সাকিব আল হাসানের যত অর্জন

সেই ১৯ বছর বয়সে ২০০৬ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যাত্রা শুরু। হারারে থেকে শুরু করে মিরপুর, মুলতান, লর্ডস, ওল্ড ট্রাফোর্ডে ঔদ্ধত্য দেখিয়ে ১৩ বসন্ত পার। অনেক অর্জনে ভাসার ১৩ বছর সাকিবের। সব অর্জন একসাথ করা না গেলেও কিছু করার বৃথা চেষ্টা! আফসোস হচ্ছে যে, সামনের ৩৬৫ দিন আপডেট করা হবে না 'সাকিবনামা'

সাকিবের ওয়ানডে রান ৬৩২৩, টেস্ট রান ৩৮৬২, আন্তর্জাতিক টি২০ রান ১৫৬৭। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১১৭৫২ রানের মালিক সাকিব; বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।

টেস্টে উইকেট সংখ্যা ২১০, বাংলাদেশের সর্বোচ্চ। ওয়ানডে ক্রিকেটে উইকেট সংখ্যা ২৬০, দ্বিতীয় অবস্থান বাংলাদেশিদের মধ্যে। টি২০ ক্রিকেটে উইকেট সংখ্যা ৯০, বাংলাদেশের সর্বোচ্চ এবং বিশ্ব ক্রিকেটে তৃতীয়।

টেস্টে সাকিবের অর্ধশতক ২৪, শতক ৫ ও ক্যারিয়ার সেরা ২১৭ রানের ইনিংস। সাকিবের ওয়ানডে ক্রিকেটে অর্ধশতক ৪৭, শতক ৯টি। টি২০ ক্রিকেটে অর্ধশতক ৯টি, ক্যারিয়ার সেরা রান ৮৪।

টেস্টে সাকিব চার উইকেটে নিয়েছে ৮ বার, পাঁচ উইকেট নিয়েছে ১৮ বার, ম্যাচে দশ উইকেট নিয়েছে ২ বার। ওয়ানডে চার উইকেট নিয়েছে ৮ বার, পাঁচ উইকেট ২ বার। আর টি২০ ক্রিকেটে তিনবার চার উইকেট ও একবার নিয়েছে পাঁচ উইকেট।

টেস্টের ২১৭ আমাদের টেস্টের ব্যক্তিগত দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্কোর, ওয়ানডের অপরাজিত ১৩৪ আমাদের চতুর্থ সর্বোচ্চ ওয়ানডে স্কোর। টি২০ ক্রিকেটের ৮৪ আমাদের তৃতীয় সর্বোচ্চ টি২০ স্কোর।

সাকিব টেস্টে ৪৭৫ টি, ওয়ানডে ৫৭৪ ও টি২০ ক্রিকেটে ১৬৩টি চার মেরেছে। ছক্কা মেরেছে ওয়ানডে ক্রিকেটে ৪২টি, টেস্টে ১৯ আর টি২০ তে ৩৩টি।

টেস্ট ক্রিকেটে সবচেয়ে দ্রুততম ৩০০০ রান ও ১৫০ উইকেট নেওয়ার কৃতিত্ব সাকিবের। ক্রিকেট ইতিহাসের ১৩ তম ক্রিকেটার হিসেবে টেস্ট ক্রিকেটে ৩০০০ রান ও ২০০ উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করে সাকিব এবং সবচেয়ে দ্রুততম।

ওয়ানডে ক্রিকেটে সাকিবসহ মাত্র ৫ জন ক্রিকেটারের ৫০০০ রান ও ২০০ উইকেট নেওয়ার কৃতিত্ব রয়েছে। সাকিব করেছে সবচেয়ে দ্রুত; মাত্র ১৭৮ ইনিংসে।

ওয়ানডে ক্রিকেটে দ্রুততম সময়ে ৬০০০ রান ও ২৫০ উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ সাকিবের।

ওয়ানডে ক্রিকেট ইতিহাসে মাত্র চারজন অলরাউন্ডারের ৬০০০ রান, ২৫০ উইকেট ও ৫০ ক্যাচ রয়েছে; এরমধ্যে সাকিব একজন।

নয়টি টেস্ট খেলুড়ে দেশের মধ্যে ৫ উইকেট নেওয়ার অর্জন রয়েছে সাকিবসহ মাত্র ৪ জনের। সাকিবের সব টেস্ট খেলুড়ে দেশের বিপক্ষে ৫ উইকেট নেওয়ার রেকর্ড সবচেয়ে দ্রুততম; মাত্র ৫০ টেস্টে।

সাকিবসহ মাত্র তিনজন ক্রিকেটারের একই টেস্টে সেঞ্চুরি ও ১০ উইকেট নেওয়ার কৃতিত্ব রয়েছে। সাকিবের এক ওয়ানডে ম্যাচে সেঞ্চুরি ও চার উইকেটও রয়েছে। একই টি২০ ম্যাচে রয়েছে পাঁচ উইকেট ও ৪০ এর অধিক রান।

ক্রিকেটের তিন ফরম্যাট মিলিয়ে ১০০০০ রান ও ৪৫০ উইকেটের বেশি নেওয়ার কৃতিত্ব মাত্র তিনজনের। এরমধ্য আমাদের সাকিব একজন।

আন্তর্জাতিক টি২০ ক্রিকেটে ১৫০০ রান আর ৬০ উইকেট নেওয়া একমাত্র অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান।

প্রথম বাঁহাতি বোলার হিসেবে টি২০ ক্রিকেটে ৩০০ উইকেট সাকিবের; ক্রিকেট ইতিহাসের দ্বিতীয় অলরাউন্ডার হিসেবে টি২০ ক্রিকেটে ৪০০০ রান ও ৩০০ উইকেটের মাইলফলক রয়েছে সাকিব আল হাসানের।

ক্রিকেট ইতিহাসের অষ্টম বোলার হিসেবে তিন ফরম্যাটেই পাঁচ উইকেট শিকার করে সাকিব। ক্রিকেট ইতিহাসের প্রথম অলরাউন্ডার হিসেবে আন্তর্জাতিক টি২০ ক্রিকেটে একই ম্যাচে ৪০ এর অধিক রান ও পাঁচ উইকেট নেয় সাকিব। প্রথম অধিনায়ক হিসেবে আন্তর্জাতিক টি২০ ক্রিকেটে পাঁচ উইকেট নেয় সাকিব।

সাকিব একমাত্র ক্রিকেটার যার যেকোনো নির্দিষ্ট ভেন্যুতে ওয়ানডে ক্রিকেটে ২০০০ রান ও ৫০ উইকেট নেওয়ার কৃতিত্ব রয়েছে। সাকিব একমাত্র ক্রিকেটার যার কিনা টেস্ট ক্রিকেটে যেকোনো নির্দিষ্ট ভেন্যুতে ১০০০ রান ও ৫০ উইকেট নেওয়ার কৃতিত্ব রয়েছে। সাকিব ক্রিকেট ইতিহাসের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে এক ভেন্যুতে ৪০০০ আন্তর্জাতিক রান করে। সব রেকর্ড আমাদের হোম অফ ক্রিকেট মিরপুরে।

চতুর্থ বোলার হিসেবে টি২০ ক্রিকেটে ৩৫০ উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ সাকিবের।

আইপিএলে পঞ্চম স্পিনার হিসেবে ৫০ উইকেট প্রাপ্তি, দ্বাদশ ক্রিকেটার হিসেবে আইপিএলে ৫০০ রান ও ৫০ উইকেট নেওয়ার কীর্তি।

৩০০ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা দ্বিতীয় বাংলাদেশি সাকিব; আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ৫০০ উইকেট নেওয়া প্রথম ও একমাত্র বাংলাদেশি সাকিব।

ক্রিকেট বিশ্বকাপে ২৯ ম্যাচের ক্যারিয়ারে ৪৫ গড়ে ১১৪৬ রান। ২টি শতক, ১০ অর্ধশতক; সর্বোচ্চ ১২৪*। চার ১০৭, ছয় ৮টি। ৩৫ গড়ে ৩৪ উইকেট। সেরা ফিগার ৫/২৯। ফিল্ডার সাকিবের ৮ ক্যাচ।

