বাস্তবে গোয়ালঘর, তবুও হলো জাতীয়করণ!

কাগজে-কলমে স্বতন্ত্র এবতেদায়ী মাদ্রাসা

পশ্চিম চরসামাইয়া এবতেদায়ী স্বতন্ত্র মাদ্রাসা
পশ্চিম চরসামাইয়া এবতেদায়ী স্বতন্ত্র মাদ্রাসা  © টিডিসি ফটো

নেই জানালা-দরজা, নেই শ্রেণিকক্ষ কিংবা অফিস কক্ষ। বহুদিন ধরে পাঠদান বন্ধ, অথচ সরকারি খাতায় এখনো চালু রয়েছে মাদ্রাসাটি! ভোলার সদর উপজেলার চরসামাইয়া ইউনিয়নের পশ্চিম চরসামাইয়া এবতেদায়ী স্বতন্ত্র মাদ্রাসা বাস্তবে নেই, কিন্তু পেয়েছে জাতীয়করণ (এমপিওভুক্তি)।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, যে ঘরটিকে মাদ্রাসা বলা হচ্ছে, তা দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে রূপান্তর হয়েছে গোয়ালঘরে। কোনো শিক্ষক-শিক্ষার্থী নেই, নেই কোনো পাঠদান কার্যক্রম, শুধু পড়ে আছে ঝুপড়ি মতো দুইচালা টিনের ঘর, যেখানে গরু-ছাগল রাখা হয়। অথচ সরকারি নথিতে এই প্রতিষ্ঠানটিকে সক্রিয় দেখানো হয়েছে এবং সম্প্রতি এটি এমপিওভুক্ত হয়েছে!

মাদ্রাসাটির সামনে দেখা হয় অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী শামিমের সঙ্গে। প্রশ্ন করা হয়, এই মাদ্রাসার ছাত্র ছিলে? উত্তরে সে বলে, আমার জন্মের পর কখনো খুলতেই দেখিনি, এখানে পড়ব কীভাবে?  

পাশের গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র কাইয়ুম জানায়, আমি তো কখনো এই মাদ্রাসা খোলা দেখিনি। এখানে তো গরু রাখা হয়!

স্থানীয়দের দাবি, বছরের পর বছর এই মাদ্রাসাটি বন্ধ থাকলেও কাগজে-কলমে নিয়মিত পাঠদান দেখানো হয়েছে।  

গত বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) চরসামাইয়া এলাকায় গিয়ে এই মাদ্রাসার খোঁজ পেতে বেগ পেতে হয় প্রতিবেদককে। স্থানীয়দের কাছে এই নামে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নেই। অবশেষে একজন বৃদ্ধ পথচারীর সহায়তায় একটি পরিত্যক্ত ঘরের সন্ধান মেলে, যা আসলে গরু-ছাগলের থাকার জায়গা।  

সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে ছুটে আসেন প্রধান শিক্ষক রুবিনার ভাই ও ভ্রাতুষ্পুত্র। তারা জানান, জাতীয়করণের খবর তারাও জানতেন না! পরে প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি একজন রাজনৈতিক নেতার দোহাই দিয়ে সংবাদ প্রকাশ না করার অনুরোধ জানান।  

তিনি বলেন, আমি মিথ্যা বলবো না ভাই। দীর্ঘদিন পাঠদান বন্ধ ছিল, কিন্তু কাগজে-কলমে চলমান দেখানো হয়েছে। আমি তো একা মানুষ, আন্দোলনেও যেতে হয়, অফিসও ম্যানেজ করি, সবই একা সামলাই। অন্য শিক্ষকদের কোনো খোঁজখবরই নেই। 

তিনি আরও বলেন, সরকার অনেক কষ্টে একটা সুযোগ দিয়েছে, এখানে লিখালেখি করে আমাদের ক্ষতি করবেন না। আগামী সপ্তাহে ঘর পুনঃনির্মাণ করবো, কিন্তু বই না পেলে ছাত্র পাবো কোথা থেকে?

এ বিষয়ে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সজল চন্দ্র শীল বলেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখে খুব দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জেলা শিক্ষা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) খন্দকার ফজলে গোফরান বলেন, এই নামে কোনো মাদ্রাসা আছে, সেটাই আমি এই প্রথম শুনলাম! এমন প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ হতে পারে না। যদি আপনার কাছে তথ্য-প্রমাণ থাকে, তাহলে আমি সরেজমিনে তদন্ত করবো।

প্রসঙ্গত, আন্দোলনকারী শিক্ষাকদের জমা দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, দেশে মোট ১৫১৯টি স্বতন্ত্র এবতেদায়ী মাদ্রাসা রয়েছে, যা সরকারের পক্ষ থেকে অনুদান পেয়ে থাকে। এসব মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষকরা প্রতি মাসে ৫ হাজার টাকা এবং সহকারী শিক্ষকরা ৩ হাজার টাকা অনুদান পান। তবে, এছাড়া আরও ৫ হাজার ৯৩২টি মাদ্রাসা রয়েছে, যেগুলো সরকারি কোনো অনুদান বা সুবিধা পায় না।

স্থানীয়দের দাবি— যেখানে যুগের পর যুগ গোয়ালঘর ছিল, সেখানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আদেশ কীভাবে এল? এভাবে জাতীয়করণ দেশের শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে প্রতারণা সামিল।


সর্বশেষ সংবাদ