প্রথম বিসিএসেই প্রশাসন ক্যাডার হাবিপ্রবির সিদ্দিক

মো. আবু বক্কর সিদ্দিক
মো. আবু বক্কর সিদ্দিক  © সম্পাদিত

হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মো. আবু বক্কর সিদ্দিক। সম্প্রতি ৪১তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন তিনি। জীবনের প্রথম বিসিএসে অংশ নিয়ে বাজিমাত করা সিদ্দিক দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের নিকট তুলে ধরেছেন তার জীবনের সংগ্রাম ও সাফল্যের গল্প। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রিয়া মোদক- 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বিসিএস ক্যাডার হওয়ার স্বপ্ন তৈরি হয় কিভাবে? 
মো. আবু বক্কর সিদ্দিক: ছোটবেলা থেকেই পড়ালেখায় ভালো ছিলাম বলে পরিবার থেকেও বেশ উৎসাহ দিতো। আমারও একটা স্বপ্ন ছিলো বড় হয়ে সুপ্রতিষ্ঠিত হওয়ার। স্নাতক চলাকালীন সফল ভাইয়া-আপুদের সাফল্য আমাকে বেশ অনুপ্রাণিত করেছে। তখন থেকেই বিসিএসের প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করি।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি কিভাবে নিয়েছেন? 
মো. আবু বক্কর সিদ্দিক: প্রথমদিকে যেসকল বিষয়ে ভাল পারতাম সেগুলো দিয়েই প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করি। এতে বিসিএসকেন্দ্রিক পড়ালেখার প্রতি আলাদা একটা মোহ তৈরি হয়ে যায়। পরে ধীরে ধীরে পাঠ্যসূচির অন্যান্য বিষয়ে নিয়মতান্ত্রিকভাবে প্রস্তুতি নিতে থাকি। ফলশ্রুতিতে কোনো বিসিএসই আমায় থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়নি। আমার কাছে মনে হয় বিসিএসের প্রিলিমিনারি, লিখিত ও ভাইভার পড়ালেখা কোনটিই কোনটি থেকে বিচ্ছিন্ন নয়। যেকোনো কাজে সাফল্য পেতে চিত্ত নিবিষ্টতা ও নিয়মিত প্রচেষ্টার কোনো বিকল্প নেই বলে মনে  করি।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: পড়ালেখার ক্ষেত্রে কাদের কাছ থেকে সহযোগিতা পেয়েছেন?
মো. আবু বক্কর সিদ্দিক: শিক্ষাজীবনের শুরু থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করা পর্যন্ত আর্থিক ও মানসিক সহায়তার জন্য আমি অনেকের নিকট দায়বদ্ধ-এ কথা স্বীকারে আমার কোনো কুণ্ঠাবোধ নেই। প্রাথমিক পড়ার সময় আমি বৃত্তি পেয়েছিলাম। পড়াশোনার যাবতীয় ম্যাটেরিয়ালস সেই বৃত্তির টাকা থেকেই কিনতাম। দিব্যি চলে যেতো।

মাধ্যমিক পর্যায়ে আমার পড়ালেখার সহায়তায় আমার শিক্ষদের ভূমিকা ছিল অগ্রগণ্য। আমার পড়ালেখার যাবতীয় বইপত্রসহ সামগ্রিক সহায়তায় স্যাররাই সর্বপ্রথম এগিয়ে এসেছিলেন। আমি আজীবন স্যারদের নিকট কৃতজ্ঞ থাকবো। পড়ালেখাজনিত যাবতীয় সমস্যা থেকে উত্তরণে সকলের যে মানসিক সাপোর্ট আমি পেয়েছি তার প্রতিদান দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়।

এরপর এসএসসির পর থেকে শুরু করে স্নাতক পর্যন্ত আমার অন্যতম আর্থিক সহায়তার উৎস ছিল ডাচ-বাংলা ব্যাংক শিক্ষাবৃত্তি। তাঁদের এই সহায়তার পর আমার আর অন্য কোনদিকে তাকাতে হয়নি। এছাড়াও স্বপ্ন ফাউন্ডেশন নামে একটি প্রতিষ্ঠান আমার আর্থিক সহায়তায় এগিয়ে এসেছিল। সকলের সার্বিক সহায়তা ও স্রষ্টার আনুকূল্যে স্নাতক শেষ হওয়ার পরপরই আমি বাংলাদেশ রপ্তানী প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ (বেপজা)-তে সহকারী পরিচালক হিসাবে চাকরি পাই। এখন দায়বদ্ধতার অংশ হিসাবে আমিই দু-তিনজনের পড়ালেখার ব্যয়ভার বহন করছি।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: নিজ বিভাগের শিক্ষকদের কাছে থেকে কি ধরনের সহযোগিতা পেয়েছিলেন?
মো.আবু বক্কর সিদ্দিক: বিসিএস পথপরিক্রমার পুরো অংশজুড়ে যদি কারো অবদানের কথা বলতে হয় তবে সর্বাগ্রেই আমি আমার পরিবার ও শিক্ষকদের কথাই স্মরণ করবো। পরিবারের আর্থিক-মানসিক সহায়তা ও অনুপ্রেরণা যেমন ছিল তেমনই একাডেমিকের পাশাপাশি কিভাবে অন্যান্য বিষয়েও নিজের সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হয়, কিভাবে নিজেকে চাকরির বাজারে পরিশীলিত করতে হয় তার পুরোটা আমি শিখেছিলাম আমার অনুষদের  শিক্ষক মহোদয়গণের কাছ থেকে। তাদের অনুপ্রেরণা ও সার্বিক সহায়তাই আমাকে এ বন্ধুর পথ অতিক্রমে শক্তি যুগিয়েছে।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বিসিএসের ফলাফলের পর অনুভূতি কেমন ছিলো? 
মো.আবু বক্কর সিদ্দিক: যখন বিসিএসের প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করি তখন মনে হতো এ যাত্রা যতই কণ্টকাকীর্ণ হোক না কেন আমি পারবো। নিজের প্রতি বিশ্বাস কখনও একটুও হারাইনি। আত্মবিশ্বাস নিজেকে অনন্যমাত্রায় পৌঁছানোর জন্য অন্যতম নিয়ামক বলে বিশ্বাস করি এবং প্রায় সর্বক্ষেত্রেই এর ইতিবাচক ফলও পেয়েছি। প্রথম বিসিএসের এই সফলতা আমাকে সত্যই অনেক উদ্বেলিত করেছে। নিজের জন্য যতটুকু না আনন্দিত হয়েছি তার চাইতে বেশি আনন্দিত হয়েছি পারিপার্শ্বিক সকলের আনন্দ দেখে। এখন সকলের জন্য যদি কিছুটা  কাজ করতে পারি তবেই সার্থকতা।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: যারা ভবিষ্যতে বিসিএস ক্যাডার হতে চান তাদের জন্য আপনার পরামর্শ কি?
মো.আবু বক্কর সিদ্দিক: স্নাতক পর্যায়ে যেসব শিক্ষার্থীর একাডেমিক রেজাল্ট ভাল হয় বাস্তবিক অর্থে চাকরির বাজারে সর্বোচ্চ পর্যায়ে তারাই সফল হয়। এক্ষেত্রে দু-চারজন ব্যতিক্রমী মানুষকে সর্বদাই আমরা উদাহরণ হিসাবে দেখাই বা দেখাতে পছন্দ করি যে তারা একাডেমিকে খারাপ করেও বিসিএসে সর্বোচ্চ মাত্রায় সফল।  এই তুলনা সর্বাংশে সঠিক নয় এবং যুক্তিসংগতও নয়। আমরা স্নাতকের পাঠ থেকেই বাক্যের গঠন, শব্দার্থ ও শব্দের যথাযথ প্রয়োগ, উত্তরের ধরণ, গ্রাফিক্যাল উপস্থাপনা, প্রশ্নের উত্তরের পিছনে যৌক্তিক কারণ প্রদর্শনরীতি ও সার্বিক করণীয় সম্পর্কে সম্যক ধারণা লাভ করতে পারি যার প্রয়োগ প্রতিটি লিখিত পরীক্ষায় ভালো নম্বর পেতে সাহায্য করে। স্নাতকের ফলাফল একজন শিক্ষার্থীর নিয়মানুবর্তিতার বহি:প্রকাশ। আমার মতে একজন শিক্ষার্থীর স্নাতকের একেবারেই শুরু থেকে পাঠ্যক্রম ধরে ধরে বিসিএসের প্রস্তুতি নেওয়ার দরকার নেই। স্নাতকের ফলাফলের দিকে গুরুত্ব প্রদান করে চতুর্থ বর্ষ বা স্নাতকের শেষের দিক থেকে বিসিএসের প্রস্তুতি শুরু করাই যথেষ্ট।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ধন্যবাদ আপনাকে। আপনার আগামীর দিনের জন্য শুভ কামনা।
মো. আবু বক্কর সিদ্দিক: আপনাকেও আন্তরিক ধন্যবাদ।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence