ফুটবল বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো খেলবে যেসব দেশ
- টিডিসি স্পোর্টস
- প্রকাশ: ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:১৪ PM
যুক্তরাষ্ট্র, মেক্সিকো ও কানাডার যৌথ আয়োজনে প্রথমবারের মতো ৪৮ দল নিয়ে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ফিফা বিশ্বকাপ ২০২৬। ফলে এবার অনেক দেশই প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ খেলার স্বাদ পাবে। ফিফার ২১১ সদস্য দেশের মধ্যে ১৩২টি দল কোনোদিনই বিশ্বকাপের মঞ্চে উঠতে পারেনি।
প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ খেলবে যেসব দেশ:
কেপ ভার্দে:
ফিফা বিশ্বকাপের কোনও আসরে এবারে প্রথম বারের মতো খেলছে কেপ ভার্দে। আফ্রিকার পশ্চিম উপকূলের কাছে ছোট্ট দ্বীপপুঞ্জ কেপ ভার্দের জনসংখ্যা মাত্র ৬ লাখ। অক্টোবর মাসে তারা বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে, ২০১৮ সালের আইসল্যান্ডের পর বিশ্বের দ্বিতীয় সবচেয়ে ছোট দেশ হিসেবে ফাইনালে পৌঁছানোর কীর্তি গড়েছিল। তবে এই রেকর্ড দ্রুত হারিয়ে যায় কিউরাসাওর কাছে।
কেপ ভার্দি এই বিশ্বকাপে স্থান পেতে এসওয়াটিনি-কে হারায় এবং এটি তাদের শেষ ৪০ বছরে ফুটবলে অভূতপূর্ব উত্থানের প্রমাণ। তারা ১৯৯০ সালে প্রথমবার বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব খেলেছিল, এবং ধীরে ধীরে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কেপ ভার্দের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত খেলোয়াড় খুঁজে নেওয়ার মাধ্যমে গ্লোবাল টুর্নামেন্টে পৌঁছানোর পথে এগিয়েছে।
বর্তমান স্কোয়াডে আছে ছয় জন নেদারল্যান্ডস জন্ম নেয়া খেলোয়াড় এবং একজন আইরিশ, শ্যামরক রোভার্সের ডিফেন্ডার রবার্তো লোপেস।
৩৩ বছর বয়সী লোপেস ডাবলিনে জন্ম হলেও তার পিতার মাধ্যমে কেপ ভার্দের হয়ে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছেন। আরও মজার ব্যাপার পেশাদার কাজের জন্য পরিচিত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম লিংকডইন ব্যবহার করে দলটি তাকে নিয়োগ করেছিল।
কিউরাসাও:
ছোট্ট ক্যারিবিয়ান দ্বীপ কিউরাসাও বিশ্বকাপে খেলার ইতিহাসে সবচেয়ে ছোট দেশ হয়ে উঠল জ্যামাইকার সাথে ড্র করে। কিউরাসাও এর জনসংখ্যা মাত্র ১ লাখ ৫০ হাজার এবং ১৭১ বর্গমাইল এলাকা, যা আইল অফ ম্যানের থেকেও ছোট।
কিউরাসাওর কোচ ডিক অ্যাডভোকাট ব্যক্তিগত কারণে ম্যাচে উপস্থিত ছিলেন না, তবে ৭৮ বছর বয়সে তিনি বিশ্বকাপে অংশ নেওয়া সবচেয়ে বয়সী কোচ হিসেবে ইতিহাস গড়বেন।
কিউরাসাও ভেনেজুয়েলার উপকূল থেকে ৩৭ মাইল দূরে অবস্থিত এবং ২০১০ সালে নেদারল্যান্ডস অ্যান্টিলিসের বিলুপ্তির পর নেদারল্যান্ডসের অধীনে স্বতন্ত্র দেশ হিসেবে পরিচিতি পায়। দশ বছর আগে তারা ফিফা র্যাংকিংয়ে ১৫০তম স্থানে ছিল, এখন ৮২তম।
জর্ডান:
দীর্ঘ পথ পার হলেও জর্ডান শেষ পর্যন্ত বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করল। আরব দেশটি প্রথমবার ৪০ বছর আগে বাছাইপর্বে অংশগ্রহণ করেছিল। এবারে এএফসি গ্রুপ বি–তে দক্ষিণ কোরিয়ার পেছনে রানার-আপ হয়ে ২০২৬ সালের টুর্নামেন্টে খেলার যোগ্যতা নিশ্চিত করল।
প্রাক্তন টটেনহ্যাম, পোর্টসমাউথ ও কুইন্স পার্ক রেঞ্জার্সের কোচ হ্যারি রেডনাপ জর্ডানের দায়িত্বে ছিলেন ২০১৮ সালের রাশিয়ার বিশ্বকাপের দুটি বাছাই ম্যাচের জন্য। রেডনাপের অধীনে জর্ডান ৮-০ গোল ব্যবধানে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে জয় পায়, আর অস্ট্রেলিয়ার কাছে ৫-১ গোল ব্যবধানে হার হয়।
উজবেকিস্তান:
এশিয়ার বাছাইপর্ব থেকে প্রথমবার বিশ্বকাপে পৌঁছানো আরেকটি দেশ হলো উজবেকিস্তান। উজবেকিস্তান আগেও বিশ্বকাপে খেলার খুব কাছাকাছি গিয়েছিল- ২০০৬ সালের জার্মানি এবং ২০১৪ সালের ব্রাজিলে হওয়া বিশ্বকাপ টুর্নামেন্টের বাছাইপর্বের শেষ রাউন্ডে তারা বাদ পড়েছিল।
দলে রয়েছে কিছু প্রতিভাবান খেলোয়াড়, যার মধ্যে অন্যতম ম্যানচেস্টার সিটির ডিফেন্ডার আবদুকোদির খুসানভ, যিনি প্রথম উজবেক খেলোয়াড় হিসেবে প্রিমিয়ার লিগে খেলেছেন।
উল্লেখ্য, প্রথমবারের মতো একসঙ্গে তিন দেশের যৌথ আয়োজনে এটি হবে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ও বিস্তৃত বিশ্বকাপ। তিন দেশই উন্নত অবকাঠামো, আধুনিক স্টেডিয়াম ও বিশাল দর্শকসমর্থন নিয়ে প্রস্তুত, যা টুর্নামেন্টকে করবে আরও বর্ণিল ও বাণিজ্যিকভাবে সফল।
মেক্সিকো এরই মধ্যে তৃতীয়বারের মতো বিশ্বকাপ আয়োজন করে রেকর্ড গড়তে যাচ্ছে, আর যুক্তরাষ্ট্র তাদের বিশাল ক্রীড়া বাজার ও দর্শক সংস্কৃতির পরিবর্তনের সুযোগ দেখছে।
কানাডা প্রথমবার আয়োজন করবে ফিফা বিশ্বকাপ। সব মিলিয়ে উত্তর আমেরিকার তিন দেশের এ যৌথ আয়োজন ফুটবলের বৈশ্বিক বিস্তৃতি, দর্শক সংখ্যা এবং সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যকে নতুন মাত্রা দেবে, এমনটাই আশা করছে ফুটবলবিশ্ব।
সূত্র: বিবিসি বাংলা