পুষ্টিগুণে ভরপুর জাতীয় ফল কাঁঠাল!
- শেরপুর প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ১৯ জুন ২০২৫, ০৮:২১ PM , আপডেট: ২১ জুন ২০২৫, ০৯:৫২ PM
কাঁঠাল বাংলাদেশের জাতীয় ফল হিসেবে পরিচিত। স্বাদ, ঘ্রাণ ও পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ এই ফল গ্রীষ্মকালীন মৌসুমি ফলগুলোর মধ্যে অন্যতম। প্রায় প্রতিটি গ্রামবাংলার বাড়ির আঙিনায় বা বাগানে কাঁঠাল গাছ দেখা যায়। বিশেষত শেরপুর, নালিতাবাড়ী, ময়মনসিংহ, নেত্রকোণা ও টাঙ্গাইল অঞ্চলে কাঁঠালের বাণিজ্যিক চাষ হয়ে থাকে। এসব অঞ্চলে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ কাঁঠাল উৎপাদন হয় যা স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করা হয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, কাঁঠাল ভিটামিন এ, বি, সি ও বিভিন্ন ধরনের মিনারেলে সমৃদ্ধ। প্রতি ১০০ গ্রাম কাঁঠালে থাকে প্রায় ৯৫ কিলোক্যালোরি শক্তি যা শিশুদের শারীরিক বৃদ্ধি, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়ক এবং হজমে উপকারী। এটি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সহায়তা করে এবং বয়স্কদের জন্যও উপকারী একটি ফল হিসেবে বিবেচিত। কাঁঠালের বীজও পুষ্টিকর এবং নানা ধরনের রান্নায় ব্যবহার করা হয়।
আরও পড়ুন: ৫ আগস্ট সরকারি ছুটি
কাঁঠাল চাষ খুব সহজ ও কম পরিশ্রমে হয়ে থাকে। একবার গাছ লাগালে সেটি বছরে বছরে ফলন দিতে থাকে। এর জন্য অতিরিক্ত সার, কীটনাশক বা পানি প্রয়োজন হয় না। কাঁঠাল চাষে খরচ কম হলেও লাভের পরিমাণ তুলনামূলক বেশি। তাই কৃষকেরা দিন দিন কাঁঠাল চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। কাঁঠাল থেকে প্রাপ্ত অর্থ কৃষকের জীবনে আর্থিক স্বাচ্ছল্য আনছে। শুধু ফলই নয়, কাঁঠালের পাতা, কাণ্ড ও বীজও নানাভাবে ব্যবহৃত হয়। কাঠালকাঠ ফার্নিচার তৈরি ও গৃহনির্মাণে ব্যবহার করা হয়। বীজ ভেজে বা রান্না করে খাওয়া হয় এবং পাতা পশুখাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
শেরপুর জেলার শ্রীবরদী, নকলা, ঝিনাইগাতী, নালিতাবাড়ী ও সদর উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে কাঁঠাল বিক্রি শুরু হয়েছে। বাজারে আকার, স্বাদ ও মানভেদে প্রতিটি কাঁঠাল ৫০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সরবরাহ বেশি হলে দাম কিছুটা কমে আসে, ফলে সাধারণ ক্রেতারা সহজেই এই সুস্বাদু ফল কিনতে পারছেন। অনেক কৃষক বাগান থেকেই পাইকারদের কাছে কাঁঠাল বিক্রি করে দেন, এতে পরিবহন খরচ কমে যায় এবং কৃষকরা লাভবান হন।
আরও পড়ুন: দেশের ১৩ অঞ্চলে ঝড়ের সতর্কতা
যথাযথ সংরক্ষণ সুবিধা না থাকায় প্রতিবছর দেশের উৎপাদিত কাঁঠালের বড় একটি অংশ নষ্ট হয়ে যায়। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, আধুনিক প্রক্রিয়াজাতকরণ, সংরক্ষণ ও রপ্তানির সুযোগ আরও সম্প্রসারিত করা গেলে কাঁঠাল দেশের অর্থনীতিতে আরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে। অনেক দেশেই এখন কাঁঠালের চাহিদা বাড়ছে, বিশেষত মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের বাজারে। তাই সরকার ও বেসরকারি উদ্যোক্তাদের এই সম্ভাবনাময় ফলের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে উদ্যোগী হওয়ার তাগিদ দিয়েছেন কৃষি বিশেষজ্ঞরা।
দেশের কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোও উন্নত জাতের কাঁঠাল উদ্ভাবনে কাজ করছে যাতে ফলন বেশি হয় এবং সংরক্ষণযোগ্যতা বাড়ে। পাশাপাশি কাঁঠাল থেকে বিভিন্ন খাদ্যপণ্য তৈরি (যেমন- কাঁঠাল চিপস, জ্যাম, জেলি) করে রপ্তানির সম্ভাবনাও বাড়ানো যেতে পারে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।