লিটলম্যাগে প্রশিক্ষিত লেখকদের আসা উচিত

  © সংগৃহীত

সাহিত্যের কাগজ ‘লোক’ এর ২০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ‘ছোটকাগজের লড়াই: বর্তমান পরিপ্রেক্ষিত’ শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন করা হয়। বুধবার (১৫ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় রাজধানীর পরিবাগে অবস্থিত সংস্কৃতি বিকাশ কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত এই সেমিনারে এমন কথাই বলেন বক্তারা।

দর্শন ও শিল্প-চেতনায় যারা গতানুগতিক ধারার বিরোধী, তারা তাদের চিন্তা-চেতনার প্রকাশ ঘটান নিজেদের সংঘটিত মুখপত্র লিটল ম্যাগাজিন। তবে একদিকে যেমন সে ধারার লেখক তৈরি হচ্ছে না, ঠিক তেমনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো লেখকদের করে দিচ্ছে ব্যক্তিবিচ্ছিন্ন। সে কারণেই ৬০ থেকে শূন্য দশকে লিটল ম্যাগাজিনের চর্চা উজ্জ্বল থাকলেও তার আলো এখন ম্লান বলে মনে করছেন বিশিষ্টজনেরা।

বিশিষ্ট লেখক সেলিম মোরশেদ এর সভাপতিত্বে সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কবি ও গদ্যকার সৈকত হাবিব। আলোচনা করেন সরকার আশরাফ, মারুফুল আলম, মনিরুল মনির, মুজিব মেহদী, জিললুর রহমান এবং এজাজ ইউসুফী।

মূল প্রবন্ধে কবি ও গদ্যকার সৈকত হাবিব বলেন, লিটলম্যাগের একটি আলাদা ভাষা, গরিমা, দ্রোহ, বিদ্রোহ থাকবে। তাকে একটি লড়াইয়েও অংশ নিতে হবে। অমনিবাস ভিত্তিক সাহিত্যগুলো যেখানে বণিকি উদ্দেশ্যে চলে, সেখানে ওই ধারা থেকে বের হয়ে আসার একটি প্লাটফর্ম হলো লিটলম্যাগ। বর্তমানে ফেসবুক, ব্লগ বা নিজস্ব ওয়েব পেইজও যেন একটি লিটলম্যাগ হয়ে উঠেছে। তবে এর ফলে আমাদের ব্যক্তিবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়াটা বেড়ে গেছে।

তিনি বলেন, প্রতিটি লেখক ও ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব, সাহস, শক্তি যখন একত্রিত হয়, তখনই লড়াইটা সম্ভব হয়। এই একত্রিত হওয়ার মাধ্যম কাগজ নাকি ইন্টারনেট, সেটি বড় কথা নয়। মূল বিষয় হলো একাত্মতা। আমরা যদি একত্রিত হই, তবেই লড়াইটা জমজমাট হবে, বাংলা সাহিত্য কিছু পাবে।

সরকার আশরাফ বলেন, আমরা সম্ভবত লিটলম্যাগ চর্চা থেকে সরে আসছি। এই ক্ষেত্রে তরুণদের আগমন এখন অনেক কম। তারা এখন লিটলম্যাগ করার থেকে অনলাইনে লেখা পোস্ট করতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। তা একটি সাংগঠনিক চিন্তার সঙ্গে মিললো কিনা, এখানে সেটি দেখার উপায় নেই। তবে অনলাইনেও যদি সম্মিলনটা করা যায়, সেটি আলাদা বিষয়।

মুজিব মেহদী বলেন, লেখক ও সম্পাদক দু'জনেরই স্বাধীনতা থাকতে হবে লিটলম্যাগে। প্রথাগত সাহিত্যের চর্চা নয়, বরং নতুন কিছু তৈরির আকাঙ্ক্ষা থেকেই এগিয়ে যেতে হবে সাহিত্যের এই ধারাটিকে।

অন্য বক্তারা বলেন, লিটলম্যাগ বা ছোট কাগজ হলো ছোট লেখকদের জন্য। এটি বাণিজ্যিকরণ লেখকদের জায়গা না। ছোট কাগজ তার নিজগুণেই ইতিহাসের অংশ হয়ে উঠেছে। আর আমরা যদি তার সঠিক যত্ন করতে না পারি, তবে তা নিজে থেকেই ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপিত হবে।

সভাপতি সেলিম মোরশেদ বলেন, লিটলম্যাগে মানুষ কম হলেও এই জায়গাটা সুন্দর। তবে আক্ষেপের ব্যাপার, পশ্চিমবঙ্গের লিটলম্যাগের মতো আমরা লিটলম্যাগের ধারাবাহিকতাটা রক্ষা করতে পারিনি। আবার জেলা শহর এবং ঢাকা, অবস্থানগতভাবে এই দুই জায়গার লিটলম্যাগের মধ্যেও কিছু বৈসাদৃশ্য বিদ্যামন। তবে কারোরই কাজ কম নয়।

তিনি বলেন, লিটলম্যাগের যে ধারা, সে অনুযায়ী বর্তমানে লেখক তৈরি হচ্ছে না। এজন্যই কমছে লিটলম্যাগের সংখ্যা। সেদিক থেকে এই সেক্টরে সবচেয়ে প্রশিক্ষিত লেখকদের আসা উচিত। তবেই এটি আবার সমৃদ্ধ জায়গায় পরিণত হবে।

সেমিনার শেষে অনুষ্ঠিত হয় ‘লোক’ সম্মাননা প্রাপ্তদের প্রতিক্রিয়া, মুক্ত আলোচনা এবং কবিতা পাঠ। এ আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন কবি ও লিটল ম্যাগাজিন ‘লোক’র সম্পাদক অনিকেত শামীম।


সর্বশেষ সংবাদ