১১৪৬ রান করে সাকিব বিশ্বকাপ ইতিহাসের নবম সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। ৩৪ উইকেট নিয়ে যৌথভাবে ১৬তম সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি। বিশ্বকাপে সাকিবের চেয়ে বেশি উইকেট রয়েছে মাত্র তিনজন স্পিনারের।

২০১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপে সাকিবের ৮ ম্যাচে ৮৬ গড়ে ৬০৬ রান। ২টি শতক, ৫টি অর্ধশতক, ৬০ চার, ২টি ছয়। সর্বোচ্চ ১২৪*। বল হাতে ৩৬ গড়ে ১১ উইকেট সেরা ৫/২৯। ফিল্ডার সাকিবের ৩ ক্যাচ।

সাকিব বিশ্বকাপ ইতিহাসের একমাত্র ক্রিকেটার যার বিশ্বকাপে ১১০০ রান ও ৩০ উইকেট রয়েছে। সাকিবের এই কীর্তিটা অনন্য। সাকিব ছাড়া অন্য কারো ৩০ উইকেটের সাথে ৭০০ রানও নেই। সাকিব যেখানে সবাইকে ছাপিয়ে গিয়েছে।

সাকিব ক্রিকেট ইতিহাসের একমাত্র অলরাউন্ডার যে নির্দিষ্ট এক বিশ্বকাপে ৬০০+ রান ও ১০+ উইকেট নিয়েছে। সাকিব ছাড়া অন্য কারো ৪০০ রান, ১০ উইকেটও নেই।

সাকিব বিশ্বকাপ ইতিহাসের একমাত্র ব্যাটসম্যান যে বিশ্বকাপ ইতিহাসে টানা আট ইনিংসে ৪০+ রানের ইনিংস খেলেছে।

নির্দিষ্ট এক ক্রিকেট বিশ্বকাপে ৬০০+ রান করা তৃতীয় ব্যাটসম্যান সাকিব।

ক্রিকেট বিশ্বকাপে সাকিব পঞ্চাশোর্ধ রানের ইনিংস ১২টি। সাকিবের সামনে শুধু শচীন।

নির্দিষ্ট এক বিশ্বকাপে সর্বাধিক পঞ্চাশোর্ধ ইনিংস খেলেছে সাকিব ৭বার। শচীনও সমান ৭বার, তবে খেলেছে ৩টি ইনিংস বেশি।

প্রথম বাংলাদেশি বোলার হিসেবে বিশ্বকাপে পাঁচ উইকেট শিকার সাকিবের।

যুবরাজ সিংয়ের পর দ্বিতীয় ক্রিকেটার হিসেবে বিশ্বকাপে একই ম্যাচে ৫০ রান ও ৫ উইকেটের কৃতিত্ব সাকিবের।

বিশ্বকাপে দুটি শতক করা ও দুবার চার বা এর অধিক উইকেট নেওয়া একমাত্র ক্রিকেটার সাকিব।

বিশ্বকাপে সর্বাধিকবার একই ম্যাচে ৫০+ রান ও ২+ উইকেট নিয়েছে সাকিব ৪বার, যুবরাজও সমান ৪বার।

ক্রিকেট বিশ্বকাপে সাকিব বল করেছে ১৪৩৩টি; এরমধ্যে ডট দিয়েছে ৬৭৯ বল। বিশ্বকাপ ইতিহাসে সাকিবের চেয়ে বেশি বল ডট দিয়েছে মাত্র দুজন বোলার।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১১০০০ রান ও ৫০০ উইকেট পাওয়া দ্বিতীয় ক্রিকেটার সাকিব।

পরিসংখ্যানের পাল্লায় একজন সাকিবকে না মাপাই শ্রেয়। সাকিব মানে সাকিবই। যে নামটাই মহাকাব্য, রুপকথা। প্রিয় সাকিব, আপনাকে লাল সবুজের জার্সিতে দেখার অপেক্ষায় থাকলাম। (সংগৃহীত)


সর্বশেষ সংবাদ