ঢাবিতে চান্স না পেলে জীবন ব্যর্থ, এমনটা ভাবা যাবে না

মাহমুদুল হাসান
মাহমুদুল হাসান  © টিডিসি ফটো

২০২০-২০২১ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘খ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় ১৫তম হয়েছেন মাহমুদুল হাসান। বরিশাল জেলায় বাড়ি হলেও মূলত তার শৈশব কেটেছে কুমিল্লাতে। সেখানে মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক শেষে তিনি ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। কঠোর অধ্যবসায় বিশ্ববিদ্যায়ের ভর্তি পরীক্ষায় তিনি সফলতার গৌরব অর্জন করেন। তিনি তার এমন সাফল্য নিয়ে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। তার কথাগুলো শুনেছেন— তাওফিকুল ইসলাম হিমেল

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার শৈশব কিভাবে কেটেছে?
মাহমুদুল হাসান: আমার শৈশব কেটেছে কুমিল্লা শহরে যদিও আমার দেশের বাড়ি বরিশালে। মূলত বাবার কর্মস্থল ছিলো কুমিল্লা। সেই সুবাদেই আমাদের কুমিল্লায় আসা। তারপর শৈশব-কৈশোর মিলিয়ে প্রায় ১৬-১৭ বছর কুমিল্লায় থেকেছি। আমার শৈশব বাকিদের মতো এত উচ্চবিলাসীতায় কাটেনি। কারণ ছোটবেলা থেকেই আমি ঘরকুনো টাইপের মানুষ ছিলাম।

আমার শৈশব গতানুগতিকই কেটেছে। খুব বেশি শাসন বা বাধা ছাড়াও ছিলাম না। ছোটবেলা থেকে পড়াশুনায় আমি মোটামুটি ভালোই ছিলাম। এর পেছনে কারণ আমার মনে হয় আমি যতগুলো প্রতিষ্ঠানে পড়ালেখা করেছি সব জায়গায় একটা স্বাস্থ্যকর প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ ছিলো। যেটাতে আমি মানিয়ে নিতে পেরেছিলাম।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বর্তমানে একাডেমিক পড়াশুনার কি অবস্থা?
মাহমুদুল হাসান: বর্তমানে আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে পড়াশুনা করছি। আসলে এইচএসসি লেভেল পর্যন্ত পড়াশুনার সাথে আইনের পড়াশুনার কোন মিল নেই। এটা সম্পূর্ণ একটা আলাদা ফিল্ড, এজন্যে একটু চ্যালেঞ্জিং। তবে আস্তে আস্তে এইসব ব্যাপারগুলো কাটিয়ে উঠছি আলহামদুলিল্লাহ। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বিগত সেমিস্টারগুলাতে আপনার ফলাফল কি?
মাহমুদুল হাসান: আমি এখন ১ম বর্ষে অধ্যয়নরত আছি, ইয়ার ফাইনাল এখনো হয়নি। তবে দুইটা মিডটার্ম দিয়েছি। একদম নতুন একটি বিষয়ে পরীক্ষা আবার ইউনিভার্সিটি লেভেলের প্রথম পরীক্ষা। সব মিলিয়ে একটু নার্ভাস ছিলাম। তবে, আইনের সিনিয়ররা এ ব্যাপারে অনেক হেল্পফুল ছিলেন। যার ফলে পরীক্ষা আলহামদুলিল্লাহ মোটামুটি ভালোই হয়েছে।রেজাল্ট এখনো প্রকাশিত হয়নি।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার লাইফ স্টাইল সম্পর্কে জানতে চাচ্ছি
মাহমুদুল হাসান: আমার লাইফস্টাইল একদমই অনুকরণীয় না। আমি খুবই অলস টাইপের মানুষ। তবে এডমিশন টাইম বা পরীক্ষার সময় প্রচুর খাটতে পারি (এটা অনুকরণ করা যেতে পারে)। লাইফস্টাইল সম্পর্কে আরও বলতে গেলে নিয়মিত নামাজ আদায় করার চেষ্টা করি। পরিপাটি হয়ে থাকার চেষ্টা করি সবসময়। চেষ্টা করি একজন ভালো মানুষ হওয়ার।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: সফলতা অর্জন করেছিলেন তার পেছনে কার অনুপ্রেরণা ছিলো?
মাহমুদুল হাসান: আমার আইন বিভাগের একজন শিক্ষক বলেছিলেন ‘পেশা কখনো সফলতার মানদণ্ড হতে পারে না, সফলতার মানদণ্ড হলো ব্যক্তি নিজেই’। আমিও মনে করি ভালো মানুষ হওয়াটাই জীবনের সবচেয়ে বড় সফলতা। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে পড়াটা আমার জীবনের অন্যতম বড় একটি সফলতা বলতেই হয়। এখানে সফল হওয়ার পেছনে সর্বপ্রথম আল্লাহ তায়ালার কাছে শুকরিয়া জ্ঞাপন করি।

আরও পড়ুন: রাবি ও গুচ্ছে প্রথম-দ্বিতীয় হলেন একই কলেজের দুই শিক্ষার্থী

আর একাডেমিক্যালি যদি কারো কাছে বিশেষ কৃতজ্ঞ থাকি সেটা হচ্ছে আমানুল্লাহ ভাইয়া। বর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতায় পড়াশোনা করছেন। ক্লাস ৯-১০ থেকেই উনি আমাকে গাইডলাইন দিয়ে এসেছেন। এছাড়া ইউসিসি কোচিং সেন্টারেও ক্লাস করেছিলাম।

আর সবশেষে আব্বু-আম্মুর কথা বলবো। তাদের ছাড়া কিছুই সম্ভবপর ছিলো না। আম্মু সবসময় সাহস যোগাতেন এবং নিজের উপর বিশ্বাস রাখতে বলতেন। আব্বু ভর্তি পরীক্ষার ২ মাস আগে ইন্তেকাল করেন। আমার চান্স পাওয়া তিনি দেখে যেতে পারেননি।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি কেমন ছিল?
মাহমুদুল হাসান: ভর্তি পরীক্ষার সময়টা অনেক কঠিন ছিলো। চারপাশে করোনার ভয়াবহতা, পরীক্ষা কবে হবে সেটা নিয়ে অনিশ্চয়তা। এত দীর্ঘ সময় ধরে পড়াশুনায় মনোযোগ ধরে রাখাটা অনেক কষ্টসাধ্য ছিলো। কিন্তু তারপরেও ওই সময়টায় টুকটাক পড়াশোনার সাথে ছিলাম। ভর্তি পরীক্ষার দুই-তিনমাস আগে একদম সিরিয়াস ছিলাম।

পড়াশুনার প্যাটার্নের কথা বললে বলবো, বিগত ইয়ারগুলোর প্রশ্ন অনেক ভালোভাবে এনালাইসিস করেছিলাম। কিছু টপিক আছে যেখান থেকে প্রতি বছরই প্রশ্ন আসে, সেগুলো প্রথমে শেষ করেছি। একইসঙ্গে বোর্ড বই বেশী গুরুত্ব সহকারে পড়েছিলাম। আর সহায়ক বই যেগুলো কিনেছিলাম সেগুলো পুরোটা পড়েছিলাম এবং প্রতিটা সাব্জেক্টের জন্যে কয়েকটা সহায়ক বই কিনেছিলাম। প্রস্তুতির সময় মনে হয়েছে আরও জানতে হবে, এমন একটা ক্ষুধা ছিলো ভেতরে। যেটা পরবর্তীতে কাজে লেগেছে,পরীক্ষার হলে আলহামদুলিল্লাহ অনেক আত্মবিশ্বাসী ছিলাম।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: নতুনদের উদ্দেশ্য উপদেশ কি?
মাহমুদুল হাসান: নতুনদের উদ্দেশ্যে উপদেশ থাকবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ই যে জীবনের সফলতা এমনটা ভাবা উচিত না। তবে স্বপ্ন অবশ্যই থাকবে এবং তার জন্যে অক্লান্ত পরিশ্রমও করতে হবে। এখানে চান্স না পেলে যে জীবন ব্যর্থ এমনটা কোনভাবেই মনে করা যাবে না। দিনশেষে ভালো মানুষ হওয়াটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। যারা ভর্তি পরীক্ষার্থী তাদের ইন্টার থেকেই কম-বেশি পড়াশোনা শুরু করা উচিত। একটি প্রপার গাইডলাইন ফলো করা উচিত তাদের। মোটকথা কম হলেও নিয়মিত পড়াশোনার মধ্যে থাকতে হবে।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি?
মাহমুদুল হাসান: ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা বলতে গেলে আমি আসলে অনেক দূরের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবি না। কারণ আমার মনে হয় জীবন অনেক অনিশ্চিত। এমনকি আইন পড়ার পরে কেমন ক্যারিয়ার নির্বাচন করবো তা নিয়েও এখন ভাবছি না। তবে স্বপ্ন অবশ্যই আছে, কিন্তু তাই যে জীবনের একমাত্র লক্ষ্য এমনটা ভাবি না। সবশেষে বলবো জীবনে যাই ঘটুক তা একমাত্র আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছা হিসেবে মেনে নেওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ।


সর্বশেষ সংবাদ