হামলায় ছাত্রলীগের উসকানি
‘যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপরে হামলা করুন’
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৮:০১ PM , আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৮:৩৪ PM
ধর্ষণের প্রতিবাদ করতে গিয়ে ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগ, জেলা প্রশাসন ও পুলিশের প্রত্যক্ষ মদদে সন্ত্রাসী বাহিনী হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
এর প্রমাণ মিলেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও মেসেঞ্জারে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা ও এলাকাবাসীকে উসকানি দেওয়া কয়েকটি ভিডিও থেকে।
ভিডিওতে দেখা যায়, গোপালগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আতাউর রহমান পিয়াল মাইকে বলছেন, ‘আমরা চলে যাচ্ছি। যারা ছাত্রলীগ করেন তারা আমাদের সঙ্গে যাবেন, যারা করেন না তারা থাকেন, আন্দোলন চালায়ে যান। যারা জামায়াত-শিবির করেন তারা আন্দোলন চালান।’
এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া আরো কয়েকটি ভিডিওতে দেখা যায়, রাস্তার পাশে এক ডোবা থেকে এক শিক্ষার্থীকে টেনে তুলে আনছেন কয়েকজন। এলাকাবাসীর ধাওয়া খেয়ে পালানোর সময় তাকে মারধর করে ডোবায় ফেলে দেওয়া হয়।
আরেকটি ভিডিওতে মসজিদের মাইকে ঘোষণা দেওয়া হচ্ছে, ‘ঘোনাপাড়ায় ভার্সিটির পোলাপান ভাঙচুর করেছে। অতএব যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপরে হামলা করুন।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর আড়াইটায় জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অবরোধস্থল ঘোনাপাড়ায় আসেন। সেসময় জেলা ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগ আমাদের দাবি-দাওয়ার সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে। বিকেল সাড়ে চারটায় হঠাৎ করে কয়েকজন ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগের নেতা কর্মী আমাদের আন্দোলন বন্ধ করতে বলেন। তারা তখন আমাদের ছাত্রীদেরও হুমকি দেন। এর কিছুক্ষণ পরেই অতর্কিত হামলা শুরু হয়।
‘এ সময় পাশেই প্রশাসনসহ অসংখ্য পুলিশ থাকলেও তারা নীরবে দাঁড়িয়ে ছিলেন। হামলাকারীরা তাদের সামনেই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, প্রক্টরসহ অন্তত ২০ জন শিক্ষক-শিক্ষার্থীকে আহত করেন।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বলেন, ছাত্রলীগের উসকানির পরেই একদল সন্ত্রাসী বাহিনী বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র, রড ও লাঠিসোঁটা নিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়।
তবে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নিউটন মোল্লা হামলার সঙ্গে সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করে বলেন, ‘জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের সঙ্গে ছাত্রলীগের কয়েকজন কর্মী ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন এবং তাদের সঙ্গে চলে আসেন। হামলার সঙ্গে ছাত্রলীগ এবং আওয়ামী লীগ কোনোভাবেই জড়িত ছিল না।’
হামলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. একিউএম মাহবুব মাথায় আঘাত পেয়েছেন, প্রক্টর ড. মো. রাজিউর রহমানসহ একাধিক শিক্ষক ও কয়েকশত শিক্ষার্থী হামলার শিকার হয়ে দিগ্বিদিক দৌড়ে পালিয়েছেন। এর মধ্যে অনেক শিক্ষার্থীকে রাস্তায় ফেলে বেধড়ক পেটানো হয়।
এ দিন দুপুর ১টার দিকে সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মুক্ত আলোচনায় বসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. একিউএম মাহবুব, প্রক্টর ড. মো. রাজিউর রহমান, শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. মো. কামরুজ্জামান, সহকারী প্রক্টর সাদ্দাম হোসেনসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ।
আলোচনা শেষে প্রক্টর ড. মো. রাজিউর রহমান বলেন, ‘ধর্ষণের ঘটনায় ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজন আসামিকে আটক করা হয়েছে। দ্রুতই সকল আসামির পরিচয় মিডিয়ায় প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন। এ ছাড়া হামলার ঘটনায় হামলাকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. একিউএম মাহবুব বলেন, ‘এই ঘটনার বিচার অবশ্যই নিশ্চিত করা হবে এবং বিচার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।’
এ বিষয়ে জানার জন্য পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের প্রতিবাদে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তারা জানিয়েছেন, অভিযুক্তদের আটক করে নাম-পরিচয় প্রকাশ না করা পর্যন্ত এ আন্দোলন চলবে।
শুক্রবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন তারা।
প্রসঙ্গত, বুধবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) রাতে গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞানমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। ধর্ষণের বিচার চাওয়াতে গতকাল বৃহস্পতিবার আমাদের ওপরে যে নৃশংস হামলা হয়েছে তার যথাযথ বিচার করতে হবে। এর আগে আমরা আন্দোলন বন্ধ করব না। ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) এক ছাত্রী (২২) দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন। ধর্ষণের সঙ্গে জড়িতদের আটকের দাবিতে শিক্ষার্থীরা রাতে গোপালগঞ্জ সদর থানা ঘেরাও করেন এবং দিনভর ঘোনাপাড়ায় ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন। এ সময় একদল সন্ত্রাসী বাহিনী প্রতিবাদরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীর ওপরে হামলা চালিয়ে উপাচার্য, প্রক্টরসহ কমপক্ষে ২০ জনকে আহত করে।