চেরি যখন শুধু ফল নয়, রূপ-স্বাস্থ্যের এক ম্যাজিক

চেরি
চেরি  © সংগৃহীত

চেরি—নাম শুনলেই যেন রঙিন এক গ্রীষ্মের ছবি চোখের সামনে ভেসে ওঠে। ঢাকায় যাঁরা কেক বা পেস্ট্রির টপিংয়ে ব্যবহার হওয়া চকচকে লাল ফলটির সঙ্গে পরিচিত, তাঁদের কাছে চেরি একরকম। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে গাছপাকা রসালো চেরির স্বাদ, গন্ধ আর পুষ্টিগুণ যেন সম্পূর্ণ ভিন্ন এক অভিজ্ঞতা।

চেরির মৌসুম অল্প সময়ের জন্য আসে, আবার হারিয়েও যায় নিঃশব্দে। ইউরোপে এপ্রিলের শেষ থেকে জুলাইয়ের মধ্যভাগ পর্যন্ত বাজারে পাওয়া যায় এই মনকাড়া ফল। তবে এই স্বল্প সময়ের মধ্যেই চেরি তার রঙ, স্বাদ আর গুণাগুণ দিয়ে ফলপ্রেমীদের হৃদয় জয় করে নেয়।

বিশ্বজুড়ে প্রায় ১,২০০ প্রজাতির চেরি থাকলেও বাণিজ্যিকভাবে চাষ হয় মাত্র ২০টি জাতের। এর ব্যবহার সীমাবদ্ধ নয় শুধু খাওয়ার মধ্যেই—চেরি দিয়ে তৈরি হয় জ্যাম, জেলি, কেকের ফিলিং, এমনকি সালাদেও ব্যবহৃত হয় এই ফলটি। চেরির ইতিহাসও কম প্রাচীন নয়। প্রস্তর যুগে ইউরোপ ও এশিয়ার গুহাচিত্রে চেরির উপস্থিতি ধরা পড়ে, আর খ্রিস্টপূর্ব ৩০০ সালে গ্রিক দার্শনিক থিওফ্রাস্টাস তাঁর বই ‘হিস্টোরিয়া প্ল্যান্টারাম’-এ প্রথমবারের মতো চেরির কথা লেখেন।

চেরি শুধু রঙে-রূপে নয়, গুণেও অনন্য। চলুন জেনে নেওয়া যাক, এই ছোট্ট ফলটি কেন আপনার প্লেটের অতিথি হতে পারে—

চেরি রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল ও ট্রাইগ্লিসারাইড কমিয়ে হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি কমায়। এতে আছে প্রচুর পটাশিয়াম, যা অতিরিক্ত সোডিয়াম সরিয়ে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। হৃদয়বান্ধব ফল বলতেই পারে একে।

ত্বক ও চেহারায় উজ্জ্বলতা
চেরিতে রয়েছে ভিটামিন এ, বি, সি ও ই, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আর পলিফেনলস। এই উপাদানগুলো চুল পড়া রোধ করে, বয়সের ছাপ কমায় এবং ত্বকে এনে দেয় প্রাকৃতিক লাবণ্য।

ঘুম ও প্রশান্তির বন্ধু
চেরির আরেকটি অসাধারণ গুণ হলো এতে থাকা মেলাটোনিন—এক ধরনের হরমোন, যা মানসিক চাপ দূর করে শান্ত ঘুম নিশ্চিত করে। ফলে চেহারায় ফিরে আসে সতেজতা ও প্রাণবন্ত ভাব।

গেঁটে বাত ও প্রদাহ কমায়
চেরি ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা কমিয়ে গেঁটে বাতের উপশমে সাহায্য করে। যারা দীর্ঘদিন ধরে এই সমস্যায় ভুগছেন, তাদের জন্য চেরি হতে পারে সুস্বাদু ও প্রাকৃতিক সমাধান।

ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য তুলনামূলক নিরাপদ
চেরির গ্লাইসেমিক ইনডেক্স মাত্র ২২, যা অনেক কম। এ কারণে এটি তুলনামূলকভাবে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য নিরাপদ ফল হিসেবে বিবেচিত। তবে অবশ্যই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে খাওয়া উচিত।

গর্ভবতী নারীদের জন্য সহায়ক
চেরি ভ্রূণ ও প্লাসেন্টার মধ্যে রক্ত চলাচল ঠিক রাখে। সেই সঙ্গে ঠান্ডা ও সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়তেও সাহায্য করে। উপরন্তু ভালো ঘুম ও প্রশান্তির জন্যও এটি উপকারী।

হজমে সহায়ক
চেরিতে ফাইবার আছে প্রচুর, যা অন্ত্রের গতিবিধি স্বাভাবিক রাখে। মাত্র ১০টি চেরি ফলেই পাওয়া যায় প্রাপ্তবয়স্কের দৈনিক ফাইবার চাহিদার প্রায় ১০ শতাংশ।

এইসব গুণের পাশাপাশি চেরি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেও সহায়ক। করোনার মতো অতিমারির সময়ে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ানো সবচেয়ে কার্যকর উপায়—এমন মতই দিয়েছেন চিকিৎসক ও পুষ্টিবিদরা। কাজেই মৌসুমি এই ফল যখন বাজারে পাওয়া যাচ্ছে, তখন একে খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।

ফরাসি ভাষায় একটি বিখ্যাত প্রবাদ আছে: “La cerise sur le gâteau”—অর্থাৎ কেকের ওপরে চেরি; সবকিছুর পর অতিরিক্ত পাওয়া কোনো সুন্দর উপহার। চেরি যেন সত্যিকার অর্থেই আমাদের খাদ্যতালিকার ‘সোনায় সোহাগা’ ফল।


সর্বশেষ সংবাদ

X
APPLY
NOW!