শিক্ষকদের বদলি না থাকায় হতাশ ছিলেন খাইরুল, ব্রেন স্ট্রোকে মৃত্যু
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৩:৪১ PM , আপডেট: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৫:৩৩ PM
বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বদলির ব্যবস্থা না থাকায় হতাশ ছিলেন কক্সবাজারের মুহাম্মদীয়া রিয়াজুল ইসলাম দাখিল মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক খাইরুল ইসলাম। ব্রেন স্ট্রোকে না ফেরার দেশে পারি জমিয়েছেন তিনি।
জানা গেছে, খাইরুলের বাড়ি দিনাজপুরে। তার এক ছেলে ও এক মেয়ে। তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তিতে নিয়োগের সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছিলেন খাইরুল। স্ত্রী, সন্তানদের ছেড়ে নিজ বাড়ি থেকে প্রায় ৮০০ কিলোমিটার দূরে চাকরি করার কারণে হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়েছিলেন। এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বদলি না থাকায় এই হতাশা বেড়ে গিয়েছিল কয়েকগুণ বলে দাবি খাইরুলের সহকর্মীদের।
খাইরুলের বাল্যবন্ধু মাসুম জানান, অনেকদিন ধরেই বদলির জন্য চেষ্টা করছিলেন খাইরুল। সন্তানদের ছেড়ে কক্সবাজারে চাকরি করতে তার কষ্টের কথাও জানিয়েছিলেন। বদলি নিয়ে সরকারের মধ্যে আলোচনা হওয়ায় আশার আলো দেখেছিলেন। তবে বার বার সেই সভা স্থগিত হওয়ায় মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন তিনি।
তিনি আরও বলেন, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বদলি নিয়ে ২০২৩ সালের ২২ অক্টোবর সভা হয়েছিল। পরবর্তীতে চলতি বছর জানুয়ারির শুরুতে সভা হওয়ার কথা থাকলেও তা স্থগিত করা হয়। পরবর্তীতে ৩০ জানুয়ারি সভার তারিখ নির্ধারিত হলেও সেটিও স্থগিত করা হয়। এ সভা স্থগিতের কারণে হতাশ হয়ে পড়েন খাইরুল। সেই হতাশা থেকে বুধবার রাতে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে কক্সবাজার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
এদিকে সন্তানদের ছেড়ে থাকা নিয়ে হতাশার কথা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকেও শেয়ার করেছেন খাইরুল। সম্প্রতি ছেলেমেয়ের ছবি পোস্ট করে তিনি লেখেন, ‘তোদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কি আমি কোনোদিনও গড়তে পারবো না? বাসা থেকে বের হয়ে ছুটছি শুধু তোদের জন্য, নিজের পরনের শার্ট আর পায়ে জুতো পরারও কথা ভাবিনি কোনোদিন। শুধু তোদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ আর সমাজে একজন ভালো মানুষ হিসেবে দেখবো বলে।’ মৃত্যুর একদিন আগেও ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন খাইরুল। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘শিক্ষকতা এখন একটি ঝুঁকিপূর্ণ পেশা।’
এ বিষয়ে বদলি প্রত্যাশী শিক্ষক সানোয়ার হোসেন বলেন, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের দুঃখের শেষ নেই। সহকারী শিক্ষকদের কষ্ট সবচেয়ে বেশি। মাত্র সাড়ে ১২ হাজার টাকা দিয়ে নিজ বাড়ি থেকে শত শত কিলোমিটার দূরে চাকরি করতে হয় তাদের। এই অর্থ দিয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে বাঁচা কষ্টের। সরকার বদলির প্রতি সুনজর দিলে খাইরুলের মতো অনেক শিক্ষক পরিবার নিয়ে বাঁচতে পারবে।