সর্বনিম্ন বেতন আসলে কত হতে পারে, কত হওয়া উচিত?
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ০২ নভেম্বর ২০২৫, ০৯:৩৩ PM , আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০২৫, ১১:০৫ AM
সরকারি চাকরিজীবীদের নতুন বেতন কাঠামো প্রণয়নের লক্ষ্যে কাজ শুরু করেছে পে কমিশন। ইতোমধ্যে বিভিন্ন সরকারি কর্মচারী সংগঠন তাদের প্রস্তাব জমা দিয়েছে। এসব প্রস্তাবের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় রয়েছে সর্বনিম্ন বেতন কত নির্ধারণ করা হতে পারে। সম্প্রতি পে কমিশনের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় সর্বনিম্ন বেতন ৩৫ হাজার টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী কল্যাণ ফেডারেশনও।
জানা গেছে, পে কমিশনের সঙ্গে মতবিনিময়ে অধিকাংশ সংগঠনই বা স্টেকহোল্ডার সর্বনিম্ন বেতন ৩৫ হাজার করার প্রস্তাব দিয়েছে। তারা অন্তত ৭০ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির কথা বলেছেন। সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকেও ৭০ থেকে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত বেতন বাড়তে পারে বলে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। একইভাবে বেসরকারি চাকরিজীবীদের বেতন বৃদ্ধিরও দাবি জানিয়েছে কয়েকটি সংগঠন।
বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী কল্যাণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সংগঠনটির মুখপাত্র আব্দুল মালেক দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, সর্বনিম্ন বেতন ১:৪ অনুপাতে গ্রেড সংখ্যা ২০ থেকে কমিয়ে ১২টিতে নিয়ে আসার জন্য আমরা প্রস্তাব করেছি। পাশাপাশি সর্বনিম্ন বেতন ৩৫ হাজার টাকা দাবি করেছি আমরা। এটি দাবি করার যুক্তি হলো ২০১৫ সালে সর্বশেষ পে স্কেল হয়েছে।
সর্বনিম্ন বেতন ৩৫ হাজার টাকা করার দাবি যৌক্তিকতা নিয়ে বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী কল্যাণ ফেডারেশনের মুখপাত্র আব্দুল মালেক বলছেন, ‘সর্বশেষ পে স্কেল ২০১৫ সালে হয়েছে। এরপর ২০২০ সালে হওয়ার কথা থাকলেও হয়নি। এতে কর্মচারীরা আর্থিকভাবে বিরাট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নিয়মিত হলে ২০২০ সালে বেতন ডাবল হতো। ২০২৫ সালে নরমাল পে স্কেল হলে সর্বনিম্ন ৩৩ হাজার টাকা হতো। এই ১০ বছর এবং দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতি সমন্বয় করেই আমরা এমন প্রস্তাব দিয়েছি।’
তার ভাষ্য, পে স্কেল কিন্তু ৫ বছর পর পর হওয়া উচিত। সে হিসেবে ২০২০ এবং ২০২৫ সালে পে স্কেল হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি। এই দুটি পে স্কেল না হওয়ার কারণে কর্মচারীরা আর্থিকভাবে বিশাল ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। তবে এবারের কমিশনের কার্যক্রমে তারা সন্তুষ্ট বলেও জানান।
সর্বনিম্ন বেতন ৩৫ হাজার টাকা করার দাবি যৌক্তিকতা নিয়ে আব্দুল মালেক বলছেন, ‘সর্বশেষ পে স্কেল ২০১৫ সালে হয়েছে। এরপর ২০২০ সালে হওয়ার কথা থাকলেও হয়নি। এতে কর্মচারীরা আর্থিকভাবে বিরাট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নিয়মিত হলে ২০২০ সালে বেতন ডাবল হতো। ২০২৫ সালে নরমাল পে স্কেল হলে সর্বনিম্ন ৩৩ হাজার টাকা হতো। এই ১০ বছর এবং দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতি সমন্বয় করেই আমরা এমন প্রস্তাব দিয়েছি।’
এখন বেতন ১:১০ অনুপাতে জানিয়ে তিনি বলেন, এটি বিরাট বৈষম্য। ১:৪ বাস্তবায়ন সম্ভব। তবে এটি হতেই হবে, এমন না। আমরা চাই, বৈষম্যটা কমে আসুক। পে স্কেল দিলে দাম কয়েকবার বাড়ে। ইতিমধ্যে বাড়িয়েছে। এটি মাথায় রেখেই পে স্কেল দিতে হবে। আগামী ৫ বছরের কথাও মাথায় রাখতে হবে।
এর সঙ্গে মিল রেখে প্রাইভেট খাতেও বেতন বৃদ্ধির আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, পে স্কেলে এটি রাখা হয় সাধারণত। এবার প্রাইভেট খাতও মতামতের জন্য ডাকা হয়েছে। একজন ডাল-ভর্তা-ভাত খেলেও প্রতি বেলা ৫০ টাকা হিসেবে তিনবেলা খেলে ১৫০ টাকা খরচ হয়। সরকার ছয়জনের হিসাব করতে বলেছে। তাদের মাসে খরচ আসে ২৭ হাজার টাকা।
আব্দুল মালেক বলেন, ডাল-ভাত-ভর্তা খেতেই যদি এ টাকা লাগে, তাহলে সারা মাস কি এ খাবারই খাবে। আমিষসহ বাসা ভাড়া, সন্তানের পড়াশোনা, বাবা-মায়ের চিকিৎসাসহ যাতায়াতসহ সব মিলিয়ে ৫০ হাজারেও হয় না। অনেকে পাচ্ছে ১৫ হাজার টাকা। অনেকে লজ্জা লুকিয়ে অটোরিকশাও চালান। মূল্যস্ফীতি যাতে না বাড়ে, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। এসব চিন্তা যখন থাকবে না, বেতন ভালো পাবেন, তখন তাদের সেবার মান বাড়বে।
২০১৫ সালের পে-স্কেলে সর্বনিম্ন বেতন ছিল ৮ হাজার ২৫০ টাকা, স্বাভাবিকভাবে নিয়মে আমরা যদি পে স্কেল পেতাম তাহলে ২০২০ সালে এটি দ্বিগুণ হয়ে ১৬ হাজার ৫০০ টাকা হতো। তেমনি ২০২৫ সালেও যদি আমরা একটি পে স্কেল পেতাম তাহলে এটি ৩৩ হাজার টাকায় যেত। এই দুটি পে স্কেল এবং ১০ বছরের দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি- এই সামঞ্জস্য রেখেই দুটি পে স্কেলকে সমন্বয় করেই আমরা ৩৫ হাজার টাকা দাবি করেছি।
জানা গেছে, অনলাইনে দুই হাজারের বেশি সংগঠন নতুন পে স্কেল নিয়ে তাদের মতামত জমা দিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মাধ্যমে যাচাই-বাছাই করে ২৫০-৩০০ সংগঠনের সঙ্গে মতবিনিময়ের করেছে কমিশন। গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সংগঠনগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় করে পে কমিশন। এর পরেই সব মতামত পর্যালোচনা করে সুপারিশের খসড়া করা হবে। তখন সব সদস্যের সম্মতিতে চূড়ান্ত করে জমা দেওয়া হবে সুপারিশ।
আরও পড়ুন: অক্টোবর মাসে সর্বোচ্চ লেনদেনের রেকর্ড করেছে নগদ
কমিশনের একাধিক সদস্য জানিয়েছেন, এই পে কমিশনের মূল লক্ষ্য হলো বেতন বৈষম্য হ্রাস করা। এজন্য বিদ্যমান গ্রেড কাঠামো পুনর্বিন্যাসের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গ্রেড কমিয়ে বৈষম্য কমানো হবে, এটি নিশ্চিত। তবে কতটি গ্রেড থাকবে এবং সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন বেতনের অনুপাত কী হবে, তা চূড়ান্ত সুপারিশ প্রকাশের সময় জানা যাবে।
আগামী জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারির দিকে পে-কমিশন প্রতিবেদন দিতে পারে বলে এর আগে জানিয়েছিলেন শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক সি আর আবরার। তিনি বলেছিলেন, ‘আমরা যে ইঙ্গিত পাচ্ছি তাতে ৫০ থেকে ৭০ শতাংশ কিংবা ১০০ শতাংশ পর্যন্ত বেতন বৃদ্ধি হতে পারে।’ গত ১৬ অক্টোবর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষকদের বাড়িভাড়াসহ বেতনের বিষয় নিয়ে এসব কথা বলেন তিনি।
একই সংবাদ সম্মেলনে কিছুদিনের মধ্যে জাতীয় বেতন স্কেল ঘোষণা হবে বলে জানিয়েছিলেনন শিক্ষা সচিব রেহানা পারভীন। তখন শিক্ষকদের বাড়িভাড়াসহ বেতনের বিষয়গুলোও সুরাহা হয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।