যে কৌশলে টানা ৫ বিসিএসের প্রিলিতে উত্তীর্ণ স্বর্ণা

পরীক্ষার হল
পরীক্ষার হল  © এআই দিয়ে তৈরি

সাবিনা ইয়াছমিন স্বর্ণা। ৪৩তম বিসিএসে সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারে গেজেটভুক্ত হয়েছেন। বর্তমানে তিনি শেরপুর সরকারি কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ের প্রভাষক হিসেবে কর্মরত আছেন। তিনি ৪১তম বিসিএস থেকে শুরু করে টানা ৫টি বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। 

দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসের পাঠকদের জন্য সাবিনা ইয়াছমিন স্বর্ণা বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার কৌশল তুলে ধরেছেন। 

স্বর্ণা বলেন, ‘প্রথমেই আমি পিএসসির বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষার সিলেবাস অ্যানালাইজ করে টপিকগুলো সম্পর্কে ধারণা নিয়েছি। তারপর সাবজেক্ট ভাগ করে পড়েছি। প্রতিদিন দুই/তিনটি সাবজেক্ট পড়েছি। কখনোই সব একসাথে পড়তাম না। আবার কিছুদিন পরপর রিভিশন দিতাম, যাতে ভুলে না যাই। আমার মুখস্থ করার ক্ষমতা কম, তাই একই বিষয় বারবার পড়েছি, যাতে মনে থাকে। প্রতিটি বিষয়ের জন্য আলাদা আলাদা নোট খাতা বানিয়েছিলাম। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নোট করে পড়তাম।’

বিষয়ভিত্তিক প্রস্তুতির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলায় আমি বরাবরই ভালো ছিলাম। তাই বাংলা টু দ্য পয়েন্টে সব পড়েছি। কিছু বিষয় পিএসসি’র সিলেবাসে নেই, কিন্তু প্রশ্ন হয়। তাই সেই টপিকগুলোও পড়তাম। ছোটবেলা থেকে গল্প-উপন্যাস পড়ার সুবাদে সাহিত্যে আমি বরাবরই ভালো ছিলাম। তাই বাংলায় এক্সট্রা এফোর্ট দেওয়ার দরকার হয়নি।’ 

ইংরেজি বিষয়ে তিনি বলেন, ‘গ্রামারে কিছুটা দুর্বল ছিলাম, আর মুখস্থ করার ক্ষমতা কম থাকায় আমি ভোকাবুলারি নিয়ে সময় নষ্ট করিনি। শুধু বিগত পরীক্ষার কিছু ভোকাবুলারি পড়তাম। ইংরেজি লিটারেচারেও ভালো ছিলাম বিধায় ইংরেজিতে উৎরে যাই। আমি আমার বিসিএসের প্রিলি প্রস্তুতি শুরু করি ইংরেজি লিটারেচার দিয়ে।’ 

বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়ে প্রস্তুতি সম্পর্কে স্বর্ণা বলেন, ‘উদ্ভট উদ্ভট সাধারণ জ্ঞান কখনো পড়তাম না। আর পরীক্ষার ডেট দিয়ে দেওয়ার পর কখনো সাম্প্রতিক সাধারণ জ্ঞান পড়তাম না। পরীক্ষার দেড়/দুই মাস আগের কোনো সাম্প্রতিক পরীক্ষায় আসে না,  তাই  ওইগুলো পড়তাম না। বিশেষ কোন সাম্প্রতিক ঘটনা ছাড়া এই বিষয়ে বেশি সময়  নষ্ট করতাম না। কারণ আগেই বলেছি মুখস্থ করার ক্ষমতা কম। তাই নিজেকে প্রেশার দিতাম না। এছাড়া, ভূগোল, নৈতিকতা ও সুশাসন এই ছোট ছোট বিষয় গুলো আমি মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। আর বরাবরই আমি এগুলোতে ভালো নাম্বার পেতাম।’ 

তিনি বলেন, ‘পিউর আর্টসের স্টুডেন্ট হওয়ায় আইসিটি আর বিজ্ঞানে দুর্বল ছিলাম। তাই কখনো এই দুই বিষয়ের গভীরে গিয়ে পড়াশোনা করিনি। এই দুই বিষয়ের প্রশ্ন রিপিট হয় প্রচুর। যখন বুঝে যেতাম এই টপিকটা অনেক পড়লেও আমি পারব না, তখন টোটালি বাদ দিয়ে দিতাম। এতে স্ট্রেস কমে যেত।’ 

গণিত ও মানসিক দক্ষতা বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এই দুটি বিষয় আমি সবশেষে উত্তর করতাম। মানসিক দক্ষতা মোটামুটি সহজ হয় তাই ইজিলি ১২/১৩ নম্বর পাওয়া যায়। আর গণিত অংশ সহজ হলে গণিতে এভারেজ যারা তারাও ৮/১০ পেয়ে যায়। আর্টসের স্টুডেন্ট হওয়ায় কঠিন টপিক গুলো আগেই বাদ দিয়ে দিতাম। গণিত নিয়ে প্যানিক করতাম না। যা পারতাম তাই করতাম।’ 

পরীক্ষার হলের কৌশল সম্পর্কে স্বর্ণা বলেন, ‘যত ভালো প্রস্তুতি নেওয়া হোক না কেন পরীক্ষার হল হচ্ছে গেম চেঞ্জার। পরীক্ষার হলে মাথা ঠান্ডা রেখে উত্তর না করতে পারলে অতি ভালো প্রিপারেশন নিয়েও লাভ নেই। পরীক্ষার হলে প্রশ্ন পাবার পর আমি কখনোই সব প্রশ্ন আগেই পড়তাম না। শুরুতেই সেট নম্বর আর কোন সাবজেক্ট দিয়ে প্রশ্ন শুরু হয়েছে এবং কোন সাবজেক্টের পর কোন সাবজেক্ট এসেছে তা দেখে নিতাম। শুরুতেই গণিত থাকলে তা বাদ দিয়ে টানা উত্তর করে যেতাম। আর গণিত না থাকলে এক নম্বর থেকে উত্তর করা শুরু করতাম।’ 

তিনি বলেন, ‘যে প্রশ্ন দেখলে মনে হতো কোনোদিন দেখিনি এবং পারবও না সেটার ওপর ছোট করে ক্রস দিয়ে রাখতাম যাতে পরেরবার এই প্রশ্ন নিয়ে আর সময় নষ্ট না করতে হয়। আর যেগুলো নিয়ে কনফিউশান থাকতো সেটার উপর গোল চিহ্ন দিয়ে রাখতাম। এতে পরেরবার সহজে বুঝতে পারতাম কোন প্রশ্ন স্কিপ করতে হবে আর কোন প্রশ্নের উত্তর করতে হবে। প্রথম বার মার্ক করার পর একবার উত্তরপত্রে গুণে দেখতাম মোট কতটি প্রশ্ন শিওর উত্তর করতে পেরেছি। এরপর গোল মার্ক করা কনফিউশানগুলো আবার পড়তাম। সেখান থেকে রিস্ক নিয়ে আরও কিছু মার্ক করতাম। পরীক্ষার হলে আমি খুব ঠান্ডা মাথায় পরীক্ষা দিতাম। পাঁচ-ছয় মাসের প্রিপারেশন নিয়ে আমি ৪১ বিসিএস দিতে বসি। ওই সময় এমনভাবে প্রিপারেশন নিয়েছিলাম যে পরবর্তীতে ৪৬ পর্যন্ত টানা টিকি শুধু ৪১ এর প্রিপারেশন দিয়েই।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘একেকজনের পড়ার ধরন একেকরকম। আমি কখনো লাইব্রেরিতে গিয়ে পড়াশোনা করিনি। সবাইকে এতো সিরিয়াস পড়াশোনা করতে দেখলে আমার সাফোকেশন লাগতো। মনে হতো সবাই এতো পারে আর আমিই কিছু পারি না। পড়ার মাঝখানে আমি ছোট ব্রেক নিতাম। গান শুনতে খুব পছন্দ করতাম, তাই রিলাক্সের জন্য গান শুনতাম। আর আমার কমফোর্টেবল হয়ে পড়াশোনা করতে ভালো লাগত, তাই কখনো অতিরিক্ত চিন্তা করতাম না। বিসিএস এর বাইরে চিন্তা করিনি কোনোকিছুর। তাই শুধু বিসিএসের প্রিপারেশনই নিয়েছি, যার জন্য ডিস্ট্র্যাক্ট কম হয়েছি। কারণ আমি নিজেকে চিনতাম যে একই সাথে বিভিন্ন রকম চাকরির প্রিপারেশন নেওয়া আমার জন্য সম্ভব না। এতে কোনটার প্রিপারেশনই ভালোভাবে নিতে পারবো না। আলহামদুলিল্লাহ, আমি আমার লক্ষ্যে পৌঁছাতে পেরেছি।’ 


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence