সাতক্ষীরায় ২৩ মাসে চিকিৎসা নিলেন ২ হাজার থ্যালাসেমিয়া রোগী, নিঃস্ব বহু পরিবার

থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত দুই যমজ বোন
থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত দুই যমজ বোন   © টিডিসি ফোটো

গত ২৩ মাসে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরায় দ্রুত বাড়ছে জেনেটিক রোগ থ্যালাসেমিয়া। শুধু সদর হাসপাতালেই চিকিৎসা নিয়েছেন ২ হাজার ৩৬ জন রোগী। পরিস্থিতিকে উদ্বেগজনক বলে মনে করছে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। এই রোগ নিয়ন্ত্রণ রাখতে সাতক্ষীরা স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে ছেলে-মেয়েদের বিয়ের আগে থ্যালাসামিয়া পরিক্ষা করার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।

অন্যদিকে এই থ্যালাসামিয়া রোগের চিকিৎসা ব্যবস্থাও ব্যয়বহুল হওয়া আক্রান্ত রোগীর পরিবারগুলোও সর্বশান্ত হয়ে পড়েছে।

সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের ভর্তি রেকর্ড অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারী থেকে ২৯ নভেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত ২৩ মাসে ২ হাজার ৩৬ জন নারী, শিশু ও পুরুষ থ্যালাসামিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছে। এছাড়া সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালেও মাসে প্রচুর থ্যালাসামিয়া রোগে আক্রান্ত নারী ও শিশু চিকিৎসাসেবা নিয়ে যাচ্ছেন বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

সাতক্ষীরার সিভিল সার্জন মো. আব্দুস সালাম বলেন, থ্যালাসেমিয়া পুরোপুরি বংশগত। ছেলে বা মেয়ের যেকোনো একজন বাহক হলে বিয়ে করা যেতে পারে। কিন্তু দুজনই বাহক হলে থ্যালাসেমিয়া–আক্রান্ত শিশু জন্ম নেওয়ার ঝুঁকি থাকে। তাই সে ক্ষেত্রে বিয়ে এড়ানোর পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। তিনি আরও জানান, জেলার মানুষকে সচেতন করতে বিভিন্ন ইউনিয়নে প্রচারণা চালানো হচ্ছে।

থ্যালাসেমিয়ার দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা ব্যয় বহন করতে গিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন আশাশুনি উপজেলার বসুখালী গ্রামের মৎস্য ব্যবসায়ী লাভলু হোসেন। তাঁর যমজ দুই মেয়ে শিরিনা ও শিউলি তিন মাস বয়স থেকেই থ্যালাসেমিয়ায় ভুগছে। নিয়মিত রক্ত দেওয়া ও চিকিৎসার জন্য ব্যয় হয়েছে ২২ লাখ টাকার বেশি।

লাভলু বলেন, জমিজমা সব বেচে দিয়েছি। শেষ পর্যন্ত বসতভিটাও বিক্রি করতে হয়েছে। এখন নদীর চরে জায়গা করে নিয়ে থাকি। মেয়েদের রক্তের জন্য প্রতি মাসে দৌড়ঝাঁপ করতে হয়। ডাক্তার বলেছেন এ রোগ কখনো পুরোপুরি ভালো হবে না, যতদিন বাঁচবে ততদিন রক্ত লাগবে। চিকিৎসকেরা থ্যালাসেমিয়াকে বংশগত বললেও তিনি জানান, তাঁর পরিবারে কারও এ রোগ ছিল না।

কলারোয়া উপজেলার দক্ষিণ ভাদিয়ালী গ্রামের সিরাজুল ইসলামের দুই মেয়ে—জান্নাতুল নাহার পপি (২৬) ও সামিয়া নাজনিন (২১)—প্রতি মাসেই সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে রক্ত নিতে আসেন। সামিয়া জানান, তিনি তিন বছর বয়সে এবং তাঁর বড় বোন নয় বছর বয়সে থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত হন। ঢাকায় থ্যালাসেমিয়া হাসপাতাল ও সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে নিয়মিত চিকিৎসা নিতে হয়। দুই বোনের চিকিৎসায় মাসে ৪৫ থেকে ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়। এখন পর্যন্ত ৩৪–৩৫ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে, বলেন তিনি। চিকিৎসকেরা তাঁদের জানিয়েছেন, পিতা–মাতা দুজনই বাহক হওয়ায় তাঁরা জন্মের পর থেকেই রোগটি বহন করছেন।

সাতক্ষীরা সদর উপজেলার মুকুন্দপুর গ্রামের আনোয়ারা খাতুন (২১) আট বছর বয়সে থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত হন। তাঁর মা আশুরা খাতুন জানান, অস্বচ্ছল পরিবারের পক্ষে মেয়ের নিয়মিত রক্ত ও চিকিৎসা চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। এদিকে তাঁর স্বামী আব্দুল কুদ্দুসও সম্প্রতি স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে শয্যাশায়ী। ছেলের ঘর, স্বামীর চিকিৎসা আর মেয়ের রক্ত-সব মিলিয়ে চারদিকে ঋণ নিতে হচ্ছে, বলেন আশুরা।

সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ও প্রখ্যাত মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার কাজী আরিফ আহমেদ জানান, থ্যালাসামিয়া রোগটি সম্পুর্ন জেনেটিক্যালী বা পরিবার থেকে পরিবারে বিস্তার করে। এটি কখনোই নিরাময়যোগ্য না। আক্রান্ত রোগী যত বেঁচে থাকবে চিকিৎসার পাশাপাশি রক্ত দিয়ে যেতে হয়। এ এমন একটি নীরব  ঘাতকব্যাধি যে পরিবারে হবে, সেই পরিবারই সর্বশান্ত হয়ে যাবে। তবে রোগ উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরাতে খুব বেশি বেশি বিস্তার ঘটছে বলে জানান তিনি। তবে রোগটির স্থায়ী চিকিৎসা হলো বর্নমেরু প্রতিস্থাপন। ব্যয়বহুল এই চিকিৎসা যদি কেউ করতে পারে তাহলে দীর্ঘ সুস্থ্য থাকা হয়তো বা সম্ভব। এছাড়া রোগটি জেনেটিক্যালী সে ক্ষেত্রে বিয়ের সময় পরিবারে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়ে থাকে।

তিনি বলেন, বিয়ের আগে ছেলে-মেয়ের শরীরে থ্যালাসামিয়া রোগ বিষয় পরিক্ষা করে এক ছেলে বা মেয়ে যে কারো একজনের শরীরে থ্যালাসামিয়া বহন থাকলে তাদের বিয়ে দিতে হবে। তা না হলে ছেলে-মেয়ের উভয় যদি থ্যালাসামিয়া রোগবহন করে তাহলে পরিবর্ততে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মবহন করে চলবে এই ঘাকত ব্যাধি।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence