৬ টিউশনির পাশাপাশি বিসিএস প্রস্তুতি নিয়েছেন পররাষ্ট্রে প্রথম সাজ্জাদ

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসাইন
মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসাইন  © টিডিসি ছবি

৪১তম বিসিএসে পররাষ্ট্র ক্যাডারে প্রথম হয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) সাবেক শিক্ষার্থী মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসাইন। তার জন্ম চট্টগ্রাম জেলার লোহাগাড়া উপজেলার পুটিবিলা ইউনিয়নে। তিন ভাই-বোনের মাঝে সবার ছোট তিনি। ছোট বেলায় বাবাকে হারান তিনি, তার পড়ালেখার হাতেখড়ি মায়ের হাতেই। সেসময় সংসারের হাল ধরেন বড় ভাই। মা, ভাই ও বোনের সহযোগিতায় স্কুল ও কলেজ গন্ডি পেরিয়ে সাজ্জাদ ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে। স্নাতক শেষে শুরু করেন সরকারি চাকরি প্রস্তুতি।

২০১৯ সালের মাঝামাঝিতে বিসিএসের জন্য প্রস্তুতি নেন তিনি। আর তাতে প্রথমবার অংশ নিয়ে করেন বাজিমাত। পছন্দের পররাষ্ট্র ক্যাডার পেয়ে যাবেন তা কল্পনাতেও ভাবেননি সাজ্জাদ। তবে পথটুকু খুব একটা সহজ ছিলো না। তাকে পাড়ি দিতে হয়েছে নানা অনেক চড়ায়-উৎরায়ের মধ্যে দিয়ে। সাজ্জাদের বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ, ভবিষ্যৎ স্বপ্ন, শিক্ষার্থীদের প্রতি তার পরামর্শ ও সফলতার গল্প শুনিয়েছে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন চবি প্রদায়ক শেখ আব্দুল্লাহ্ ইয়াছিন-

টিডিসি: আপনার বিসিএস প্রস্তুতি কবে থেকে শুরু?

সাজ্জাদ: আমার বিসিএস পরীক্ষায় আগ্রহ তেমন ছিল না। এমনকি বিসিএস পরীক্ষায় কি আসে আমি সেটাও জানতাম না। আমার বিসিএস নিয়ে তেমন আইডিয়াও ছিলনা। কিন্তু আমার গ্র্যাজুয়েশন শেষে দেখলাম যে আমাদের ইঞ্জিনিয়ারিং সাবজেক্ট থেকে অপশন আসলে খুব কম। তাই আমি ভাবলাম সরকারি চাকরির দিকে যাওয়াটা বোধহয় আমার বেটার হবে। সেখান থেকে আসলে বিসিএস প্রস্তুতিটা শুরু। 

টিডিসি: আপনি বলছেন, বিসিএস বিমুখ ছিলেন তবে পরে বিসিএস কেন বেঁচে নিলেন?

সাজ্জাদ: আমার ডিপার্টমেন্টের অনেক বন্ধুরা পিএইচডি করতে কানাডা, ইউএসএ যাচ্ছিলো। আমিও তাদের মতো হতে চাইতাম। ব্যাপারগুলো আমার কাছে স্বপ্নের মত ছিলো। কিন্তু গ্র‌্যাজুয়েশন শেষে দেখলাম যে  আমি আইএলটিএস করিনি, জিআরই করিনি, ইভেন আমি তেমন রিসার্চ পেপারও করিনি। শুধু গ্র‍্যাজুয়েশন করছি। এই অবস্থান থেকে চিন্তা করলাম যে একদম শূন্য থেকে শুরু করাটা আমার জন্য রিস্কি। ফ্যামিলি প্রেশার না থাকলেও আমি সবসময় কিছু একটা করার তাড়া অনুভব করছিলাম।

