মাদ্রাসা মাঠে আলু চাষ, খেলাধুলার সুযোগ বঞ্চিত শিক্ষার্থীরা
- ভোলা প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৫৬ PM , আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৫৯ PM
ভোলার চরফ্যাশনে ওসমানগঞ্জ ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসা মাঠে আলু চাষের অভিযোগ উঠেছে ওই মাদ্রার সুপার মাওলানা আবদুল বাতেন ও জমিদাতার ছেলে গিয়াস উদ্দিনের বিরুদ্ধে। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, প্রতিষ্ঠান সুপার খেলার মাঠ চাষ দিয়ে আলু চাষাবাদের জন্য প্রস্তুত করছেন।
সম্প্রতি সময়ে ট্রাক্টর দিয়ে ওই মাদ্রাসা মাঠে আলু চাষের জন্য প্রস্তুত করা হলে গ্রাম জুড়ে তোলপার শুরু হয়। তার মনগড়া সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকগণ। মাদ্রাসা মাঠে আলু চাষ করায় খেলাধুলা বঞ্চিত হচ্ছে ওই মাদ্রাসার অধ্যয়নরত প্রায় পাচঁশত শিক্ষার্থী।
জানা যায়, ১৯৮১ সালে ওসমানগঞ্জ ইউনিয়নের লতিফ মিয়ার হাট সংলগ্ন এলকায় স্থানীয় দানবীর মৃত হাজী আবদুল লতিফ মিয়ার প্রচেষ্টায় এক একর জমির ওপর ওসমানগঞ্জ দাখিল মাদ্রাসা নামের একটি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠানটি ১৯৮৬ সালে এমপিও ভুক্ত হয়েছে। ওই মাদ্রায় ইফতেদায়ী থেকে দাখিল পর্যন্ত প্রায় পাচঁশত শিক্ষার্থী রয়েছে।
এছাড়াও ওই এলাকায় আর কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা খেলার মাঠ না থাকায় মাদ্রাসা শিক্ষর্থীরা ছাড়াও স্থানীয় যুবকরা ওই মাঠে লেখাধুলা করতেন। গত কয়েক দিন আগে মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির তোয়াক্কা না করে মাদ্রাসার সুপার ও জমিদাতার ছেলে গিয়াস উদ্দিন ওই মাদ্রাসা মাঠে আলু চাষ করার জন্য হাল-চাষ দিয়ে প্রস্তুত করেন।
বিষয়টি নজরে এলে ক্ষুব্দ হয়ে উঠেন ওই এলাকার শিশু কিশোররা। দ্রুত সময়ের মধ্যে মাদ্রাসা মাঠে আলু চাষ করা বন্ধ করে খেলাধুলার জন্য মাঠটিকে উম্মুক্ত করার দাবী জানান।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মাদ্রাসা মাঠে চাষ দিয়ে আলু চাষের জন্য প্রস্তুত করা হয়। মাদ্রাসা মাঠের চার দিকে নেটের ভেড়া দিয়ে দৃষ্টি নন্দন সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দিয়ে লেখে দেয়া হয় মাদ্রাসা মাঠে গরু চড়ানো ও খেলাধুলা করা নিষেধ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক শিক্ষার্থীরা জানান, মাদ্রাসার মাঠে খেলাধুলা করতে না পেরে বিপাকে পরেছেন তারা। মাদ্রাসার সুপারের খামখেয়ালীতে মাঠে আলু চাষ করা হচ্ছে। এতে খেলাধুলা বঞ্চিত হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থী মিরাজ ও শান্ত জানান, এলাকার স্কুল, মাদ্রাসা ও কলেজে পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা তাদের অবসর সময়ে খেলাধুলা করে। খেলাধুলাও পড়া লেখার একটি অংশ। শিক্ষার্থীরা খেলতে না পারলে তারা অনলাইন গেমসে আসক্ত হতে পারেন। এতে সমাজ ধ্বংসের দিকে যাবে। খেলার মাঠ ফিরিয়ে দিয়ে ওসমানগঞ্জ ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার মাওলানা আবদুল বাতেনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান তারা।
স্থানীয় বাসিন্ধরা জানান, প্রতিষ্ঠানের খেলার মাঠ নিয়ে তিনি ব্যবসা করেন। এই মাঠে বর্ষার সিজনে ধান চাষ করা হয়েছে। এখন আলু চাষ করার জন্য ট্রাক্টর দিয়ে মাঠে চাষ দেওয়া হয়েছে। শিশু শিক্ষার্থীসহ ক্রীড়া প্রেমীদের খেলাধুলা থেকে বঞ্চিত করার জন্যই মাদ্রাসার সুপার মাওলানা আবদুল বাতেন ও দাতা সদস্যের ছেলে গিয়াস উদ্দিন মাদ্রাসা মাঠে আলু চাষের সিদ্ধান্ত নেন। বিষয়টি স্থানীয় মানুষের দৃষ্টিতে পড়লে চাষ আবাদ বন্ধ করে দিবেন বলে জানান তিনি।
জমিদাতার ছেলে গিয়াস উদ্দিন জানান, মাঠের চার দিকে কিছু সৌন্দর্য বর্ধন গাছ লাগানো হয়েছে। বাহিরাগত ছেলেরা মাদ্রায় খেলাধুলা করতে এসে গাছ গুলো নষ্ট করে দেয়। তাই তারা গাছ গুলো রক্ষা করতে মাঠটিতে মাটি খুড়েছেন। যাতে গরু ছাগল ও বহিরাগতরা এসে গাছ গুলো নষ্ট করতে না পারে।
এই বিষয়ে ওসমানগঞ্জ ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার মাওলানা আবদুল বাতেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, শিক্ষার্থীরা যাতে মাঠে খেলাধুলা না করতে পারে তাই মাঠ ট্রাক্টর দিয়ে চাষ দিয়েছে। তবে আলু চাষাবাদ করার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দিন জানান, মাদ্রাসা সুপার প্রতিষ্ঠানের মাঠে চাষ দিতে পারেন না। আমি বিষয়টি খতিয়ে দেখবো।
সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ আবুল হাছনাত জানান, এ বিষয়ে আমার জানা নেই। তবে কি কারণে প্রতিষ্ঠান সুপার খেলার মাঠ চাষ দিয়েছে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করলে জানা যাবে।