শিশুরা খাচ্ছে এনার্জি ড্রিংকস, শরীরে জমছে বিষ!

এনার্জি ড্রিংকস
এনার্জি ড্রিংকস   © সংগৃহীত

রঙিন বোতল। চমকপ্রদ বিজ্ঞাপন। স্বাদে মজাদার। দোকানে গেলে বাচ্চার চোখ জ্বলজ্বল করে ওঠে। মা-বাবারাও ভাবেন, ‘এনার্জি ড্রিংক তো! ক্ষতি কী?’ অথচ এই এক বোতল পানীয়ই শিশুর ঘুম কেড়ে নিচ্ছে, আচরণে আনছে অস্থিরতা। স্কুলপড়ুয়া কিশোরের মনোযোগে ছেদ, চুপিসারে শরীরের বৃদ্ধি রোধ করছে এটি। চিকিৎসকরা বলছেন, এ এক নিঃশব্দ বিপদ যা আমরা বুঝতেই পারছি না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব পানীয়তে রয়েছে উচ্চমাত্রার ক্যাফেইন, চিনি, টাইরোসিন, গ্লুকুরোনোল্যাকটোন, এবং আসপারটেম যা শিশুদের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর হতে পারে।

কী আছে এই 'এনার্জি' ড্রিংকে

এনার্জি ড্রিংকের মূল উপাদান হলো ক্যাফেইন, যা স্বাভাবিকভাবে কফি, চা ও চকোলেটেও পাওয়া যায়। তবে এনার্জি ড্রিংকে এই মাত্রা অনেক বেশ। এক ক্যানেই প্রায় তিন কাপ কফির সমান ক্যাফেইন থাকে। এছাড়াও থাকে:

চিনি: অতিরিক্ত চিনি স্থূলতা, ডায়াবেটিস ও দাঁতের ক্ষয় ঘটায়।

আসপারটেম: এটি একটি কৃত্রিম মিষ্টি, যা দীর্ঘমেয়াদে স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতি করতে পারে।

টাউরিন ও গ্লুকুরোনোল্যাকটোন: এদের কার্যকারিতা নিয়ে এখনও দ্বিমত রয়েছে, কিন্তু শিশুদের শরীরে এদের বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা যেতে পারে।

আরও পড়ুন: হৃদ্‌রোগ-হাড় ক্ষয়ের নীরব ঘাতক লবণ, কাঁচা লবণে কি ঝুঁকি আরও বেশি?

উপকার নয়, অপকারই বেশি

যুক্তরাজ্যের ইয়র্ক ইউনিভার্সিটির এক গবেষণা বলছে, নিয়মিত এনার্জি ড্রিংক গ্রহণ করা শিশুদের মধ্যে দেখা যায়: ঘুমের ব্যাঘাত, আচরণগত সমস্যা (স্কুলে খারাপ ব্যবহার), উচ্চ রক্তচাপ, মানসিক অস্থিরতা ও উদ্বেগ, হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া, অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা। 

এছাড়াও এক জরিপে দেখা গেছে, ১০ থেকে ১৭ বছর বয়সীদের মধ্যে প্রতি চারজনের একজন নিয়মিত এনার্জি ড্রিংক পান করে।

বিশ্বজুড়ে নিষেধাজ্ঞার দাবি

অনেক দেশ ইতিমধ্যেই শিশুদের জন্য এনার্জি ড্রিংক বিক্রির ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। যেমন: লাটভিয়া ও লিথুয়ানিয়ায় ১৮ বছরের নিচে বিক্রি নিষিদ্ধ, যুক্তরাজ্যের বেশ কিছু সুপারমার্কেট শিশুদের কাছে এসব পানীয় বিক্রি বন্ধ করেছে। নরওয়ে ও সুইডেনে নির্দিষ্ট বয়সের নিচে বিক্রি সীমিত করা হয়েছে। 

আরও পড়ুন: টি ব্যাগের যত জাদু: জানলে আর ফেলে দিতে পারবেন না

আমাদের করণীয়

এ বিষয়ে অভিভাবকদের সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। শিশুদের খাদ্যাভ্যাসে সচেতনতা আনতে হবে। স্কুল, কলেজে সচেতনতামূলক প্রচার চালানো দরকার। সরকারি পর্যায়ে নীতিমালা প্রণয়ণ ও নিয়ন্ত্রণ জরুরি।

শিশুদের শরীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য প্রয়োজন পুষ্টিকর খাবার, বিশ্রাম ও খেলাধুলা। এনার্জি'র লোভনীয় মোড়কে থাকা এই পানীয়গুলো আদতে বিষ। সুস্থ প্রজন্ম গঠনের স্বার্থে এখনই সচেতন না হলে, এই ছোট্ট কৌটা বড় বিপদের কারণ হতে পারে।


সর্বশেষ সংবাদ