শিক্ষকতায় শুরু হয়েছিল ঢাবি ছাত্র কাদেরের কর্মজীবন

জনপ্রিয় অভিনেতা আবদুল কাদের
জনপ্রিয় অভিনেতা আবদুল কাদের  © সংগৃহীত

হাজারো ভক্ত ও অনুরাগীকে কাঁদিয়ে অবশেষে না ফেরার দেশে চলে গেলেন জনপ্রিয় অভিনেতা আবদুল কাদের। আজ শনিবার (২৬ ডিসেম্বর) সকাল ৮টা ২০ মিনিটের দিকে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন তিনি। (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৯ বছর। আবদুল কাদেরের পুত্রবধূ জাহিদা ইসলাম গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। 

ক্যান্সারে আক্রান্ত আবদুল কাদের গত সপ্তাহেই আর ছয়টা মাস বাঁচার ইচ্ছার কথা জানিয়েছিলেন, চিকিৎসকেরাও চেষ্টা করছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত সব চেষ্টাই ব্যর্থ হয়ে গেল। চিকিৎসার জন্য ভারতের চেন্নাইয়েও নেওয়া হয় তাঁকে। সেখানে গত ১৫ ডিসেম্বর তাঁর ক্যান্সার ধরা পড়ে। শারীরিক দুর্বলতার কারণে তাঁকে কেমোথেরাপিও দেওয়া হয়নি। গত রোববার তাকে ঢাকায় আনা হলে পরদিন তাঁর শরীরে করোনা শনাক্ত হয়।

পরিবারের সদস্যরা জানান, গত বৃহস্পতিবার রাত ১১টা পর্যন্ত তাঁরা হাসপাতালেই ছিলেন, পরে বাসায় ফিরে যান। এক ঘণ্টা পর হাসপাতাল থেকে ফোন পেয়ে সেখানে পৌঁছালে চিকিৎসকরা জানান, তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে, নড়াচড়া করছেন না। রাত ১২টার দিকে তাঁকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। সেখানেই আজ সকালে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তিনি। । তিনি স্ত্রী এবং এক ছেলে ও মেয়ে রেখে গেছেন।

১৯৫১ সালে মুন্সিগঞ্জের টঙ্গিবাড়ীর সোনারং গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন অভিনেতা আবদুল কাদের। পিতা আবদুল জলিল ও মাতা আনোয়ারা খাতুন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতি বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর করেন। পরে সিঙ্গাইর কলেজ ও লৌহজং কলেজে কর্মজীবনের শুরু করেন। একটি সংস্থায় এক্সিকিউটিভ হিসেবে চাকরির পর ‘বাটা’তে ছিলেন ৩৫ বছর।

স্কুলজীবন থেকেই অভিনয় শুরু করেন তিনি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ডাকঘর’ নাটকে অভিনয়ের মাধ্যমে তাঁর এই মাধ্যমে যাত্রা শুরু। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মহসিন হল ছাত্র সংসদে ১৯৭২ থেকে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত তিন বছর নাট্য সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ১৯৭২ সালে আন্তঃহল নাট্য প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন মহসিন হলের নাটক ‘জন্ডিস ও বিবিধ বেলুন’-এ অভিনয় করে পুরস্কার পেয়েছিলেন।

বিটিভি প্রযোজিত ‘বলুন দেখি’-তে চ্যাম্পিয়ন দলের সদস্য হিসেবে পুরস্কার পান। ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত ডাকসু নাট্যচক্রের কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্যও ছিলেন। এছাড়া ১৯৭৩ সাল থেকে থিয়েটার নাট্যগোষ্ঠীর সদস্য ও চার বছর যুগ্ম সম্পাদকের এবং ছয় বছর সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। আর ১৯৭২ সালে টেলিভিশন ও ১৯৭৩ সালে রেডিও নাটকে অভিনয় শুরু করেন তিনি।

টেলিভিশনে তাঁর অভিনীত প্রথম ধারাবাহিক নাটক ‘এসো গল্পের দেশে’। তিনি বিটিভির নাট্যশিল্পী ও নাট্যকারদের সংগঠন টেলিভিশন নাট্যশিল্পী ও নাট্যকার সংসদের (টেনাশিনাস) সহ-সভাপতি ছিলেন। জনপ্রিয় অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’রও নিয়মিত শিল্পী ছিলেন। এছাড়া থিয়েটারে দেশে-বিদেশে প্রায় ৩০টি প্রযোজনার এক হাজারের বেশি প্রদর্শনীতে তিনি অভিনয় করেছেন। আর টেলিভিশনে দুই হাজারের বেশি নাটকে অভিনয় করেছেন। অভিনয়ের পাশাপাশি বিজ্ঞাপনেও কাজ করেছেন জনপ্রিয় এ অভিনেতা।


সর্বশেষ সংবাদ