শীতের ৭টি সবজি ও তাদের অতুলনীয় পুষ্টিগুণ

শীতকালীন সবজি
শীতকালীন সবজি  © সংগৃহীত

শীত মৌসুমে বাজার ভরে ওঠে নানা পুষ্টিগুণে ভরপুর সবজিতে। এসব শীতকালীন সবজিতে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন, খনিজ, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও খাদ্যআঁশ যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে, হজম শক্তি উন্নত করতে এবং সর্দি-কাশি, ইনফ্লুয়েঞ্জা বা ঠান্ডাজনিত রোগ থেকে সুরক্ষা দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। চলুন জেনে আসি শীতকালীন কোন সবজিতে কোন ধরেণের ভিটামিন পাওয়া যায়। 

ফুলকপি
শীতকালীন সবজি ফুলকপিতে রয়েছে ভিটামিন-এ, বি, ও সি। এছাড়াও আছে আয়রন, ফসফরাস, পটাশিয়াম ও সালফার। গর্ভবতী মা, শিশু এবং যারা অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম করে তাদের জন্য ফুলকপি বেশ উপকারী। জ্বর, কাশি, সর্দি প্রতিরোধেও এটি বেশ কার্যকারী। এতে থাকা ‘সালফোরাফোন’ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এতে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড রয়েছে, যা কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। এটি উচ্চ ফাইবার সম্পন্ন, যা কোষ্ঠকাঠিন্যসহ পেটের নানা সমস্যা দূর করে। 

গাজর
শীতকালীন সবজি হিসেবে গাজর বেশ জনপ্রিয়। এটি কাঁচা এবং রান্না দুইভাবেই খাওয়া যাবে। এতে রয়েছে ভিটামিন-এ, বি, বি২, বি৩, সি, কে এবং বিটা-ক্যারোটিন সহ আরও উপাদান। এছাড়াও লুটেইন, জেক্সানথিন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট চোখ ভালো রাখতে এবং শরীরের রোগপ্রতিরোধে ভূমিকা রাখে। ছাড়াও গাজর উচ্চ ফাইবার সম্পন্ন ও কম ক্যালরি সম্পন্ন হওয়াই, এটি কোষ্ঠকাঠিন্য, কোলেস্টেরল কমাতে ও ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী।

টমেটো
টমেটোতে রয়েছে প্রচুর ঔষধি গুণাগুণ। এতে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বিটা-ক্যারোটিন, ভিটামিন সি, ভিটামিন ই, লাইকোপেন ইত্যাদি। এগুলো হৃদ্‌রোগ, চোখের রোগ, কিছু ক্যানসার, স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে ও ত্বক ভালো রাখতে সাহায্য করে। এ ছাড়া, টমেটোতে ভিটামিন কে, পটাশিয়াম রয়েছে, যা আমাদের বেশির ভাগ ব্যক্তির ঘাটতি রয়েছে। এগুলো হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে ও রক্ত জমাট বাঁধা ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে ও কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। নিয়মিত টমেটো খেলে পাকস্থলী ও অন্ত্র সুস্থ ও সবল থাকে। 

শিম
শিম প্রোটিনের উৎস, যা পেশি গঠনে ও শীতে রোগপ্রতিরোধে সাহায্য করে। এ ছাড়া শিমে থাকা ফাইবার হজমশক্তি বৃদ্ধি ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। শিমে রয়েছে পটাশিয়াম, ফোলেট ও কপার, যা রক্তচাপ ও হৃদ্‌রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।

মটরশুঁটি
মটরশুঁটিতে ক্যালরি কম ও ফ্যাট কম থাকায় ওজন কমাতে ও ডায়াবেটিস রোগীদের ও হৃদ্‌রোগীদের জন্য উপকারী। এ ছাড়া রয়েছে ফাইবার, প্রোটিন, ভিটামিন বি৬, ফোলেট ও পটাশিয়াম, যা হজমশক্তি বৃদ্ধি, কোলেস্টেরল কমাতে, হাড় মজবুত করতে সাহায্য করে। এতে পলিফেনাল থাকে, যা পাকস্থলী ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতেও সাহায্য করে।

বিটরুট
বিটরুট কাঁচা এবং রান্না করে দুভাবেই খাওয়া যায়। এতে রয়েছে খনিজ, ভিটামিন, আয়রন, জিংক, আয়োডিন, ক্যালসিয়াম, নাইট্রেট, বেটালাইন, ফাইবার ও ফোলেট। এটি মস্তিষ্কের রক্ত চলাচল বাড়িয়ে দেয় এবং মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে। পাশাপাশি উচ্চ রক্তচাপ কমাতে, রক্তস্বল্পতা, অস্টিওআর্থ্রাইটিস, কোষ্ঠকাঠিন্য, মস্তিষ্কের কার্যকারিতায়, ঘুমের মান উন্নত করতে সাহায্য করে।

পালংশাক
পালংশাকে কার্বোহাইড্রেট ও ক্যালরি কম। এতে রয়েছে বিভিন্ন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন সি, আয়রন ও ক্যালসিয়াম, ফোলেট, যা শিশুর বুদ্ধি ও বিকাশে, জন্মগত ত্রুটি রোগপ্রতিরোধে ও সাহায্য করে। এতে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট কোষের ক্ষয় রোধ, ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায় ও রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। 

নিয়মিত এসব সবজি খেলে শরীরে প্রয়োজনীয় ভিটামিন-মিনারেল পূরণ হয়, ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে, পাশাপাশি সার্বিক স্বাস্থ্যের উন্নতিও হয়। শীতের সবজি তাই শুধু সুস্বাদুই নয়, বরং একটি প্রাকৃতিক পুষ্টির ভান্ডার।


সর্বশেষ সংবাদ