সাক্ষাৎকারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জিকু

সৃষ্টিকর্তা যেন সব বাবা-মায়ের স্বপ্ন পূরণের সুযোগ দেন

জাকারিয়া রহমান জিকু
জাকারিয়া রহমান জিকু  © টিডিসি ফটো

চট্টগ্রামের সাতকানিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাকারিয়া রহমান জিকু। ৩০তম বিসিএসে নিয়োগ পাওয়া এই পুলিশ কর্মকর্তা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ইংরেজি বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। ঝিনাইদহের শৈলকুপার ধাওড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি।

৩০তম বিসিএসে যোগদান করার আগে ২৯তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে নিয়োগ পেয়েছিলেন জিকু। সেখানে তিনি ৯ মাস সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসাবে নীলফামারীতে দ্বায়িত্বও পালন করেন।

জিকুর ইচ্ছা ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বেন। দেশসেরা এই বিদ্যাপীঠে পড়ার সুযোগ না হলে বাড়িতে থেকে কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার মানসিক প্রস্তুতিও নিচ্ছিলেন। সেজন্য এ দুই বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া অন্য কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আবেদনও করেননি তিনি।

তার আগে এসএসসি পর্যন্ত বাবা-মায়ের কথামতো বিজ্ঞান বিভাগে পড়লেও সারাদিন পড়াশোনা হাঁসফাঁস লাগত জিকুর। সেজন্য বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হওয়ার ৪ মাস পর এইচএসসিতে বিভাগ বদলে চলে যান মানবিক বিভাগে। শেষ পর্যন্ত নিজ চেষ্টা ও পরিশ্রমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে পড়ার সুযোগ পান জাকারিয়া রহমান জিকু।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জিকু বলেন, আমি আমার বাবা- মায়ের স্বপ্ন পূরণ করতে পেরেছি এটিই আমার ছোট্ট জীবনের সবচেয়ে বড় পাওয়া। এই সুখানুভূতি অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার মতো না।

২৯তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে নিয়োগ পেয়ে প্রথম ফোনকলটি মাকেই করেছিলেন তিনি। তখন আবেগাপ্লুত হয়ে মা বলেছিলাম, ‘মা তোমার ছেলেতো ম্যাজিস্ট্রেট হয়ে গেলো।’ একথা শুনে মা খুশিতে চিৎকার দিয়ে যেভাবে কেঁদেছিলেন সেই কান্নার আওয়াজ এখনও শুনতে পান তিনি।

তিনি বলেন মা-বাবার দোয়া ও ভালোবাসা আর সাথে জীবনের কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য সামান্য পরিশ্রম তাহলেই সৃষ্টিকর্তা আপনাকে নিরাশ করবেন না। আরেকটা ব্যাপার সবার মনে রাখা উচিৎ সবসময় আপনি সফল নাও হতে পারেন; তবে হাল ছাড়া যাবেনা। চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। ভুলে গেলে চলবেনা- সৃষ্টিকর্তা কাউকে দিয়ে পরীক্ষা করেন আর প্রিয় বান্দাকে না দিয়েও পরীক্ষা করেন।

জাকারিয়া রহমান জিকু বলেন, ২০১০ সালের ১৪ ডিসেম্বর প্রথম যখন রুপালী ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার হিসেবে যোগদান করতে গেলাম তখন বাবা বললেন যাও দোয়া রইল; তারপর যখন দুর্নীতি দমন কমিশনে সহকারী পরিচালক হিসেবে চাকরি হলো। তখনও বাবা বললেন দোয়া রইল; সর্বশেষ যখন বাংলাদেশ ব্যাংক রেখে বিসিএস এডমিনে যোগদান করতে গেলাম তখন বাবা বললেন, একটা কথা মনে রেখো, কোনদিন কারো চোখের পানি তো দূরের কথা দীর্ঘশ্বাসের কারণ হইও না।

বিসিএসের পুলিশ ক্যাডারে যোগদানের বিষয়টি ছিল আরও নাটকীয়। ৩০তম বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের সুপারিশপ্রাপ্ত হওয়ার পর বাবা বললেন, আমার ছেলেকে পুলিশে ইউনিফর্মেই বেশি স্মার্ট লাগবে। অগত্যা বাবার ইচ্ছাই হলো আমার চাকরি জীবনের পাথেয়।

২০১৩ সালে মাথার উপরের ছাদ বাবাকে হারান জিকু। বাবার অবর্তমানে মাকেই জীবনের সব স্বাচ্ছন্দ্য আর সুখ দিতে চান জিকু। একমাত্র ছোট ভাইটিও টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ওপর পড়াশোনা শেষ করে চাকরি করছেন একটি স্বনামধন্য টেক্সটাইল কোম্পানিতে।

বিসিএস পরীক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে জাকারিয়া রহমান জিকু বলেন, নিজেকে জানাটা খুব বেশি জরুরি।

“প্রথমে সিলেবাসটা ভালোভাবে বুঝতে হবে। তারপর নিজেই নিজেকে অলিখিত পরীক্ষার সামনে দাড় করিয়ে নিজের সবলতা-দুর্বলতা নিরপেক্ষ ভাবে বিচার করতে হবে। সবল দিকগুলোতে তুলনামূলক কম সময় আর দুর্বল দিকগুলোতে তুলনামূলক বেশি সময় দিয়ে কাঙ্খিত পর্যায়ে নিজেকে নিয়ে যেতে হবে।”

তিনি আরও বলেন, যদিও সিলেবাসে কিছু পরিবর্তন আছে তারপরও বিগত ২০ থেকে ২৫ বছরের যতো প্রশ্ন আছে সব পড়তে হবে। এতে করে প্রশ্নের ধরণ সম্পর্কে পুরোপুরি ধারণা পাওয়া যাবে।এছাড়া সেখান থেকে প্রতিবছরই প্রায় ২০ থেকে ৩০ শতাংশ প্রশ্ন কমন পড়ে থাকে। তবে মনে রাখতে হবে শুধুমাত্র বাজারে প্রচলিত গাইড পড়ে বিসিএস ক্যাডার হওয়া কঠিন।


সর্বশেষ সংবাদ