মাভাবিপ্রবিতে বহিরাগতদের অবাধ বিচরণ, নিরাপত্তা ঝুঁকিতে শিক্ষার্থীরা

মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (মাভাবিপ্রবি)।
মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (মাভাবিপ্রবি)।  © সংগৃহীত

মহামারি করোনার কারণে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (মাভাবিপ্রবি) বন্ধের সময় বহিরাগতদের আড্ডা খানায় পরিণত হয়। ক্যাম্পাস খোলার পরেও বহিরাগতদের উৎপাত ও অবাধ বিচরণ দেখা যাচ্ছে। এছাড়া বহিরাগত এবং ক্যাম্পাসের আশপাশের কলেজ থেকে আসা একাধিক পক্ষের মধ্যে ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরেই মারামারির ঘটনাও ঘটছে। অনেকসময় ইভটিজিং এর স্বীকার হচ্ছে নারী শিক্ষার্থীরা। গেট পাশ না থাকায় উচ্চ গতিতে বাইক নিয়ে ক্যাম্পাসে বিচরণ করছে বহিরাগতরা।

এই নিরাপত্তা ঝুঁকির শেষ পরিনতির শিকার হয়েছেন মাভাবিপ্রবির একজন শিক্ষার্থী। গত বৃহস্পতিবার দুপুর আনুমানিক ২টার দিকে এক বহিরাগতের বাইকে দুর্ঘটনার শিকার হন মাভাবিপ্রবির টেক্সটাইল বিভাগের শিক্ষার্থী ডিএম মারুফ। গুরুতরভাবে জখম হওয়ায় পরে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। দুর্ঘটনা গুরুতর হওয়ায় অপারেশন করতে হবে বলে ডাক্তার জানিয়েছে।

আরও পড়ুন: গণপরিবহনে নারীরা সবচেয়ে বেশি যৌন হয়রানির শিকার

এমন নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণে উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় দিন পার করছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ক্যাম্পাসে নিরাপত্তার প্রসঙ্গে মাভাবিপ্রবির রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী জিয়াউর রহমান বলেন, 'আমাদের ক্যাম্পাসে বহিরাগত বাইকার, উচ্ছৃঙ্খল ছেলেদের জন্য প্রতিদিনই কোনো না কোনো হয়রানি এবং দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। সেক্ষেত্রে আমার দাবি ক্যাম্পাসে বাইক বা অন্যান্য যানবাহন প্রবেশ এর ক্ষেত্রে বিশেষ অনুমতি সাপেক্ষে নিরাপত্তা প্রহরীদের কাছে লিখিত আবেদন জমা দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হোক এবং শিক্ষার্থীদের বাইক চালানোর ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব আইডি কার্ড বা কোনো লোগো সম্বলিত কার্ড রাখার ব্যবস্থা করা হোক যেটা গেট পাশ হিসেবে কাজ করবে। এক্ষেত্রে বহিরাগতরা বাইক নিয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে পারবে না এবং দুর্ঘটনাও কম হবে।' 

অর্থনীতি বিভাগের একজন শিক্ষার্থী এ বিষয়ে তার কথা বলতে গিয়ে জানান, আমাদের ইউনিভার্সিটি কি আসলেই স্বায়িত্বশাসিত? সম্প্রতি ক্যাফেটেরিয়া থেকে খাওয়া শেষ করে আমরা তিন বন্ধু হলের দিকে চলে আসতে থাকি সেই সময় মাল্টিপার্পাস ভবনের দিক থেকে ২ টা বাইক আনুমানিক প্রতি ঘণ্টায় ৯০ কিলোমিটারের অধিক গতিতে প্রতিযোগিতা করতে করতে আসতেছিল। আমি তাদের ইশারা করে ধীরে যেতে বললাম কিন্তু কে শোনে কার কথা। বাইকের গতি এত ছিল যে কোনো ছাত্রের সাথে এক্সিডেন্টে হলে স্পট ডেথ হবে। কিছুক্ষণ পরে হলের এই দিক থেকে বাইক ঘুরিয়ে আবার একই রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় আমার দিকে তাকিয়ে এমন আচরণ করল যেন আমাকে মারবে। তাহলে এই ভার্সিটিতে আমাদের নিরাপত্তা কোথায়? আদৌ কি এর থেকে পরিত্রাণের কোন উপায় আছে ?'

এছাড়াও শিক্ষার্থীরা বলছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিচরণের জায়গাগুলো প্রায়শই বহিরাগতদের দখলে থাকে।' নিজ থেকে কিছু বললে তারা মারমুখী আচরণ করে। এর বাইরেও সন্ধ্যার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের রাস্তার অনেক অংশে আলোক সল্পতার কারণে যে কোনো দূর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা।

আরও পড়ুন: সংসদ টিভিতে মাধ্যমিকের ক্লাস রুটিন ১০ মার্চ পর্যন্ত

শুধু শিক্ষার্থীরা নয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও বিশ্ববিদ্যালয়ে চলাচলে নিরাপত্তা ঝুঁকিতে রয়েছেন বলে জানা গেছে।

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর প্রফেসর ড. মীর মো. মোজাম্মেল হক বলেন, 'আমরা চেষ্টা করছি বহিরাগতদের ঝামেলা এড়াতে, সেইসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।'

যে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটার পর তাৎক্ষণিক ব্যাবস্থা নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে স্থায়ীভাবে নিরাপত্তা নিশ্চিতে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে প্রক্টর বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান রয়েছে যা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে নয়। সেসকল প্রতিষ্ঠানকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে জায়গা দিলেও তারা যাচ্ছে না এবং এসকল প্রতিষ্ঠান থাকার কারণে বহিরাগতদের অবাধ বিচরণ বন্ধ করাও সম্ভব হচ্ছে না। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে অবস্থিত কলেজটির জন্য বিকল্প রাস্তা তৈরির জন্য আলোচনা চলছে।

এছাড়া সরেজমিনে দেখা যায় বিকল্প পথ না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের কিছু গ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাস্তা ব্যবহার করে চলাচল করতে দেখা যায়। এতে বিশ্ববিদ্যালয় গেটের নিরাপত্তাপ্রহরীরা আশপাশের লোকজন বা বহিরাগতদের প্রবেশে বাধা দিলেও একপ্রকার হুমকি ও জোর দেখিয়ে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে চলাফেরা করছে।


সর্বশেষ সংবাদ