তাই আমি শূন্য থেকে শুরু না করে বরং সরকারি চাকরির জন্য সিদ্ধান্ত নিলাম। যেহেতু আমি টিউশনি করাতাম তাই আমার গণিত,বাংলা, বিজ্ঞানের উপর ভালো একটা দখল ছিলো। আমার অজানাতেই যেহেতু বিসিএসের জন্য মুটামুটি একটা প্রস্তুতি ছিলো তাই এটাকে বেছে নেয়। বিসিএস যে কারো হবে কেউ সেটা তো বলতে পারে না তাই একটা ভালো সরকারি চাকরি পেলে খুশি হবো সে ভাবনা থেকে প্রস্তুতি শুরু করা। 

‘‘বিসিএস প্রস্তুতির সময় আমার ছয়টা টিউশন ছিলো। আমার ছাত্র এবং অভিভাবকেরা বেশ সহযোগিতা করতো। তারা আমাকে বেশ আপন করে নিয়েছিলো। আমার কখনো মনে হতো না আমি টিউশনিতে যাচ্ছি। আমার মনে হতো আমি ঘুরতে বা নাস্তা-পানি করতে যাচ্ছি। একটা সময় বুঝলাম এই টিউশনিটাই আমাকে বেশ হেল্প করছে।’’

টিডিসি: প্রিলি, ভাইভা ও রিটেন নিয়ে আপনার অভিজ্ঞতা বলুন?

সাজ্জাদ: আমি বিসিএস প্রস্তুতির কোচিংয়ের প্রথম থেকে সিরিয়াস ছিলাম। কোচিংয়ের প্রথম পরীক্ষায় আমি খারাপ করেছিলাম কিন্তু তারপর থেকে বাকি সব পরীক্ষায় পজিশন প্রথম দিকে থাকতো। যার কারণে আমার কনফিডেন্স গ্রো করতে লাগলো, এভাবে চালিয়ে গেলে সফল হতে পারবো। প্রিলির ক্ষেত্রে আমার কোচিং এর পরীক্ষা বেশ কাজে দিয়েছে। আমি মোবাইলের বিভিন্ন অ্যাপ কিংবা শিটে যেখানে সুযোগ হতো পরীক্ষা দিতাম। পরীক্ষা দিতে দিতে এক প্রকার নেশার মতো হয়ে গেলো।

আমি পড়তাম আর পরীক্ষা দিতাম। ৪১তম বিসিএসের প্রিলির প্রশ্ন কঠিন হয়েছিল কিন্তু আমার ওই অভিজ্ঞতা আমাকে প্রিলিতে উত্তীর্ণ হতে সহযোগিতা করেছে। প্রিলি শেষে বাজার থেকে রিটেনের জন্য বই কিনে নিয়ে আসলাম আমি। পরিচিত যারা আগে ক্যাডার হয়েছে তাদের থেকে সাজেশন নিতাম কোন বই কিনবো। যে যেই বই সাজেস্ট করতো তা কিনে নিয়ে আসতাম। তবে সব বই পড়ে শেষ করে ফেলতাম তেমন না। যেটা ভালো লাগতো, বুঝতাম সেটাই পড়তাম। আমার কাছে বাংলাদেশ বিষয়াবলি, আন্তর্জাতিক বিষয়াবলিগুলো কঠিন লাগতো।

এই বিষয়গুলো বিভিন্ন বই ঘেটে ঘেটে নোট করতাম। পরে এটাই আমাকে খুব সাহায্য করেছে। দেখা গেছে পরীক্ষা আগের রাতে নোট উল্টালে আমি সব পেয়ে যাচ্ছি। মোটা মোটা বইগুলো আর পড়তে হচ্ছে না। রিটেন দেওয়ার পর বুঝলাম যা হোক রিটেনে ফেল অন্তত আসবে না। রিটেনের পর ভাইভার বই কিনে নিয়ে আসি। আমাকে যা যা প্রশ্ন করতে পারে বলে মনে হচ্ছিল তা আমি খাতায় নোট করেছি। যেহেতু আমার পররাষ্ট্র ক্যাডার চয়েজ ছিলো তাই আমি জানতাম আমাকে সব প্রশ্ন ইংলিশে করা হবে তাই আমি আমার বিষয়ে বিস্তারিত ইংলিশে নোট করে প্র্যাক্টিস করতাম। পরে আল্লাহর রহমতে ভাইভাও আমার ভালো হয়েছে। 

টিডিসি: জীবনের লক্ষ্য কী ছিল আপনার?

