেন, ২০১৫-১৬ সেশনে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় জাতীয় মেধায় ১১তম হওয়া মুসতাসিন হাসান লামিয়া ডা. তারিমের কাছ থেকে প্রশ্নপত্র পেয়ে খুলনা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়েছেন। লামিয়ার বিষয়ে থ্রি ডক্টরস কোচিং সেন্টারের সাবেক আরও দুই শিক্ষক জবানবন্দি দিয়েছেন। 

মুসতাসিন হাসান লামিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, তার এসএসসি ও এইচএসসির রেজাল্ট ভালো। ডা. তারিমের স্পেশাল ব্যাচে তিনি পড়তেন। তিনি দ্বিতীয়বারের চেষ্টায় কঠোর পরিশ্রম করে মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষায় পাস করেছেন। কেউ তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন। কে এবং কেন ষড়যন্ত্র করছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, তার স্বামী খুলনায় কেমিস্ট্রির একজন জনপ্রিয় শিক্ষক। তার স্ত্রী হিসেবে মেডিকেলে চান্স পাওয়ায় অনেকের সহ্য হয়নি। তাই তারা মিথ্যা ছড়াচ্ছেন। তবে প্রশ্নপত্র ফাঁস করে তিনি ভর্তি হননি।

প্রশ্নপত্র ফাঁসের তদন্তে নাম উঠে আসা লামিয়াসহ বারও শিক্ষার্থীর নয়জনই খুলনা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী। দু’জন ঢাকা মেডিকেল কলেজের এবং একজন গোপালগঞ্জ মেডিকেল কলেজের। জাতীয় মেধায় ১১তম হওয়া লামিয়াসহ এসব শিক্ষার্থীর অন্তত পাঁচজনের একাডেমিক ফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ভর্তি পরীক্ষায় সর্বোচ্চ মেধার স্বাক্ষর রাখলেও পেশাগত পরীক্ষায় বারবার অকৃতকার্য হয়েছেন তারা। বারবার পরীক্ষা দিয়েও কেউ কেউ এখনো ডাক্তারই হতে পারেননি।

এ ছাড়া জবানবন্দিতে উঠে আসা ফারিয়া ইসলাম নিলয়, নাজিয়া মেহজাবীন তিষা, আনিকা তাহসিন জেসি ও রেমি ম-লের নাম রয়েছে। এদের মধ্যে লামিয়া এবং নিলয় শিক্ষা জীবনের চারটি পেশাগত পরীক্ষাতেই অকৃতকার্য হয়েছেন। একাধিকবার চেষ্টায় তারা থার্ড প্রফ অর্থাৎ চূড়ান্ত পেশাগত পরীক্ষায় পাস করে ডাক্তার হয়েছেন। অন্যদিকে আসমাউল হুসনা নিহা এবং শর্মিষ্ঠা ম-লও প্রতিটি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়েছেন। কিন্তু তাদের অবস্থা এতই খারাপ যে, পাস করে তারা এখনো ডাক্তারই হতে পারেননি। এ ছাড়া নাজিয়া মেহজাবীন তিষাও একাধিকবারের চেষ্টায় চূড়ান্ত পরীক্ষার বাধা পার হয়েছেন বলে অনুসন্ধানে উঠে এসেছে।

থ্রি ডক্টরস কোচিং সেন্টারের সাবেক শিক্ষক ও চিকিৎসক পুলিশের কাছে লিখিত জবানবন্দিতে বলেছেন, ‘তারিম ভাই লামিয়াকে ব্যক্তিগতভাবে পড়াতেন। লামিয়া জাতীয় মেধায় ১১তম স্থান লাভ করেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে ক্লাস পরীক্ষাগুলোতে ফেইল করতে থাকে। এ বিষয়টি খুলনায় ওপেন সিক্রেট। এ ছাড়া তারিম ভাইয়ের ব্যক্তিগত ব্যাচ থেকে অবৈধভাবে যারা চান্স পেয়েছে বলে জেনেছি এবং শুনেছি, তাদের মধ্যে খুলনা মেডিকেলের শর্মিষ্ঠমা ম-ল, আসমাউল নিহা, নাজিয়া মেহজাবিন তিশা, ফারিহা ইসলাম নিলয়, নূরে মার্জিয়া, জেসি এবং ঢাকা মেডিকেলের ফাইজা ও তার এক যমজ বোন রয়েছে।’

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ডা. ইউনুসুজ্জামান খান তারিম বলেন, তার কোচিং সেন্টারটি জনপ্রিয়। ১৭ বছর ধরে তার ব্যাংক অ্যাকাউন্টগুলোয় সাড়ে ১২ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। একটি জনপ্রিয় কোচিং সেন্টারে এই টাকা লেনদেন হওয়া তো অস্বাভাবিক কোনো বিষয় নয়। সব ধরনের নিয়ম মেনেই এ লেনদেন হয়েছে। বিগত সময় চারটি সংস্থা তার বিরুদ্ধে তদন্ত করেছে। অস্বাভাবিক কিছু পায়নি। তিনি কোনোভাবেই প্রশ্নফাঁসের সঙ্গে জড়িত নন। 

তা হলে তার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, তার কোচিং সেন্টারটি জনপ্রিয় হয়ে উঠায় অন্যরা ষড়যন্ত্র করছে। অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই। সিআইডির তদন্তও তিনি নির্দেশ প্রমাণিত হবেন বলে জানান।

জানতে চাইলে সিআইডির ফিন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিটের বিশেষ পুলিশ সুপার হুমায়ূন কবীর বলেন, দীর্ঘ তদন্তের পর মামলাটি চার্জশিটের উপযোগী করে গুছিয়ে আনা হয়েছে। এখন চলছে শেষ মুহূর্তের যাচাই-বাছাই। তদন্তে মূলহোতাসহ চক্রটির প্রায় সব স্তরের সদস্যকেই চিহ্নিত করা হয়েছে।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence