৩৩ ঘণ্টা ধরে অনশনে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯ শিক্ষার্থী, অসুস্থ ৪
- চবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১১:৪৭ PM , আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:৩৮ AM
সাত দফা দাবিতে ৩৩ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে আমরণ অনশন করছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) নয় শিক্ষার্থী। অধিকার সচেতন শিক্ষার্থীবৃন্দের ব্যানারে বাম সংগঠন ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা এ কর্মসূচি পালন করছে। এর মধ্যে ৪ জন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বলে জানা গেছে।
গতকাল বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিসের সামনে এই অনশন কর্মকর্তা শুরু হয়।
অনশনরত ৯ শিক্ষার্থী হলেন, বাংলা বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী ওমর সমুদ্র, সংগীত বিভাগের ২০-২১ সেশনের শিক্ষার্থী ও বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি জশদ জাকির, স্পোর্টস সায়েন্স বিভাগের ২১-২২ সেশনের শিক্ষার্থী ও বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সাংগঠনিক সম্পাদক রাম্রা সাইন মারমা, ইংরেজি বিভাগের ২১-২২ সেশনের শিক্ষার্থী ও বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর রাজনৈতিক শিক্ষা ও সংস্কৃতি সম্পাদক আহমেদ মুগ্ধ, একই বিভাগের দপ্তর সম্পাদক নাইম শাহ জান, বাংলা বিভাগের ১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী ও গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের সমন্বয়ক ধ্রুব বড়ুয়া, মার্কেটিং বিভাগের ২১-২২ সেশনের শিক্ষার্থী ও নারী অঙ্গনের সংগঠক সুমাইয়া শিকদার, সংগীত বিভাগের ২১-২২ সেশনের শিক্ষার্থী ও বিপ্লবী ছাত্র যুব আন্দোলনের সংগঠক ঈশা দে এবং বাংলা বিভাগের ১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সুদর্শন চাকমা।
দীর্ঘক্ষণ অনশনে থাকায় ৪ জন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। সুমাইয়া সিকদার, ধ্রুব বড়ুয়া, জশদ জাকির ও সুদর্শন চাকমা। এরমধ্যে সুদর্শন চাকমাকে অনশনের স্থানে স্যালাইন দেওয়া হয়েছিলো এবং বাকি তিনজন বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেলে গেছেন চিকিৎসা নিতে।
তাদের সাত দফা দাবি হলো- ব্যর্থতার দায়ে প্রক্টরিয়াল বডির পদত্যাগ, আহত শিক্ষার্থীদের পূর্নাঙ্গ তালিকা প্রকাশ, নিরাপত্তাহীন অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের জন্য অবিলম্বে মানসম্মত ভ্রাম্যমাণ আবাসনের ব্যবস্থা কর এবং আবাসনচ্যুত শিক্ষার্থীদের মালামাল উদ্ধারে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ, উদ্ভূত পরিস্থিতিকে ঘিরে বিশেষভাবে চিহ্নিত শিক্ষার্থীদের সকলপ্রকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে প্রকৃত অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনা এবং নিরাপরাধ এলাকাবাসীদের হয়রানি বন্ধ করা, বৈপরীত্যমূলক দ্বন্দ্ব-সংঘাত নিরসনে উভয়পক্ষের অন্তর্ভুক্তিমূলক সমন্বয় কমিটি গঠন করা এবং ন্যূনতম তিন মাস পরপর মিটিং করা এবং সিন্ডিকেটকর্তৃক গৃহীত সিদ্ধান্ত এবং নিরাপদ ক্যাম্পাসের রোডম্যাপ প্রকাশ ও বাস্তবায়ন করা।
অনশনে বসা শিক্ষার্থী সুমাইয়া শিকদার বলেন, ধীরে ধীরে অনেকেই অসুস্থ হচ্ছে। মানসিকভাবে সবাই ফিট, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা আছি। দাবি আদায়ের আগে এখান থেকে উঠবো না।আমাদের এই অনশন ভাঙার জন্য আমাদের দুটো শর্ত- প্রথমত প্রক্টরিয়াল বডিকে পদত্যাগ বা অপসারণ করতে হবে এবং বাকি ছয়টা দাবি পূরণের জন্য যত দ্রুত সম্ভব সকল শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠকে বসতে হবে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান বলেন, শিক্ষার্থীদের অনশনের কথা শুনেই গতকাল আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক জি এস হাবিবকে দায়িত্ব দিয়েছি অনশনরত শিক্ষার্থীরা যেন এসে আমার কার্যালয়ে আমার সাথে যোগাযোগ করে। আমি রাত আটটা পর্যন্ত অপেক্ষা করলেও কোন শিক্ষার্থী আমার সাথে যোগাযোগ করেনি। অবশেষে আমি বাসায় ফিরে যাই আজকে যখন ক্যাম্পাসে আসি বিভিন্ন কাজ থাকার কারণে ওদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেনি।
তিনি বলেন, আমি যখন শুনেছি শিক্ষার্থীরা এখনো অনশনে তখনই আমি, উপ-উপাচার্য ড. কামাল উদ্দিন, ছাত্র উপদেষ্টা আনোয়ার সাইদসহ প্রায় পাঁচ ছয়জন শিক্ষক আসছি ওদের সাথে যোগাযোগ করার জন্য আমরা শিক্ষার্থীদের সাথে প্রায় দুই ঘণ্টা আলোচনা করার পরেও তাদের অনশন ভাঙাতে পারেনি। বারবার বলেছি আমরা আগামী রবিবার বিকাল তিনটায় তোমাদের সাথে বসে তোমাদের সকল দাবী দাওয়া শুনবো। কিন্তু তারা তাদের কথার উপর অটল আছে। তারা বারবার বলছে প্রক্টরের পদত্যাগ এবং দোষীদের বিচার নিশ্চিত করতে। বিশ্ববিদ্যালয় যেহেতু একটা নিয়ম আছে আমরা তদন্ত কমিটি গঠন করেছি এবং বিচার বিভাগীয় তদন্তও করেছি। তাহলে আমরা আবার কীভাবে ওদের দাবি অনুযায়ী কাজ করবো? আমাদের তদন্তের রিপোর্টে যদি প্রক্টর দোষী হয় তাহলে অবশ্যই তাকে অপসারণ করা হবে। কিন্তু শিক্ষার্থীরা সেটা মানতেছেনা।