সাজ্জাদ: আমার ছোট বেলায় ডাক্তার হওয়ার ইচ্ছা ছিলো কিন্তু হতে পারি নাই। বিশ্ববিদ্যালয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং-এ ভর্তি হইছি। ইঞ্জিনিয়ারিং পড়লেও ইঞ্জিনিয়ার হতে পারি নাই। যেহেতু আমাদের সার্কুলারগুলো হয় কম তাই আমি জেনারেল লাইনে চলে আসি। আমি দেখলাম এই লাইনে বেস্ট অপশন বিসিএস। এখানে সম্মান বলেন কিংবা দেশের জন্য কিছু করার সুযোগ সব পাবেন। এখানে নিজের জীবন যেমন পরিবর্তন করতে পারবেন তেমনি সমাজের মানুষের তথা দেশের জন্য কিছুটা অবদান রাখতে পারবেন এই জিনিসটার কারণেই বিসিএস আমার ফাস্ট প্রায়োরিটি ছিলো। তাই পরবর্তীতে এটিকেই গোল হিসেবে নেয়।

টিডিসি: এমন কোনো অভিজ্ঞতা বা কোন ব্যক্তি  কি আছে যা আপনাকে সফল হতে প্রেরণা দিয়েছিল?
সাজ্জাদ: আমার মূলমন্ত্র বা অনুপ্রেরণা একটাই ছিলো আসলে। আমার অল্প বয়স থাকতে বাবা মারা যান। বাবা মারা যাওয়ার পর মা অনেক কষ্ট করেছেন। আমার ভাইও অনেক কষ্ট করেছেন। আমরা ছোট বেলায় অনেক অর্থ কষ্টে ছিলাম। আমার ভাই বিদেশে যাওয়ার পর কিছুটা ভাগ্যের পরিবর্তন হয়।

এই যে বললাম আমার মা কিছুই পায় নায়। আমি যে সুখ পেয়েছি। আমার মা, ভাই সে সুখ পায়নি। আমি সব সময় চাইতাম আমি এমন কিছু করবো যাতে তাদের কষ্টের মূল্যটা দিতে পারি। তাদের মুখ উজ্জ্বল করতে পারি। তাদের কষ্টের মর্যাদা দিতে চেয়েছি। এটাই আমার অনুপ্রেরণা। কোন ব্যক্তিকে দেখে আমি বিসিএস ক্যাডার হতে চাইনি। আমার অনুপ্রেরণা আমার ফ্যামিলি। 

টিডিসি: স্কুল, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে মজার কোনো স্মৃতি আছে কী?

সাজ্জাদ: আমি ক্লাস ৬ থেকে হোস্টেলে থাকতাম। আমি খেলাধুলায় খুব এক্টিভ ছিলাম। আমাকে যদি কেউ বলতো সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত খেলতে তা আমি পারতাম। বৃষ্টির মধ্যেও খেলাধুলা করতাম। ভালো ক্রিকেট, ফুটবল খেলতাম তাই আমাকে অনেকে পছন্দও করতো। হোস্টেলের সে সোনালী সময়টা মিস করি। আমার জীবনের সেরা সময় ছিলো হোস্টেলের সময়টা। সেই সময়ের সিনিয়র, জুনিয়র, বন্ধু, শিক্ষক, মসজিদের হুজুর,বাবুর্চি সবার কথাই খুব মনে পড়ে। ওই সময়টাতে আমি আসলে অনেক কিছু শিখেছি। কিভাবে ডিসিপ্লিন থাকা যাই, পড়ালেখার পাশাপাশি কিভাবে অন্যান্য কাজ করতে হয় আমি স্কুল থেকে শিখেছি।

‘‘অনেক সময় অনেক চটকদার, লোভনীয় প্রস্তাব তারা পাবে সে সবের লোভে পড়া যাবে না। নিজের দক্ষতা, ক্ষমতা যাচাই করে সিদ্ধান্ত নিতে বলব। ২০১৯ সালে আমি বিসিএসসে আবেদন করি। ২০২৩ সালে আমার বিসিএস রেজাল্ট দেয়। এটা দীর্ঘ একটা জার্নি কিন্তু। চারটা বছর আমার জীবন থেকে চলে গেছে শুধু বিসিএসের জন্য। যারা সে ধৈর্য্য ধরতে পারবে তারাই বিসিএসে আসুক। ধৈর্য্য না থাকলে বিসিএস ছাড়াও আরও অনেক ভালো ভালো সেক্টর আছে সেগুলোতে চেষ্টা করতে পারে। যদি বিসিএসে আসতেই হয় তবে আমার পরামর্শ তার একটা সুন্দর রুটিন থাকতে হবে, ডিসিপ্লিন লাইফ মেন্টেন করতে হবে।’’

তবে অনেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবনটাকে রঙিন বললেও আমার ক্ষেত্রে তা ছিলো না,বোরিং ছিলো। আমি ক্লাসে যেতাম, ক্লাস করতাম, ল্যাব করতাম ফিরে এসে টিউশনিতে যেতাম। ওই যে বললাম আমার একপ্রকার তাড়া ছিলো, কিছু করার জন্য অনুভব করতাম তাই টিউশনি করাতাম কয়েকটা। তবে বলতে হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবনে আমি ভালো কিছু বন্ধু পেয়েছি। যাদের নাম না বললে নয়। বন্ধু রবিউল, রিফাত, আশেক, অন্তু, নাজমুল, পায়রা, রাজশ্রী, সুজয়, রিয়াদ, মামুন, ইমদাদ এরা আমাকে নানাভাবে সাহায্য করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের চারটা বছর এদের ছাড়া অসম্ভব ছিলো। 

টিডিসি: শুনেছি আপনি এখন একটা ব্যাংকের চাকরি করেন। আগে টিউশনি করাতেন। তা কি কোনভাবে পড়ালেখায় ক্ষতি করেছে?  একটু চাপ হয়ে যেতো না? 

সাজ্জাদ: বিসিএস প্রস্তুতির সময় আমার ছয়টা টিউশন ছিলো। আমার ছাত্র এবং অভিভাবকেরা বেশ সহযোগিতা করতো। তারা আমাকে বেশ আপন করে নিয়েছিলো। আমার কখনো মনে হতো না আমি টিউশনিতে যাচ্ছি। আমার মনে হতো আমি ঘুরতে বা নাস্তা-পানি করতে যাচ্ছি। একটা সময় বুঝলাম এই টিউশনিটাই আমাকে বেশ হেল্প করছে। যখন কোচিংয়ে পরীক্ষা দিচ্ছি তখন দেখলাম আমাকে ম্যাথ জিনিসটা আলাদাভাবে পড়তে হচ্ছে না। আমি আমার স্টুডেন্টদের যা পড়াচ্ছি তা এখানে আসতেছে। ওটার কারণে আমি টিউশনি এনজয় করতাম। করোনাকালেও আমার দুটো টিউশনি অফ হয়ে গেলেও বাকিগুলো আলহামদুলিল্লাহ আমার টিউশনিগুলো যায়নি।

তেমন কঠিন মুহুর্তেও আমি সার্ভাইভ করেছি। আমার টিউশনির স্টুডেন্ট ও অভিভাবকদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। আমি তাদের টিউশনি পড়িয়ে টাকা পেয়েছি তার চেয়ে বড় বিষয় ছিলো তাদের সহযোগিতা পেয়েছি। একটা টিউশন থেকে আমাকে বলেছে সাজ্জাদ তুমি বিসিএস দাও, ভালো করবে। আমাকে তারা মোটিভেট করেছে। আমার পেছনে তাদের অনেক অবদান। আমার যখন সোনালী ব্যাংকে চাকরি হয় তখন টিউশনিগুলো ছেড়ে দিতে হয়। ব্যাংকের চাকরিতে জয়েনের পর তারাও আমাকে সহযোগিতা করে। আমার ভাইভার পরীক্ষার জন্য অফিস আমাকে ছুটি দেয়।

টিডিসি: শৈশবের সময়টা কিভাবে কেটেছে? 

সাজ্জাদ: বাবা না থাকলে একটা ছেলের ক্ষেত্রে যে দুর্ভোগ নেমে আসে আমার ক্ষেত্রে তেমনটা হয়নি। আমার ভাই পড়ালেখা করতে পারেনি, ভালো ইউনিফর্ম পায়নি। ভাই যা পায়নি তা আমি পেয়েছি। কখনো খাতা, বই, ইউনিফর্মের কষ্ট পাইনি। বাবা মারা যাওয়ার পর ১৬ বছর বয়সে ভাই বিদেশে চলে যান। অনেক টাকা ঋণ করে বিদেশে গিয়েছিল তাই প্রথম দিকে পুরোপুরি হাল ধরতে পারেনি। পরে শক্তভাবে ভাইয়া পরিবারের হাল ধরেন। সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর রহমতে, ভাইয়ার উছিলা, মায়ের দৃঢ়তায় আস্তে আস্তে আমাদের অবস্থার পরিবর্তন হয়। ২০০০ সালের আগে আমাদের অবস্থা ছিলো আমরা খেতে পারতাম না আর ২০০০ সালের পরের অবস্থার অনেক পরিবর্তন হয়। এই যে কষ্ট অনুভব করতে হয়নি তা ভাইয়ের অবদানের কারণে। 

টিডিসি: আপনার এমন সফলতার পেছনে কার অবদান সবচেয়ে বেশি? 

সাজ্জাদ: ওভাবে আসলে ক্রমানুসারে আমি কিছু বলতে চাই না। আমার সাফল্যের পেছনে আল্লাহর রহমত, মানুষের দোয়া আছে বলে আমি মনে করি। না হয় যারা পরীক্ষা দিয়েছে সবাই তো আমার মতো কষ্ট করেছে। আমার মা, ভাইয়ের অবদানের কথা তো আগেই বলেছি। ছোট ভাই হিসেবে বোনও আমার জন্য অনেক কষ্ট করেছে। আর একজনের কথা না বললে নয় সে হলো আমার স্ত্রী শারমিন।

আমার একটা বদ অভ্যাস হলো আমি ৫ মিনিট পর পর ১০টা এলাম দিলেও ঘুম থেকে উঠতে পারতাম না। আমার ঘুম খুব গভীর ছিলো। আমি যখন ভাইভার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম তখন আমি ওকে বলতাম আমাকে তুমি ৬টায়  ডেকে দিও। সে আমাকে ৬টা বাজার ৫/১০মিনিট আগে ডেকে দিতো। দেখা যেতো অনেক সময় তার ঘুম, দৈনন্দিন কাজ ফেলে আমার জন্য এটা করতে হচ্ছে। আমি ভালো ভাবে পড়ছি কিনা সে খোঁজ-খবর নিতো। আমাকে পড়ার জন্য অনুপ্রেরণা দিতো।

আমার রেজাল্টের আগের মূহুর্তে আমার খুব টেনশন হচ্ছিলো সে আমাকে পাশে থেকে অনেক সাপোর্ট দিয়েছে। ওর অনেক অবদান। আমার মনে হয় আমি অনেক ভাগ্যবান। গত বছর ২৬ আগস্ট আমাদের বিয়ে হয়। তার আগে ৩ আগস্ট আমার ব্যাংকে চাকরি হয়। এই বছর ৩ আগস্ট আমার বিসিএসের রেজাল্ট দেয়। আমার এই সাফল্যে আমার বন্ধু যারা আমাকে সঠিক দিক নির্দেশনা দিয়েছে, আমার কোচিংয়ের শিক্ষক সবার প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। আসলে কারও অবদান কারো চাইতে কারও কম নয়। সবার অবদানই অনস্বীকার্য। 

টিডিসি: আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী? 

সাজ্জাদ: আমার পররাষ্ট্র ক্যাডার চয়েজ দেওয়ার কারণ আমি দেশের সেবা করতে করতে চাই। আমি দেশকে রিপ্রেজেন্ট করবো এরচেয়ে বড় সফলতা আমার জন্য আর কিছু হতে পারে না। বিদেশের মাটিতে দেশকে রিপ্রেজেন্ট করার যে দায়িত্ব দেওয়া হবে তা সর্বোচ্চ পালনের চেষ্টা করবো। দেশের জন্য কিছু করতে পারলে নিজেকে ধন্য মনে করবো। তার জন্য সকলের দোয়া চাই। 

টিডিসি: বিসিএস দিতে ইচ্ছুকদের উদ্দেশ্যে আপনার কি কি পরামর্শ থাকবে? 

সাজ্জাদ: অনেক সময় অনেক চটকদার, লোভনীয় প্রস্তাব আসবে। এসব লোভে পড়া যাবে না। এক্ষেত্রে নিজের দক্ষতা, ক্ষমতা যাচাই করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ২০১৯ সালে আমি বিসিএসে আবেদন করি, চার বছর পর ২০২৩ সালে এসে রেজাল্ট দেয়। এটা দীর্ঘ একটা জার্নি কিন্তু। চারটা বছর আমার জীবন থেকে চলে গেছে শুধু বিসিএসের জন্য। যারা সেই ধৈর্য্য ধরতে পারবে তারাই বিসিএসে আসুক। ধৈর্য্য না থাকলে বিসিএস ছাড়াও আরও অনেক ভালো ভালো সেক্টরে জব আছে। সেগুলোতে চেষ্টা করতে পারেন আপনার। যদি বিসিএসে আসতেই হয় তবে আমার পরামর্শ তার একটা সুন্দর রুটিন থাকতে হবে, ডিসিপ্লিন লাইফ মেন্টেইন করতে হবে।

যেই কোচিং সেন্টারেই ভর্তি হোক না কেনো সেখানের পরীক্ষাগুলো ভালোভাবে দিতে হবে। বিসিএস একটা লম্বা জার্নি। অনেক শুরুতে অনেক ডেডিকেটেড থাকলেও শেষে হতাশ হয়ে যায়। এমন হলে চলবে না। ধৈর্য্য রাখতে হবে। পরিশ্রমের কোন সীমারেখা রাখা যাবে না। যে বিষয়গুলো কঠিন লাগে তা নোট করে পড়তে হবে। বিগত বছরের প্রশ্ন এনালাইসিস করতে হবে। অন্ধভাবে কাউকে অনুসরণ না করে নিজের মতো রুটিন করা উচিত। অনেকে বলে, ভাইয়া কয় ঘন্টা পড়া উচিত? এটা আসলে ঠিক না। যেটা আপনি পাঁচ মিনিটে শেষ করতে পারবেন তা শেষ করতে হয়তো আমার ৫ ঘন্টা লাগতে পারে। তাই নিজের সুবিধামত রুটিন করতে হবে।

টিডিসি: ধন্যবাদ আপনাকে, আপনার জন্য শুভ কামনা। 

সাজ্জাদ: দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকেও  ধন্যবাদ। আমার জন্য দোয়া করবেন।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence