বাজেট ভাবনা: কী বলছেন ছাত্রনেতারা

ছবিতে বাম থেকে তানভীর হাসান সৈকত, খোরশেদ আলম ও আকরাম হোসাইন
ছবিতে বাম থেকে তানভীর হাসান সৈকত, খোরশেদ আলম ও আকরাম হোসাইন  © ফাইল ছবি

২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের বাজেট পেশ করা হয়েছে জাতীয় সংসদে। গতকাল বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল জাতীয় সংসদে এই বাজেট পেশ করেন। এই বাজেট নিয়ে কী ভাবছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সংগঠনের ছাত্রনেতারা? বাজেট থেকে ছাত্রনেতাদের প্রত্যাশা এবং ভাবনা তুলে ধরেছেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের ঢাবি প্রতিনিধি খালিদ হাসান।

এবারের বাজেট স্বাধীন বাংলার সর্ববৃহৎ বাজেট যা একটি মাইলফলক স্পর্শ করেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে বাজেট সাইন করেছেন এটা দেশের প্রান্তিক, খেটে খাওয়া কৃষক, শ্রমিক, দিনমজুরের জন্য সহনশীল ও অত্যন্ত সামঞ্জস্যপূর্ণ। 

বাজেটে ঘাটতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাজেটে ঘাটতি থাকবে এটা স্বাভাবিক বিষয়। প্রতি বছরই এবং পৃথিবীর প্রায় সকল দেশের বাজেটই ঘাটতি বাজেট। তাছাড়া বৈশ্বিক সংকটের কথা আমাদের মাথায় রাখতে হবে। এসব কারণেও এবারের ঘাটতি কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে তবে এটা বিশেষ বড় কোন সমস্যা নয়।

শিক্ষাক্ষেত্রে বাজেট বৃদ্ধি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমার ব্যক্তিগত মতামত হলো- উচ্চশিক্ষার চেয়ে শিক্ষার সুযোগকে সার্বজনীন করা। উচ্চশিক্ষার জন্য খুব কম শিক্ষার্থী সুযোগ পান বা গিয়ে থাকেন। কিন্তু প্রান্তিক লেভেলের বাচ্চারা প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষা পাচ্ছে কি-না সেটা আমাদের নিশ্চিত করাই এই শিক্ষা বাজেট বৃদ্ধির অন্যতম লক্ষ্য। তাছাড়া এই বাজেটে মাদরাসা বোর্ড ও কারিগরি শিক্ষাকে আলাদা খাত বিবেচনা করে বাজেট প্রণয়ন করা হয়েছে। আমি মনে করি শিক্ষাক্ষেত্রে এই বাজেট বৃদ্ধির ফলে গবেষণার মানও বৃদ্ধি পাবে। অনেক শিক্ষার্থী একাডেমিশিয়ান হবার আগ্রহ প্রকাশ করবে।

তানভীর হাসান সৈকত, সাধারণ সম্পাদক ঢাবি ছাত্রলীগ।

আমরা অতীতে দেখে এসেছি এই সরকার উন্নয়নের নামে অর্থ পাচার, নেতাদের পকেট ভারী করে আসছে৷ আমরা বিশ্বাস করি  বাজেট হওয়া উচিত গণমানুষের জন্য, জনকল্যাণমুখী। কিন্তু আমরা আমাদের বাজেটে উলটো চিত্র খুঁজে পাই। আমাদের বাজেট মূলত ধনীদের বাজেট। উদাহরণ হিসেবে আমরা দেখতে পারি, আমাদের বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম অনেক চড়া। এখন মধ্যবিত্ত পরিবারের সংসার চালাতেও হিমশিম খেতে হচ্ছে। অপরদিকে জনগণের টাকায় গড়া পদ্মা সেতু পার হতে গুনতে হচ্ছে ব্যাপক পরিমাণে অর্থ। প্রতি বাজেটে আমরা দেখি দলীয় লোকদের প্রয়োজন যেসব পণ্যের সেগুলোর দাম কমে সাধারণ পণ্যের দাম বৃদ্ধি পায়। 

শিক্ষাক্ষেত্রে বাজেট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেটের দিকে তাকালে দেখতে পারি এখানের গবেষণার মান কতটা দূর্বল৷ গবেষণাগার থাকলেও গবেষণা হয় না বললেই চলে। শুধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা, কিছু বড় ভবন নির্মাণ ছাড়াও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের পকেটে টাকা ঢালা ছাড়া কোন উপকার হচ্ছে না। শুধু ঢাবিতেই এমন হলে বাইরের প্রতিষ্ঠানগুলোতে কি হচ্ছে সেটা বলার বাইরে। তাছাড়া আমরা পত্র-পত্রিকার মাধ্যমে জানতে পেরেছি ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসে জড়িয়ে পড়ছে। এই যুগে এসে শিক্ষার বাজেট বৃদ্ধি করে নিজেরাই প্রশ্ন ফাঁস করলে এটা শিক্ষামুখী বাজেট বলে মনে করা যাবে না।

আমরা বিশ্বাস করি শিক্ষাক্ষেত্রে বাজেট বাড়বে প্রতি বছর কিন্তু এর মানও পাশাপাশি বৃদ্ধি করাটা অত্যন্ত জরুরী। গবেষণার মান বৃদ্ধি করা উচিত। প্রাথমিক পর্যায় থেকে উচ্চপর্যায়ে শিক্ষার সামগ্রিক মান বৃদ্ধি করা উচিত। 

খোরশেদ আলম সোহেল, সভাপতি ঢাবি ছাত্রদল ।

আমরা এমন জনকল্যাণমুখী বাজেট দেখে এসেছি যেটা কি-না নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়েছে, গ্যাস, বিদ্যুৎ বা অন্যান্য জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়েছে। আমাদের ঋণ দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে যা কি-না অর্থমন্ত্রী কমানোর কোন উপায় বলছেন না। ঘাটতি দূর করার কোন পরিকল্পনা অর্থমন্ত্রী বলতে পারেননি। ছাত্রলীগের নেতারা যেই আনন্দ মিছিল করছে এই বাজেটকে জনকল্যাণমুখী বলছে, আমরা জানি ছাত্রলীগের কোন প্রোগ্রাম জনকল্যাণমুখী হয় না। তারা কোটা সংস্কার, ডাকসু নির্বাচন সহ অন্যান্য শিক্ষা অধিকারের প্রোগ্রামের বিপক্ষে গিয়ে অবস্থান নিয়ে থাকে। সেহেতু তাদের দাবি করা এই বাজেট জনকল্যাণমুখী এটা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন কথা ছাড়া কিছুই না।

শিক্ষাক্ষেত্রে বাজেট বৃদ্ধি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা সবসময়ই দেখি শিক্ষাক্ষেত্রে বিশাল বাজেট প্রণয়ন করা হলেও তার ৭০-৮০ ভাগ চলে যায় শিক্ষক-কর্মকর্তা- কর্মচারীদের বেতন ভাতা প্রদান করেই। যেহেতু কোন প্রতিষ্ঠানে কোন ছাত্র সংসদ নেই সেক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানগুলোতে ভালো মন্দ বলার মত কেউ না থাকায় প্রশাসন তেমন কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করে না।

করোনা মহামারী ও দ্রব্যমূল্যের ক্রমাগত দাম বৃদ্ধির ফলে শিক্ষা উপকরণ ও অন্যান্য ইলেকট্রনিক ডিভাইসের দাম বেড়েছে অনেক। ফলে শিক্ষার্থীরা ফোন বা ল্যাপটপ কিনে পড়াশোনাকে গতিশীল করতে হিমশিম খাচ্ছে। তাছাড়া প্রান্তিক জনগোষ্ঠীতে অনেক শিক্ষার্থী রয়েছেন যারা মৌলিক চাহিদা পূর্ণ করতে অক্ষম। ফলে তাদের শিক্ষা অসম্পূর্ণ থাকবে এবং অনেক শিক্ষার্থী ঝরে যাবার সম্ভাবনা রয়েছে যার সমাধান এই বাজেট প্রদান করতে পারেনি। আমরা মনে করি এই বাজেটে শিক্ষার্থীদের বিনা সুদে লোন দেয়ার ব্যবস্থা থাকা উচিত ছিলো। যার ফলে শিক্ষার্থী ঝরে যাওয়ার সম্ভাবনা কমে যেতো এবং সবাই সুন্দর শিক্ষার উপকরণ পেয়ে গতিশীল সম্ভাবনাময় দেশ গড়ায় প্রত্যয়ে এগিয়ে যেতে পারতো।

আকরাম হোসাইন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ঢাবি ছাত্র অধিকার পরিষদ।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence