আঙুলের ইশারায় চলবে কুয়েট উদ্ভাবিত ‘স্মার্ট হুইল চেয়ার’

স্মার্ট হুইল চেয়ার
স্মার্ট হুইল চেয়ার  © সংগৃহীত

আঙুলের ইশারায় চলতে সক্ষম এমন ‌‘স্মার্ট হুইল চেয়ার’ আবিষ্কার করেছে খুলনা প্রকৌশল প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। অনেক মানুষ আছেন যারা হাত দিয়ে চাকা ঘুরিয়ে অথবা জয়স্তিকের মাধ্যমে হুইল চেয়ার ব্যবহার করতে পারেন না। তাদের কষ্ট লাঘবে খুবই স্বল্পমূল্যে ক্রয়যোগ্য এই হুইল চেয়ার উদ্ভাবন করেছে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) একটি টিম।

২০২০ সালের জুন থেকে ২০২২ সালের এপ্রিল পর্যন্ত এই স্মার্ট হুইল চেয়ার নিয়ে গবেষণা করেন তারা। খুলনা প্রকৌশল প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ শেখ সাদীর তত্ত্বাবধানে, সিএসই শেষবর্ষের শিক্ষার্থী মো. রিপন ইসলাম ও মো. সাইফুল ইসলাম আঙুলের ইশারায় নিয়ন্ত্রিত স্মার্ট হুইল চেয়ারটি উদ্ভাবন করেছেন।

উদ্ভাবক টিমের সদস্যরা জানান, এই হুইল চেয়ারটির সামনে বা পেছনে চলাচলের সময় কোনো বাধা-বিপত্তি এলে তা ব্যবহারকারীকে আগে থেকেই সতর্ক করবে। কোনো কারণে যদি হুইল চেয়ারটি পড়ে যায় সে ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট মোবাইল নম্বরে খুদে বার্তার মাধ্যমে চেয়ার পড়ে যাওয়ার বিষয়টি অবগত করা হবে। যাতে দ্রুত চেয়ার ব্যবহারকারীকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়।

আরও পড়ুন: পাঙাশ থেকে উদ্ভাবিত হলো ফিশ বার্গার-আঁচার-চাটনি-কাটলেট।

তারা জানান, বাংলাদেশে আমদানি করা কিছু হুইল চেয়ার আছে, যার দাম অনেক বেশি। যা সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। বাংলাদেশি লোকাল প্রোডাক্ট যেমন ব্যয়বহুল, তেমনি কন্ট্রোলড ব্যবস্থা সীমিত এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থাও কম। তাই এ সমস্যাগুলো সমাধানের কথা চিন্তা করে স্মার্ট হুইল চেয়ার আবিষ্কার করা হয়েছে যা শুধু আঙুলের ইশারায় সেন্সর পরিধান বা স্পর্শ ছাড়াই নিরাপদে চেয়ারের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম।

তারা আরও জানান, বাজারজাত হলে এই হুইল চেয়ার সধারণ মানুষ স্বল্পমূল্যে কিনতে পারবে। এই হুইল চেয়ারটি আঙুলের ইশারা ছাড়াও যাতে জয়স্টিকসহ একাধিক উপায়ে নিয়ন্ত্রণ করা যায় এবং প্রয়োজনে দূরবর্তী স্থান থেকে আইওটি প্রযুক্তির মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা যায়, সেজন্য উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে।

এছাড়া ভবিষ্যতে হেলথ মনিটরিং, ভয়েস, চোখের ইশারা, মাথার নড়াচড়া বা মস্তিষ্ক দ্বারা নিয়ন্ত্রণের মতো অনেক গুরুত্বপূর্ণ ফিচার এতে যুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে।

কুয়েটের সিএসই ডিপার্টমেন্টের খণ্ডকালীন শিক্ষক (সাবেক শিক্ষার্থী) মো. রিপন ইসলাম জানান, সম্প্রতি প্রায় ৫০ জন সাধারণ মানুষ ও সাতজন চলাচলে অক্ষম ব্যক্তিকে নিয়ে পণ্যটি পরীক্ষা করা হয়েছে। তারা এ পণ্য ব্যবহারের মাধ্যমে সহজে চলাচল করতে পেরেছেন শুধু আঙুলের ইশারার মাধ্যমে।

এ ধরনের পণ্য এশিয়া উপমহাদেশে অপ্রতুল হওয়ায় এবং এর প্রয়োজনীয়তা ও ব্যবহারকারীর সংখ্যা অনেক বেশি হওয়ায় আমাদের প্রত্যাশা, পণ্যটি বাংলাদেশসহ আশপাশের দেশে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পাবে। সর্বোপরি আমরা বিশ্বের যেকোনো দেশে আমাদের পণ্য সরবরাহ করতে সক্ষম হব।

তিনি আরও বলেন, বর্তমান বাজারে আমাদের পণ্যের প্রতিযোগী হিসাবে আছে সাধারণ ইলেকট্রিক হুইল চেয়ার এবং বাইরে থেকে আমদানি করা হুইল চেয়ার। আমাদের লোকাল ইলেকট্রিক হুইল চেয়ারগুলো ব্যয়বহুল, গুণগত মানেও পিছিয়ে। আর আমদানি করা হুইল চেয়ারও অত্যন্ত চড়া দামের। আমরা আমাদের প্রোডাক্টের বাজার মূল্য ঠিক করেছি প্রায় ৩৫ হাজার টাকা। তবে আমরা খরচ আরও কমানোর চেষ্টা করছি। ব্যবহারকারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে উৎপাদন খরচ কমাতে পারব বলে আশা করি।


সর্বশেষ সংবাদ