নবম গ্রেডের পদে ১২তম গ্রেড দিয়ে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি, ফিজিওথেরাপিস্টদের ক্ষোভ

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সামনে ফিজিওথেরাপিস্টদের মানববন্ধন
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সামনে ফিজিওথেরাপিস্টদের মানববন্ধন  © সংগৃহীত

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে ‘ফিজিওথেরাপিস্ট’ পদের শিক্ষাগত যোগ্যতা ও গ্রেড সংশোধনের দাবিতে মানববন্ধন করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১৩ মে) বাংলাদেশ ফিজিক্যালথেরাপি অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিএ) আহবানে পেশাজীবী, বাংলাদেশ ফিজিওথেরাপি স্টুডেন্ট ইউনিয়ন (বাপসু)  ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সামনে এ কর্মসূচি পালন পালন করেন।

এ সময় বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, বাংলাদেশে ‘ফিজিওথেরাপিস্ট’ পদের জন্য নবম গ্রেডের বিদ্যমান পদ ছিল এবং বর্তমানে রয়েছে। সেখানে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে ফিজিওথেরাপিস্টের ১২তম গ্রেড নির্ধারণ করা হয়েছে, যেটা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। এ সার্কুলার ফিজিওথেরাপি পেশাজীবীদের সংক্ষুব্ধ করছে।

সংগঠনের সহ-সভাপতি ডা. সফিউল্লাহ প্রধানিয়্যা বলেন, আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থায় ফিজিওথেরাপি একটি অন্যতম চিকিৎসা পদ্ধতি। বিশ্বব্যাপী এই চিকিৎসা ব্যবস্থার গুরুত্ব দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশেও দীর্ঘমেয়াদি ব্যথা, পঙ্গুত্ব , প্রতিবন্ধী রুগীদের সংখ্যা অনেক। কিন্তু স্বাস্থ্য সেক্টরে এক ধরনের ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, যারা এই স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় সরকারি হাসপাতালগুলোতে ‘ফিজিওথেরাপিস্ট’র নিয়োগ হতে দিচ্ছে না। কেওয়াক এবং ব্যবসায়ীদের দখলে এই চিকিৎসা ব্যবস্থা। ফলশ্রুতিতে ভুক্তভোগী বা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ভোক্তা ও রোগীরা। অনতিবিলম্বে এ ধরনের ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা উপরে ফেলতে হবে।

বাংলাদেশ ফিজিওথেরাপি স্টুডেন্ট ইউনিয়নের (বাপসু) সভাপতি মো. আশিকুর রহমান বলেন, শিক্ষার্থীরা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে দুটাই জিপিএ-৫ নিয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে চান্স পাওয়ার পর ফিজিওথেরাপির ওপর ৫ বছর মেয়াদি পড়ালেখা করে ফিজিওথেরাপিস্ট হতে হয়। সেখানে অদৃশ্য এক বাঁধায় আমাদের সরকারি হাসপাতালে বিভাগ নেই। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ‘ফিজিওথেরাপিস্ট’ পদের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন, যেটার শিক্ষাগত যোগ্যতায় ফিজিওথেরাপিস্ট এর শিক্ষাগত যোগ্যতা চাওয়া হয়নি। 

তিনি বলেন, বিজ্ঞানসহ উচ্চ মাধ্যমিক ও বাস্তব অভিজ্ঞতা দিয়েই যদি ফিজিওথেরাপি হওয়া যেত, তাহলে উচ্চ মাধ্যমিকের পর ভর্তি পরীক্ষায় যুদ্ধ  করে ভর্তি হয়ে ৫ বছর তো পড়ার দরকার হতো না। অনতিবিলম্বে এ ধরনের ‘ঘৃণ্য নিয়োগ বিজ্ঞাপন’ সংশোধনের দাবি জানান তিনি। অন্যথায় ছাত্রসমাজ এ বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন।

সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ডা. দেলোয়ার হোসেন চৌধুরী বলেন,বাংলাদেশে বিদ্যমান বাংলাদেশ রিহ্যাবিলিটেশন আইন -২০১৮ ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক কারিকুলাম অনুযায়ী সরকার স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ব্যাচেলর অব ফিজিওথেরাপি বা ব্যাচেলর অব সাইন্স ইন ফিজিওথেরাপি’ ডিগ্রি ৫ বছর মেয়াদী। উক্ত ডিগ্রিধারীরাই কেবলমাত্র ফিজিওথেরাপিস্টের বাইরে ফিজিওথেরাপিস্ট হওয়ার কোন সুযোগ নেই। 

কিন্তু জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ফিজিওথেরাপিস্ট পদের সার্কুলার হয়েছে, যেখানে শিক্ষাগত যোগ্যতা চাওয়া হয়েছে উচ্চ মাধ্যমিক বিজ্ঞান বিভাগের। বাস্তব অভিজ্ঞতা থাকলেই আবেদন করতে পারবে। এ তথ্য জানিয়ে তিনি বলেন, একজন উচ্চ মাধ্যমিক পাস শিক্ষার্থী কীভাবে ফিজিওথেরাপিস্ট হয়, এ ধরনের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় বিরাট সংকট সৃষ্টি করবে। অপচিকিৎসার স্বীকার হবেন দেশের সাধারণ নাগরিকরা।

আরও পড়ুন: ডাকসু নির্বাচন নিয়ে ছাত্র সংগঠনগুলোর সঙ্গে আলোচনায় ঢাবি প্রশাসন 

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে ‘ফিজিওথেরাপিস্ট’ পদের জন্য নবম গ্রেডের বিদ্যমান পদ ছিল এবং বর্তমানে রয়েছে। সেখানে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে ফিজিওথেরাপিস্টের ১২তম গ্রেড নির্ধারণ করা হয়েছে, যেটা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। এই সার্কুলার ফিজিওথেরাপি পেশাজীবীদের সংক্ষুব্ধ করছে। এ ধরনের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি বিজ্ঞানসম্মত আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা সর্বসাধারণের জন্য নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে অন্তরায় সৃষ্টি করবে।

তিনি বলেন, ফিজিওথেরাপি পেশাজীবী ও শিক্ষার্থীরা অনতিবিলম্বে ‘ফিজিওথেরাপিস্ট’ পদের এ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিটির শিক্ষাগত যোগ্যতা ও গ্রেড সংশোধনের দাবি জানাচ্ছে। তা না হলে এ বিষয়ে আরো কঠোর কর্মসূচি হবে এবং আইনানুগ ব্যবস্থা নেবেন তারা।

মানববন্ধনের পর ফিজিওথেরাপি পেশার জাতীয় সংগঠন বাংলাদেশ ফিজিক্যালথেরাপি অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিএ) সভাপতি ডা. মুহাম্মদ তৌহিদুজ্জামানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল জাতীয় মানসিক মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালকের কার্যালয়ে যান। তারা ‘ফিজিওথেরাপিস্ট’ পদের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির শিক্ষাগত যোগ্যতা ও গ্রেড সংশোধনের দাবিতে স্মারকলিপি দিয়ে আসেন।


সর্বশেষ সংবাদ