জ্ঞানের মাত্রা ৩-৮ হলে দেশের একমাত্র নিউরো হাসপাতালে মিলে ভর্তির সুযোগ
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ১৩ জুলাই ২০২৫, ০৮:১৭ PM , আপডেট: ০৬ আগস্ট ২০২৫, ০৫:২১ PM
ঢাকার শেরে বাংলা নগরে অবস্থিত দেশের একমাত্র বিশেষায়িত স্নায়ুবিজ্ঞান হাসপাতাল ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস অ্যান্ড হসপিটাল’-এ সহজে ভর্তি হওয়া যায় না—এমন অভিযোগ রোগীদের দীর্ঘদিনের। তবে কর্তৃপক্ষ বলছে, এই হাসপাতালে ভর্তির জন্য কিছু নির্ধারিত মানদণ্ড বা ‘ক্রাইটেরিয়া’ রয়েছে। রোগীর জ্ঞানের মাত্রা বা গ্লাসগো কমা স্কেল (GCS) ৮-এর নিচে হলে তাকে আশঙ্কাজনক বিবেচনা করা হয়। আর এই স্কোর ৩-এর নিচে নেমে গেলে রোগীর প্রাণে বাঁচার সম্ভাবনাও কমে যায়। তাই এসব আশঙ্কাজনক রোগীকেই অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ভর্তি করানো হয়।
নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা স্ট্রোকের রোগী সাজেদা খাতুনের (৫০) এক স্বজন জানান, ‘আমার আম্মু স্ট্রোক করলে আমরা দ্রুত এখানে (সরকারি হাসপাতালে) নিয়ে আসি। কিন্তু পর্যাপ্ত সিট না থাকায় ভর্তি করা সম্ভব হয়নি। অবশ্য এ রোগীর জ্ঞানের মাত্রা ছিল ১৫। পরে বাধ্য হয়ে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। তবে সেখানে খরচ অনেক বেশি।’
লক্ষ্মীপুর থেকে আসা আর এক রোগীর স্বজন বলেন, ‘সেবা কিছুটা ভালো, আবার কিছুটা খারাপও। শুরুতে সঙ্গে সঙ্গে সিট পাইনি। এক রাত থাকতে হয়েছে বোর্ডিংয়ে, যেখানে ভাড়া দিতে হয়েছে ৯০০ টাকা। পরে এখানকার বড় ডাক্তারদের সহযোগিতায় সিটের ব্যবস্থা হয়। ভর্তি বাবদ ২৩০ টাকা নেওয়া হয়েছে।’
রোগীদের স্বজনরা আরও অভিযোগ করে বলেন, হাসপাতালে ভর্তি হতে গিয়ে সিটের জন্য অতিরিক্ত অর্থ দিতে হয়েছে। তাদের ভাষায়, ‘সিটে উঠতে অনেকের কাছ থেকেই ১ হাজার ৫০০ টাকা করে নেওয়া হয়েছে। যিনি সিটে উঠাতে সহযোগিতা করেন, তার হাতেই এই টাকা তুলে দিতে হয়েছে।’ তারা আরও অভিযোগ করেন, রোগীর স্বাভাবিক চিকিৎসার বাইরে সিট পাওয়ার জন্য এই ধরনের লেনদেন নিয়মিত ঘটছে অথচ কর্তৃপক্ষ তা দেখেও ব্যবস্থা নিচ্ছে না। একজন স্বজন বলেন, ‘আমরা এখানে ২২ দিন ধরে ভর্তি আছি। এক পরিচিতজনের সহায়তায় ভর্তি হতে পেরেছি। সেবা পেতে কিছুটা সময় লাগলেও চিকিৎসা খারাপ নয়। ডাক্তার ও নার্সরা নিয়মিত রাউন্ডে আসেন এবং রোগীর খোঁজখবর নেন।'
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আফতাব রাসেল রোগীদের এ অভিযোগ মানতে নারাজ। তিনি বলেন, `সারা বাংলাদেশে এটাই একমাত্র নিউরো হাসপাতাল। আমাদের এখানে মোট শয্যা ৪০০টি। অথচ প্রতিদিন আউটডোরে রোগী আসে প্রায় ৪ হাজার। এর মধ্যে টিউমার, স্ট্রোক ও স্পাইনজনিত রোগীরা আলাদা আলাদা ইউনিটে আসে। টিউমার ও অ্যাডাল্ট টিউমারের জন্য বরাদ্দ বিছানা মাত্র ১৭টি কিন্তু প্রতিদিনই ২০০ থেকে ২৫০ জন রোগী আসেন। ফলে ভর্তি করাতে হিমশিম খেতে হয়।
তিনি আরও বলেন, স্ট্রোক রোগীদের আমরা আমাদের স্ট্রোক ইউনিটে ভর্তি করাই। তবে ভর্তির জন্য কিছু নির্দিষ্ট ক্রাইটেরিয়া বা মানদণ্ড আছে। যেমন, আমরা রোগীর জ্ঞানের মাত্রা (গ্লাসগো কমা স্কেল) যদি ৮-এর নিচে দেখি, তাহলে বুঝি রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক। আর ৩-এর নিচে হলে তার বেঁচে থাকার সম্ভাবনাও কমে যায়। আমরা চেষ্টা করি এসব আশঙ্কাজনক রোগীকেই অগ্রাধিকার দিয়ে ভর্তি করাতে।’